×

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে স্বৈরশাসনের অবসান করে ঘরে ফেরার শপথ তরুণদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২১, ১২:৩২ পিএম

মিয়ানমারে স্বৈরশাসনের অবসান করে ঘরে ফেরার শপথ তরুণদের

মিয়ানমারের ঐতিহ্যবাহী পোশাক সারং পরে বিক্ষোভ করেছেন তরুণরা

মিয়ানমারে স্বৈরশাসনের অবসান করে ঘরে ফেরার শপথ তরুণদের

ইয়াঙ্গনজুড়ে শুধু টিয়ার গ্যাসের গন্ধ। ছবি: বিবিসি

মিয়ানমারে সুচি সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় সামরিক জান্তা। বেশ কয়েকদিন ধরে সামরিক জান্তার নৃশংসতায় বিক্ষোভকারীরা ক্রোধে ফুঁসে উঠলেও এখন পর্যন্ত তাদের বেশিরভাগ বিক্ষোভই ছিল শান্তিপূর্ণ। ছাত্র, বৌদ্ধ ভিক্ষু, নারী, চাকরিজীবী এমনকি কিছু পুলিশ কর্মকর্তা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। স্বৈরশাসনের অবসান করে তবেই ঘরে ফেরার শপথ এসব তরুণদের। বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব চিত্র।

কেউ কেউ শুধু তালি বাজিয়ে গান গাইছেন। কেউবা বহুতল ভবনগুলোর সামনে দিয়ে সারং পরে ঘোরাফেরা করছেন। সারং হল মিয়ানমারের প্রচলিত পোশাক যাকে বার্মিজ ভাষায় 'থামি' বলা হয়। মিয়ানমারের মানুষ বিশ্বাস করে, সৈন্যরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং তারা সারং ভয় পায়, সেনারা মনে করে এটি তাদের শক্তি এবং আধ্যাত্মিক বলকে দুর্বল করে দিতে পারে।

অনেককে বিনামূল্যে খাবার বা প্রতিরক্ষামূলক যন্ত্রপাতি বিতরণ করতে দেখা গেছে। সবার চাওয়া একটাই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে সামরিক একনায়কতন্ত্রকে উৎখাত করা। একই সাথে তারা একে অপরকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সেইসঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে। যারা বাড়িতে থাকেন, তারা রাতের বেলা থালাবাসন বাজিয়ে প্রতিবাদ করছেন। ঐতিহ্যগতভাবে দেশটির মানুষ বিশ্বাস করে যে এভাবে মন্দকে এড়ানো যায়। সামরিক বাহিনীর সহিংস অবস্থানের মুখেও সাধারণ মানুষ তাদের আন্দোলনের চেতনা জিইয়ে রাখতে রাতের বেলা তাদের বারান্দা থেকে কিংবা বসার ঘর থেকে গণতন্ত্রপন্থী স্লোগান দিচ্ছেন।

অনেক জায়গায় সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে নানা গানের সুর ভেসে আসে। এর আগে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই গানগুলো লেখা হয়েছিল। "কাবার মা কেয়ায় বু" যার অর্থ "শেষ অবধি আমরা ভুলব না" কিংবা "থোয়ে থিসার" যার মানে "রক্ত শপথ" এসব কথা ভেসে আসছিল। আন্দোলনকে ঘিরে তরুণ প্রজন্ম নতুন করে গান রচনা করেছেন। এরমধ্যে একটি হল "রিজেক্ট দ্য ক্যু" বা অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান কর।

ওই গানটির একটি লাইনে শপথ করা হয়, "আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।"

[caption id="attachment_269256" align="alignnone" width="800"] ইয়াঙ্গনজুড়ে শুধু টিয়ার গ্যাসের গন্ধ। ছবি: বিবিসি[/caption]

রাস্তায় বের হওয়া বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, তাই কিছু মানুষের জন্য ক্ষোভ বা দুঃখ প্রকাশের একমাত্র জায়গা হয়ে উঠেছে তাদের নিজ বাড়ি। বিক্ষোভে নিহতদের স্মরণে কেউ কেউ মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা করছেন। নিহতদের তারা "ফলেন হিরোস" বলে সম্বোধন করছেন।

তরুণরা বেশ বুদ্ধি করে রাস্তায় স্লোগান লিখছেন যা আজকাল কেবল ইয়াঙ্গনে নয়, বরং সারা দেশের বড় বড় শহরগুলোয় অবধারিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। "সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান করুন" বা "আমরা গণতন্ত্র চাই"। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে এসব স্লোগান মুছে ফেলছে পুলিশ। পরের দিন আবার অন্য কোনো রাস্তায় একই কথা লিখছেন এই তরুণরা।

সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর বর্বর আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের থেকে আরও শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দাবি করেছেন। তারা এখন আগের চাইতেও হতাশ হয়ে পড়েছেন। কারণ জাতিসংঘ বা দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক সংস্থা আসিয়ান এই সামরিক সরকারের বর্বর আচরণ আটকাতে পারেনি। এই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন ঘোষণা, বিবৃতি কিংবা নিষেধাজ্ঞা যথেষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।

সাম্প্রতিক বিক্ষোভগুলোতে আন্তর্জাতিক মহলকে নিয়ে বেশ কিছু স্লোগান চোখে পড়ে। অনেকগুলো প্ল্যাকার্ডে "জাতিসংঘের পদক্ষেপ নিতে আর কয়টি মৃতদেহের প্রয়োজন?" এমন লিখে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন, দেশের ভবিষ্যৎ তরুণদের ওপর বিশেষ করে চলমান অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাজপথের বিক্ষোভ এবং নাগরিক আন্দোলনের উপর নির্ভর করছে।

এক তরুণের ভাষ্য, "আমাদের যুগেই সামরিক একনায়কতন্ত্রের পতন ঘটাকে হবে।" তিনি তার হেলমেটে রক্তের গ্রুপ এবং তার আত্মীয়ের একটি যোগাযোগ নম্বর লিখে রেখেছেন। জেনারেশন জেড, যারা এই আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে, তারা সামরিক শাসনের এই তিক্ত অভিজ্ঞতার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে।

সহিংসতা ও হামলার এই দুঃস্বপ্ন হয়তো এতো সহজে যাবে না। কারণ, মিয়ানমার কখনই তার সামরিক জান্তার প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি। তাই এ আন্দোলনকে সফল করাটা সহজভাবে দেখছেন না বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে তরুণ প্রজন্ম এই সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তাদের যে দৃঢ়তা ও সংকল্প দেখিয়ে যাচ্ছে, তা প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App