×

সাময়িকী

দায়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২১, ১২:০৭ এএম

দায়
রনি রেজা ‘দৈন্য মানুষের স্বকীয়তা ধ্বংস করে’। নতুবা আমার মতো সব ক্ষেত্রে ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া স্বপ্নবাজ, স্বাধীনচেতা ছেলের এই পরিণতি হবে কেন? ইচ্ছের বিরুদ্ধে করতে হয় সব। কী সব তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে পার করছি একেকটা দিন! পুরনো দালানের পলেস্তারার মতো নিত্যদিন খসে পড়ছে আমার স্বপ্নগুলো। ঊর্ধ্বমুখী ছুটে চলা মানুষদের পায়ে দলিত হয়ে গুঁড়া হয়ে যাচ্ছে সব। গুঁড়া গুঁড়ো সে স্বপ্নগুলো ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলোয় ধূসর দেখায়। যেন প্যাকেটভর্তি হতাশাগুঁড়া। হতাশাই এখন আমার নিত্য সঙ্গী এবং তা ক্রমেই বেড়ে চলছে। কোথাও এতটুকু আশার আলো অবশিষ্ট নেই। একদিনের ঘটনার ভয়াবহতা ছাড়িয়ে যায় আগের দিনকে। যেন অসুখী ঘোড়াদের দৌড় প্রতিযোগিতার নিরাপদ মাঠ আমার জীবন। অথচ প্রথম দিকে আমি যখন রাজি হচ্ছিলাম না, রাহুল আমাকে কত ইতিবাচকভাবে বুঝিয়েছিল ব্যাপারটা। ‘আরে ব্যাটা ইন্দ্রিয় সুখ পাবি আবার টাকাও কামাবি; মন্দ কী? আমাদেরও তো বেশ্যাজীবন। আজ এর মনোরঞ্জনে ব্যস্ত তো কাল ওর। যৌনকর্মীরা বিছানা গরম করে টাকা কামায়, আমরা যারা বেসরকারি জব করি তারা বসের অ্যাকাউন্ট গরম করে কামাই। দুপক্ষেরই কর্তার দিলখোশ করে টাকা উপার্জন করতে হয়।’ কী সব যুক্তিরে বাবা! টিকল কোথায় সেসব যুক্তি? যৌনকর্র্মী তো যৌনকর্মীই। হোক সে নারী কি পুরুষ। এর আগে জিগোলোবৃত্তি সম্পর্কে আমার মোটেও ধারণা ছিল না। হুট করেই এক ছুটির রাতে মুভি দেখতে দেখতে প্রসঙ্গটি পাড়ল রাহুল। প্রথমে ভেবেছিলাম মজা করছে। এ হয় নাকি? পুরুষকে টাকা দিয়ে ভাড়া করে শরীরী সুখ খোঁজার নারী আছে নাকি এ দেশে? থাকলে পশ্চিমা বিশে^ থাকতে পারে। আমাদের দেশে এসব করবে কারা? সঙ্গে সঙ্গেই মুভি দেখা বাদ রেখে নেট ঘেঁটে ঘেঁটে বিস্তারিত দেখালো। বোঝালো। আমি যতই দুষ্টুমিতে উড়িয়ে দিচ্ছিলাম, রাহুল ততই সিরিয়াস ভঙ্গিতে বোঝাতে শুরু করল। শেষে আমিও বুঝলাম। না বুঝেই বা উপায় কী? দীর্ঘদিন চাকরির পেছনে ছুটে যখন ক্লান্ত আমি। জোরালো কোনো তদবির ছাড়া ভালো চাকরি তো অত সহজ নয়। অতদিনে বুঝে গেছিÑ প্রভাবশালী আত্মীয়, নগদ টাকা, উঁচুদের তৈল মর্দন করার ক্ষমতা; কোনোটিই আমার নেই। যা চাকরি পাওয়ার মূল হাতিয়ার। রাহুলও ততদিনে খানিক বিরক্ত। একটা জীবন্ত লাশ কতদিন আর বয়ে বেড়াবে? হোক ছেলেবেলার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। নিজের কাছে