×

পুরনো খবর

নারী দিবসের প্রয়োজন আছে কি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২১, ১২:৪১ এএম

নারী দিবসের প্রয়োজন আছে কি

বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে নারীদের জন্য একটা বিশেষ দিন আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা, তাদের কাজের প্রশংসা এবং ভালোবাসা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে নারীদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সাফল্য অর্জনের উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে শোবিজ অঙ্গনের নারীরা কী ভাবছেন? তা নিয়ে মেলার আজকের আয়োজন। লিখেছেন শাকিল মাহমুদ

প্রতিটা দিনেই নারীরা গুরুত্বপূর্ণ রোকেয়া প্রাচী, অভিনেত্রী নারী দিবসে সারা বিশ্বের নারীরা মনে করিয়ে দেয় নারী কতটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা দিনই নারীরা গুরুত্বপূর্ণ। তবে নারীর জন্য একটি বিশেষ দিন থাকা এবং সে দিনকে কেন্দ্র করে নারী নিজেকে, নিজের কাজকে সমাজের কাছে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতেই মূলত নারী দিবস। আমি মনে করি নারী ও পুরুষের সমঝোতার মধ্য দিয়ে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বকে আরো সুন্দর করতে হবে। পুরুষরা কখনোই আমাদের বিপক্ষের শক্তি নয়। একজন নারীর জয় মানেই একজন পুরুষের জয়। আবার একজন নারীর পরাজয়ও একজন পুরুষের পরাজয়। স্ত্রীকে বলা হয় স্বামীর অর্ধাঙ্গ। অর্থাৎ নারী পুরুষের অর্ধেক। এছাড়া কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, পৃথিবীর যা কল্যাণকর তার অর্ধেক পুরুষ আর অর্ধেক নারী করেছেন। সুতরাং নারীকে অবহেলা করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আজকের দিনে আমি বলতে চাই, নারীদের নিজ থেকে জাগ্রত হতে হবে। নারীর জাগরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার ইচ্ছের মাধ্যমে। সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে নারীরা প্রত্যেক মাধ্যমে আরো বেশি ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা করছি। একই সঙ্গে পুরুষরাও নারীদের দিকে সহযোগিতা ও ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে আমার প্রত্যাশা।

নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে চয়নিকা চৌধুরী, নির্মাতা আজকের দিনে এসে যখন প্রশ্ন উঠছে নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা! তখন আমি জোর দিয়ে বলছি, নারী দিবসের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে। নারী দিবসের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য আজকের দিনে এসে ঠিকভাবে পূরণ হয়েছে কিনা সেটা মুখ্য নয়। বরং আমাদের সমাজে নারীকে প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছে কিনা সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের দেশে দেখা যায়, পরিবারের নারীরা সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কাজ করতে থাকে। ঠিকমতো খাবারটাও খেতে পারে না। কিন্তু তাদের এ পরিশ্রমের কোনো আর্থিক মূল্য নেই বলে তারা ঠিকঠাক সম্মান পায় না! তবে প্রতিটা গৃহিণী তার পরিবারে যা কাজ করে তা আর্থিক মূল্যে বিচার করলে অনেক পুরুষের চেয়েই বেশি হতো। সে ক্ষেত্রে নারী কি তার প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছে? যেহেতু পাচ্ছে না সেহেতু নারী দিবসের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কোনো নারী তার এগিয়ে গেলে কিছু কিছু পুরুষ ঈর্ষান্বিত হন, সে নারীকে টেনে ধরেন। শুধু যে কিছু কিছু পুরুষ এটা করেন তা নয়। অনেক নারীই নারীদের এগিয়ে যাওয়া মেনে নিতে পারেন না। ফলে এই যে নারীদের পারিবারিকভাবে বঞ্চিত করা, সামাজিকভাবে দাবিয়ে রাখা সব কিছু থেকে মুক্তির জন্য একটি পরিপূর্ণ শিক্ষা জরুরি। সেটি নিশ্চিত করতে নারী দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং আজকের দিনে নারী দিবসের গুরুত্ব আছে কি নেই তা আমাদের সমাজ বাস্তবতার চিত্র দেখলে সহজেই অনুমেয়।

