×

সাহিত্য

সংস্কৃতি অঙ্গনে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরিত হলো কালজয়ী ৭ই মার্চ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২১, ০৯:৪১ পিএম

সংস্কৃতি অঙ্গনে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরিত হলো কালজয়ী ৭ই মার্চ

রোববার জাতীয় জাদুঘরে ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি নিদর্শন, শিল্পকর্ম প্রদর্শনী দেখছেন শিল্পানুরাগীরা। ছবি: ভোরের কাগজ

বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী কবিতা ৭ই মার্চের ভাষণ প্রচার, কথামালা, নৃত্যালেখ্য, গান, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, নাটক মঞ্চায়নসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধায় ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ দিবসটি উদযাপন করল সাংস্কৃতিক অঙ্গন। জাতীয় এই দিবসটি উপলক্ষে রবিবার (৭ই মার্চ) সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার ফুলে ভালোবাসার অর্ঘ্য নিবেদন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং সচিব মো. বদরুল আরেফীন।

শিল্পকলা একাডেমিতে কাব্য-নৃত্যালেখ্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সন্ধ্যায় একাডেমি প্রাঙ্গণ ৭ই মার্চের ভাষণ শিল্পচত্বরে আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই একাডেমির শিশু সঙ্গীত দলের দুইশত পঞ্চাশ জন শিল্পী পরিবেশন করে জাতীয় সংগীত এবং ধন্য মুজিব ধন্য দুটি সমবেত সংগীত। এর পরে লিয়াকত আলী লাকীর গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় দুইশত জন শিল্পীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় কাব্য-নৃত্যালেখ্য ‘মুক্তির মহাআখ্যান’।

এতে নৃত্য পরিচালনা করেছেন শামীম আরা নীপা, অমিত চৌধুরী, মেহরাজ হক তুষার, সাইফুল ইসলাম ইভান, আরিফুল ইসলাম অর্ণব এবং মাশরুর রহমান।

বাংলা একাডেমিতে একক বক্তৃতানুষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের বার্ষিকী উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ: পটভূমি ও তাৎপর্য’ শীর্ষক একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একক বক্তৃতা প্রদান করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য আরমা দত্ত এবং কথাসাহিত্যিক ঝর্না রহমান।

একক বক্তা লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক বলেন, বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণের নেপথ্যে রয়েছে এক সংগ্রামী ও ঐতিহাসিক পটভূমি। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও শাসকচক্রের বাঙালি-বিনাশী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার শাণিত ছিল- ৭ই মার্চের ভাষণ। সম্পূর্ণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সেদিন বাঙালিকে সম্মুখ-সমর ও গেরিলাযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছেন।

তিনি বলেন, এই ভাষণ স্বাধীনতা অর্জনের উপায় এবং স্বাধীনতা সংহতকরণের নিদের্শনাও বটে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটি নির্দেশে রক্তাক্ত জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের নাম ৭ই মার্চ।

শামসুজ্জামান খান বলেন, ৭ই মার্চের মতো এমন দিন কোনো জাতির জীবনে সচরাচর আসে না। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মতো এমন ভাষণও অন্য কারও পক্ষে দেয়া সম্ভব ছিল না। কারণ তিনি ছিলেন বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে স্বাধীনতার প্রথম সার্থক রূপকার। এ বছর মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মতো আমরা ৭ই মার্চের ভাষণেরও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি- এ আমাদের পরম অহঙ্কার ও গৌরবের বিষয়।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য-অসাধারণ ভাষণ। বঙ্গবন্ধু যে পরিস্থিতির মধ্যে এই ভাষণ দিয়েছেন সেটি বিবেচনায় পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ভাষণ দ্বিতীয়টি নেই। এই মহান ভাষণ কেবল মানবিক আবেদনের জন্য নয়, শৈল্পিক কারণেও উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু কেবল একটি স্বাধীন জাতির স্বপ্ন উল্লেখ করেই থেমে যাননি; তিনি সেই স্বাধীনতা অর্জনের সমস্ত উপায়ও বলে দিয়েছেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. শাহাদাৎ হোসেন।

জাতীয় জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ প্রদর্শনী জাতীয় জাদুঘরে ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি নিদর্শন, শিল্পকর্ম এবং দুর্লভ আলোকচিত্রের বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। সকালে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে এর প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভগের কীপার নূরে নাসরীন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জনশিক্ষা বিভাগের কীপার ড. শিহাব শাহরিয়ার। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগের উপকীপার দিবাকর সিকদার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা বিভাগের উপ-কীপার এ.কে.এম.সাইফুজ্জামান, ডিসপ্লে অফিসার নাছির উদ্দিন আহমেদ খান, সহকারী কীপার মো. আব্দুল মুহিতসহ জাদুঘরের সর্বস্তরের কর্মকর্তারা।

খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত ভাষণ বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রেরণা যুগিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা এক সূত্রে গ্রথিত। ৭ মার্চ এলে আমরা আমাদের ইতিহাসের স্মরণীয় অধ্যায়ে পদার্পণ করি। আমাদের উন্নয়ন ও দেশ গঠনে এই ভাষণের তাৎপর্য অপরিসীম। এ প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি নিদর্শন, শিল্পকর্ম, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্মৃতি নিদর্শন, মুক্তিযুদ্ধকালীন পুস্তিকা, ফোল্ডার ও সংবাদপত্র এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত দুর্লভ আলোকচিত্রসমূহ। এছাড়াও প্রদশর্নীতে উপস্থাপন করা হয়েছে বধ্যভূমির একটি ডিওরমা।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে আলোচনা সভা বাংলাদেশ শিশু একাডেমির আয়োজনে শিশু একাডেমির মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রাম চন্দ্র দাস। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক জ্যোতি লাল কুরী।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ সমগ্র জাতিকে উজ্জীবিত করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। ১০ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে সেদিন জনসভার স্থান ছিল মুখরিত। সেখানে অসংখ্য নারীও উপস্থিত ছিলেন। ঐতিহাসিক এই ভাষণটি আজীবন বিশ্বের কোটি কোটি মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ের শিশুরা অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে। আলোচনা শেষে প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App