রেখেছে, খাওয়াচ্ছে। চা-সিগারেটের টাকাও দিচ্ছে। একটা কর্ম জুটিয়ে দিতে কম চেষ্টা করেনি। প্রথম দিকে দু-একটা সুযোগ পেলেও ইচ্ছে করেই জয়েন করিনি। স্বপ্নের কাছে টেকেনি সেগুলো। গ্রাম থেকে যতেœ আনা স্বপ্নগুলো তখনো তাজা ছিল। পরিবার ও আশপাশের মানুষের প্রত্যাশার ঝুলি তখন জ¦ালানি হিসেবে কাজ করতো। যেন গতি বাড়িয়ে দেয় প্রতিনিয়ত। ভালো রেজাল্ট যেহেতু আছে ভালো কিছুই হবে। ছেলেবেলা থেকেই সবার মুখে শুনে এসেছি ভালোমতো পড়াশোনা করলে বড় হলে সুখের অভাব হবে না। সেই অজানা সুখের আশায় একটুও ফাঁকি দেইনি পড়ালেখায়। পড়তাম কিন্ডার গার্টেনে। তখন গ্রামে কিন্ডার গার্ডেন অতটা বিস্তৃত না। এক গ্রামের দু-একজন হয়তো পড়ে সেখানে। বাকিরা প্রাইমারিতে। অর্থাৎ আমি যখন আধঘুম চোখে স্কুলে যাই তখন সমবয়সি ছেলেরা যায় মক্তবে কিংবা খেলার মাঠে। যখন আমি স্কুল থেকে ফিরি তখন সমবয়সিরা যায় স্কুলে। স্বাভাবিকভাবেই তেমন কোনো বন্ধু ছিল না আমার। সময় কাটত বাড়ির ভেতর আর স্কুলে। সমবয়সিদের দুরন্তপনা, উল্লাস, দুষ্টুমি; কিছুতেই পাওয়া যায় না আমাকে। ভদ্র ছেলে যাকে বলে আরকি। বিনিময়ে যা পেলাম তার নাম প্রশংসা। বড় হলে বিরাট কিছু করবো এমন প্রত্যাশা। সে জায়গাটা ঠিক রেখেছি। ম্যাট্রিক, আইয়েতে স্টার মার্কস অর্জন করেছি। বিএ, এমএতে ফার্স্ট ক্লাস। প্রতি পরীক্ষার ফলই গ্রামের মানুষকে উল্লসিত করেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে প্রত্যাশা। এত মানুষের চাওয়া নিশ্চয় বিফলে যাবে যাবে না। ভালো কিছু একটু দেরিতেই আসে। করি আরেকটু অপেক্ষা।Ñ এমন সব ভাবনায় উড়িয়ে দিয়েছি প্রথমদিককার পাওয়া ছোট ছোট সুযোগগুলো। এখন তেমন কিছুও পাচ্ছি না। চাকরির বাজার দিনকে দিন খারাপই হচ্ছে। গ্রামে ফিরে যাওয়ার সৎ সাহসও নেই। লোকে কী বলবে! এত লেখাপড়া করে গ্রামের বাজারে দোকানদারি করলে বাপ-দাদার ইজ্জত রক্ষা হবে না। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, গ্রামবাসী; সবারই কত প্রত্যাশা আমাকে ঘিরে। সেই আমি বাড়িতে ফিরে যাব এত সহজে? কৃষি কাজও তো করতে পারব না। স্বপ্নের বাড়িতে দালান তুলতে হবে। পুঁইশাকের চাষ কি সেখানে মানায়! যা-ই করি, ঢাকায় থাকতে হবে। তাই দু-তিন দিন ভেবে রাজি হয়ে গেলাম। তাৎক্ষণিক ফেসবুকে একটি ফেইক আইডি খুলে দিল রাহুল নিজেই। সার্চ করে করে নিজেই এমন কয়েকটা গ্রæপে অ্যাড রিকোয়েস্ট পাঠালো। সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে ও শর্ত মেনে হয়ে গেলাম ওখানকার সদস্য। জেনে নিলাম বেশ কিছু নিয়মও। শুরু হলো আমার জিগোলো জীবন। বদলে গেল পরিচয়, চলন-বলন, দৈনন্দিন