প্রত্যেক দিনই নারীকে সচেতন হতে হবে বিজরী বরকতউল্লাহ, অভিনেত্রী নারী দিবস বিশেষ কোনো রঙের পোশাক পরে ঘুরে বেড়ানো এবং উপহার আদান-প্রদানের জন্য নয়। এটি নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার দিন বলেই মনে করি। প্রত্যেক দিনই নারীকে সচেতন হতে হবে। দেখতে হবে সে তার নিজের অধিকারগুলো ঠিকমতো পাচ্ছে কি না। আর এই চর্চাটা শুরু হবে একেবারে ঘর থেকে। সম্মান করতে হবে মা, বোন, ভাবী, শাশুড়সহ ঘরের সব নারীকে। তখনই নারী দিবসের আসল তাৎপর্য আসবে। নারীদের নিজ উদ্যোগে দেখিয়ে দিতে হবে তারা কী করতে পারেন। পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের প্রথমে অনেক কিছুই করার জন্য সমর্থন দেয়া হয় না। প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় নারীর কাছের মানুষরা। কিন্তু সাহস ও আন্তরিকতার মধ্য দিয়ে এই প্রতিবন্ধকতা নারীদেরই দূর করতে হবে। একজন নারী যখন তার প্রাপ্যটুকু বুঝে নিতে চায় তখন এ সমাজ ব্যবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু নারী তো খারাপ কিছু করছে না। কাউকে খুন করছে না, চুরি-ছিনতাই করছে না, তাহলে কেন বাধা? আমার কাছে মনে হয় একজন নারী এগিয়ে গেলে, কোনো কাজে নারী নেতৃত্ব থাকলে পুরুষরা অপমানবোধ করেন, ইগোর সমস্যায় ভোগেন। যার ফলে নগ্নভাবে নারীর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু দেশের উন্নতির কথা চিন্তা করলে, নারী-পুরুষ সবাইকেই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সুতরাং নারী দিবস কী বলছে, কী চাইছে তা আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে জানাতে হলে, নারীর প্রতিবন্ধক পথকে মসৃণ করতে নারী দিবসের গুরুত্ব অপরিহার্য।

পুরুষকে নারীর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে ন্যানসি, সংগীতশিল্পী আমাদের সমাজ ব্যসস্থা পিতৃতান্ত্রিক হলেও মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চলে। অর্থ আয় করে দিয়েই বাবা তার দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। কিন্তু মা, তিনি পরিবারের সব বিষয় নিয়ে চিন্তা করেন। বাবার দেয়া মাস শেষের টাকা দিয়ে গোটা মাস কীভাবে চলবে, তা কিন্তু মা-ই চিন্তা করেন। কোন সন্তানের কী প্রয়োজন, টিউশন ফি থেকে শুরু করে, শ^শুর-শাশুড়ির ওষুধÑ সব কিছু কিন্তু মাকেই দেখতে হয়। নারীরা আমাদের সমাজে অবহেলিত এই কথার সম্পূর্ণ বিরোধী আমি। নারীরা যদি সমাজে অবহেলিত হতো তবে আমি আজ গায়িকা ন্যানসি হতে পারতাম না। আমাদের দেশের দুটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হচ্ছেন নারী। দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে নারীরা প্রতিষ্ঠিত। তাহলে আমাদের সমাজে নারীরা অবহেলায় ভোগে কীভাবে? আজকের দিনে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। বাধা একেবারেই পাচ্ছে না তা কিন্তু নয়। কিন্তু যেখানে পাচ্ছে সেখানে পরিপূর্ণ শিক্ষায় অভাব রয়েছে বলেই বাধা আসছে। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক শিক্ষার। সেই শিক্ষা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই। একজন মুক্তমনা, শিক্ষিত, রুচিশীল, সংগ্রামী, আদর্শ মা-ই পারেন তার কন্যাকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। পুরুষকেও এজন্য সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।

পুরুষই নারীর এগিয়ে চলার সাহস সাবিলা নূর, অভিনেত্রী নারী দিবস পালন করতে কোনো উপলক্ষ বা বিশেষ দিনের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। যেমন দেখুন আমাদের মায়েরা এ বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে কিন্তু সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রান্নাঘরে ব্যস্ত থাকেন না। আমাদের বোনরা কিন্তু তাদের ছোট ভাইবোনকে একটা গিফট কিনে দেয়ার জন্য শুধু কোনো বিশেষ দিনেই পাবলিক বাসে চড়ে টিউশনি করতে যায় না। তাই আমার কাছে মনে হয় প্রতিটা দিনই নারী দিবস। এর জন্য আলাদা কোনো দিবসের প্রয়োজন নেই। আর একটা বিশেষ ধন্যবাদ সেসব পুরুষকে যারা তাদের জীবনসঙ্গীকে প্রতিদিন ভালো কিছু করতে উৎসাহ দেন। আসলে আমাদের পাশের মানুষগুলো বিশেষ করে বাবা, ভাই, বন্ধুরা, প্রেমিক/স্বামী এরা এগিয়ে এলে, কাজে উৎসাহ দিলে নারীরা মানসিকভাবে নিজেদের এগিয়ে নেয়ার লড়াইটা শুরু করতে পারে। ফলে এই বিশেষ মানুষগুলোকে বলব, আপনারা আপনাদের পরিবারের কন্যাকে, বোনকে, প্রেমিকা/স্ত্রীকে সাহস দেন। দেখবেন নারীরা আর পিছিয়ে পড়বে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App