রুটিন। আসলে বদলে গেলাম পুরোটা আমিই। অনীহা নিয়ে জিগোলো জীবন শুরু করলেও কিছুটা উৎসাহী ভাবও ছিল ভেতরে ভেতরে। নারীস্পর্শ তখনো উপভোগ করিনি। ছেলেবেলায় টুম্পা, মালতি, পুকুলিদের স্নানকালে কৃষ্ণ হয়ে গাছে চড়তাম মাঝে-মধ্যে! এরপর থেকে নিদ্রাহীন রাত্রিগুলোতে চোখটা বন্ধ করেই কল্পনায় কাছে টেনে নিতাম ওদের যে কাউকে। এভাবেই যৌনসুখ নেয়ার অভিজ্ঞতা। শহরে এসে প্রযুক্তির কল্যাণে যৌনজ্ঞান চর্চা কিছু সহজ হয়েছে। আয়ত্ত হয়েছে নানা পন্থা। ওসব পন্থাতেই তাড়নার রাতগুলোয় শিরার ভেতরকার দাপাদাপি দমন করেছি এতকাল। অইটুকুই। বাস্তবে আর কাউকে ছুঁয়ে দেখা হয়নি। পড়াশোনার ক্ষতি হবে কারণে কোনোদিন একটি প্রেমও করা হয়নি। পড়াশোনা শেষ হলেই ভালো চাকরি জুটবে নিশ্চিত। বিসিএস ক্যাডার হতে না পারলেও সরকারি ভালো কোনো চাকরি জুটে যাবে অনায়াসে। তা-ও না হলে ভালো ভালো কোম্পানি বা বিদেশি এনজিওর মোটা বেতনের চাকরি তো পড়েই আছে। একটা কিছু হলেই বিয়েটা করে ফেলবে। এ সমাজে সুন্দরীদের জন্মই হয় প্রতিষ্ঠিত ছেলেদের ঘর আলোকিত করতে। তাই সঙ্গীর পেছনে না ছুটে ছুটেছি ক্যারিয়ারের পেছনে। কিন্তু ভাগ্য দেবতা যদি হয় প্রতিপক্ষ তবে সব চেষ্টাই বিফলে যায়, কেবল কল্পনায় আসা নারীগুলোর সুখদান চলে নিয়মিত। ওখানে তো কারো কোনো হাত নেই। নিজের ইচ্ছেমাফিক কল্পনায় হাজির করতাম যাকে খুশি তাকে। চোখ বন্ধ করে মুহূর্তেই ডুবে যেতাম রঙ্গলীলায়। প্রযুক্তির কল্যাণে নারীদেহের সব অলিগলিই পরিচিত। ফলে প্রকৃত সুখই যেন আদায় করে ছাড়তাম। হয়তো এ কারণেই একটা ধারণা স্পষ্ট ছিল যেÑ কোনো নারীকে বাস্তবে পেলে আমার চেয়ে সুখী করতে পারবে কোন পুরুষ! উৎসাহটা সঙ্গী হয়েছিল এই অন্ধকার জীবন-যাত্রায়। আমার কোনো ভাবনারই যে বাস্তব হয়ে ফোটার যোগ্যতা নেই সেটা প্রমাণ হলো জিগোলো জীবনের প্রথম রাতেই। গলায় লাল মাফলার বেঁধে, ঠোঁটে হাল্কা লিপিস্টিক, চুলে জেল, শরীরে কড়া গন্ধের পারফিউম মেখে, চাকচিক্য পোশাকের আবরণে নিজেকে বন্দি করে দুরুদুরু বুকে গুলশান রোডের মুখে গিয়ে দাঁড়ালাম। নীরবতা ভেঙে কিছুক্ষণ বাদে একেকটা গাড়ি এসে আবার চলে যায় দ্রæত। রাতের রাস্তা যেন কঁকিয়ে ওঠে প্রসূতি নারীর মতো। সে আওয়াজ আমার বুকে গিয়ে বিঁধে। অথবা বুকের ধুকপুকুনি সঙ্গে রঙ্গলীলায় মাততে চায় জিগোলোদেরই মতো। যদিও গ্রæপের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছে এমন দু-তিনজনকে পেয়েছিলাম। বুকের কাঁপুনি কিছুটা কমেছিল খানিকক্ষণের জন্য। তবু অচেনা ভয় কিংবা সংকোচ পিছু ছাড়ছিল না কিছুতেই। এর ভেতর দিয়েই একে একে সবাই ভাড়ায় চলে যাচ্ছে। দামি দামি গাড়িতে এসে নিয়ে যাচ্ছে। অথবা ফোন পেয়ে কেউ কেউ সিএনজি ভাড়া করে নির্ধারিত লোকেশনে চলে যাচ্ছে। সবই পুরনো কাস্টমার। আমার কাছে কেউ ভিড়ছে না। এক সময় প্রায় একা হয়ে গেলাম। বিক্ষিপ্ত পায়চারি করছি এদিন-সেদিক। এমন সময় একটি লাল রঙের টয়োটা করোলা এসে থামল ঠিক আমার সামনে। লাস্যময়ী এক নারী গাড়ির গøাস খুলেই ইশারায় ডাকল। সিøভলেস বøাউজ আর জর্জেট শাড়ি পরা। ঠোঁটে গাঢ় লিপিস্টিক, কড়া সাজ আর রূপের ঝলকানিতে বয়স লুকিয়ে ফেলেছে এরই মধ্যে। তামিল নায়িকাদের মতোই সিøম বডি। চোখের চাহনি। সব মিলে যে কোনো পুরুষেরই আগ্রহ বাড়বে। সম্ভবত এ পথে নতুন হওয়ায় খানিকটা ঘাবড়ে গেলাম আমি। কিছুটা সঙ্কোচ নিয়েই এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। বিনা বাক্যব্যয়ে দরজা খুলে ইশারা করলো গাড়িকে উঠতে। সুবোধ বালকের ন্যায় আমিও কিছু না বলেই উঠে পড়লাম। কিছুটা জড়োসড়ো হয়েই বসলাম তার পাশের সিটে। তার অট্ট হাসি আরো সঙ্কুচিত করে দিল আমাকে। একটা ঘোরের মধ্যেই ঘটছিল সব। বাসায় পৌঁছে জিজ্ঞেস করল আমার এ পথে আসার কারণ। কী বলেছিলাম কিছু মনে নেই। তবে আমার তোতলানো দেখে তিনি জোরে জোরে হেসেছিলেন ওইটুকু মনে আছে। মসজিদের ইমামের বর্ণনা অনুযায়ী জান্নাতি হুরদেরই এভাবে হাসার কথা। যেখানে হুর আছে সেখানে শরাব থাকারও কথা। ঠিকই মদ বের করে খেতে শুরু করল সে। আমাকেও খাওয়ালো জোর করে। এরপর কী হয়েছে কিছু মনে নেই। পিটিয়ে আমাকে আধমরা করেছিল। আমি নাকি কিছুই পারিনি। গ্রæপের একটি ছেলের কাছে অভিযোগ করেছে। এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমাকে দমায়নি। বরং জিদ চেপে বসেছিল। যে করেই হোক এই সেক্টরেই ভালো করতে হবে আমাকে। পুরনোদের পরামর্শে জিম করতে শুরু করলাম। ওষুধ-পথ্য খাওয়ার পাশাপাশি কিছু প্রাকৃতিক খাবারও বাড়িয়ে দিলাম। তবু কাজের কাজ কিছুই হলো না। প্রতিদিনই কাস্টমারদের বকা-ঝকা না হয় মার খেয়ে ফিরতে হয়। কেউ কেউ আবার গালাগাল পাড়তে পাড়তে দয়াপরবশত বিলটা দিয়ে দেয়। ওই লোভেই মূলত যাওয়া। উত্তরণের চেষ্টাও চলছে। সিনিয়রদের পরামর্শ নিয়েছি। ওষুধ পাল্টে পাল্টে খেয়েছি সব প্রকারেরই। শেষে এক প্রকারের বাধ্য হয়েই যৌন বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হই। তিনি সব শুনে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানালেন, প্রথম রাতের তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলে এমন হয়। তবু কেউ কেউ কটু কথা শোনাতে ছাড়ত না। নতুন কারো বাসায় যেতেও অনীহা হতো। কেউ ডাকলেও যেতাম না। কিন্তু ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে আনন্দ পেতাম। অনেক সুন্দরী সুন্দরী নারীর আহŸান প্রত্যাখ্যান করি। নিজের অক্ষমতা তো কেউ জানবে না! ফিরে যাওয়া নারীরা নিশ্চয় আমাকে নিয়ে খুব ভাববে। অনেক সামর্থ্যবান পুরুষ হিসেবেই জানবে আমাকে; আর এতেই আমার সুখ। মিথ্যা সান্ত¡নায় রাত ফুরিয়ে শেষে সেই হতাশাগুঁড়া নিয়েই বাসায় ফিরতে হয়। এভাবে যখন চলছিল ঠিক সেই সময়ে একজনের আহŸান আমি উপেক্ষা করতে গিয়ে আটকে যাই। সিএনজিতে এসে খানিক দূরে নামে নারীটি। হেঁটে এসে থেমে যায় ঠিক আমার সামনে। আমি ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি ভেতরে ভেতরে। কিন্তু তার চোখের চাহনি আমাকে আটকে দিল। কিছু বলার আগেই আমি সিএনজি ডেকে উঠে বসি। নারীটিও বাসার ঠিকানা চিনিয়ে নিয়ে যায়। প্রথম নারীর মতোই জানতে চায় আমার জিগোলো জীবনের গল্প। স্বরে কিছুটা গাম্ভীর্য এনে বলিÑ ‘এসব জেনে আপনার কাজ নেই। বিছানায় চলুন। দ্রæত কাজ শেষ করে আমার ফিরতে হবে।’ আমার এমন রূঢ়তায় সম্ভবত তিনি আহত হন। তিনিও গম্ভীর হয়ে যান। বেডরুম দেখিয়ে যেতে বলেন। আমি বেডরুমে ঢোকামাত্রই একটি উটকো গন্ধ নাকে আঘাত করে। যেন নাড়িভুঁড়ি সব উগড়ে আসতে চায়। লক্ষ্য করি একটি প্রতিবন্ধী যুবতী মেয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছে এক কোনায়। মুখ দিয়ে লালা ঝরছে অনবরত। চোখ উল্টে দেখে নিল আমাকে। এরপর খিলখিলিয়ে হাসিতে অসহ্য করে তুলল পুরো ঘর। আমি এক ঝটকায় বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। মেজাজটা কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করে বললামÑ ওই কক্ষে তো আপনার প্রতিবন্ধী মেয়ে। অন্য কোনো বেডে চলুন। তিনি আগের তুলনায় আরো গম্ভীর স্বরে জানালেন ওই প্রতিবন্ধী মেয়েটির জন্যই আমাকে ভাড়া করা। বললেনÑ ‘আমার নারী সত্তার চেয়ে মাতৃসত্তা বড়। আমার যেমন শরীরী ক্ষুধা আছে, আমার মেয়েরও আছে। ও সুস্থ-স্বাভাবিক হলে এতদিনে নিশ্চয় বিয়ে দিতে পারতাম। বা নিজের পছন্দে পার্টনার খুঁজে নিত। কিন্তু এখন তো সম্ভব নয়। তবু তো ওর শরীরী ক্ষুধা আছে। সেটাও পূরণ করা আমার দায়িত্ব। আপনাকে এজন্যই এনেছি। আমার এতটুকুই অভাব। এতটুকু দৈন্যের কারণেই আপনার দারস্থ হওয়া। অস্বস্তি লাগলে আপনার সম্মানী নিয়ে চলে যেতে পারেন। জোর করবো না। তবে অনুরোধ করবো...।’আমি তো চলে যেতেই মনে মনে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু কী ঘোরে কে জানে, পা বাড়িয়ে ঢুকে পড়লাম ওই মেয়েটির কক্ষে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App