ভারতের শতাধিক মাদ্রাসায় গীতা, বেদ বা রামায়ণের মতো হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির আওতায় দেশটি এ ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান ও পরম্পরা' নামে নতুন একটি বিষয় চালু করে তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্রদের এগুলো পড়ানো হবে।

এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, দেশের এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে মাদ্রাসাগুলোতেও ছড়িয়ে দেওয়াতে কোনো ভুল নেই, বরং এতে সব ভারতীয়ই লাভবান হবেন।

এই পদক্ষেপে দেশের শিক্ষাবিদরা ও মাদ্রাসার শিক্ষকরাও এর আসল উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বশাসিত সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওপেন স্কুলিং বা এনআইওএস দেশের নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাস্তবায়ন করছে।

এনআইওএস সম্প্রতি 'ভারতীয় জ্ঞান পরম্পরা' নামে ১৫টি কোর্স বা শিক্ষাক্রম তৈরি করেছে- যার আওতায় বেদ, ইয়োগা, রামায়ণ, ভাগবত গীতা, সংস্কৃত ভাষা, পাণিণির গাণিতিক সূত্র ইত্যাদি নানা বিষয় রয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল বলেন, আমাদের বেদ-পুরাণ-উপনিষদ যে সংস্কৃতির শিক্ষা আমাদের দিয়েছে, তা অমূল্য। এই সুফলকে আমরা মাদ্রাসাগুলোতে, এমন কী দেশের বাইরেও ভারতীয়দের কাছে ছড়িয়ে দিতে চাই। ফলে এনআইওএসের এই পদক্ষেপকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।

দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক অমরিন্দর আনসারি বলেন, প্রথমত মাদ্রাসাগুলো কিন্তু সংগঠিত শিক্ষা খাতের ভেতরে পড়ে না। সেখানে একটা বহুত্ববাদী সংস্কৃতির দেশে এরকম কিছু চালু করতে গেলে সেটা কিন্তু জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হিসেবেই দেখা হবে। মাদ্রাসাগুলোর স্বশাসনেরই বা কী হবে?

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় নেতা সুরেন্দ্র জৈন বলেন, গীতা-রামায়ণ-বেদকে আসলে শুধু হিন্দু ধর্মগ্রন্থ হিসেবে দেখাটাই ভুল। এগুলোকে শুধু হিন্দুদের বলে চিহ্নিত করাটা দুর্ভাগ্যজনক - কারণ এই গ্রন্থগুলো বিশ্বজনীন মানবতার কথা বলে। আমরা মনে করি, এই গ্রন্থগুলো যে মূল্যবোধের শিক্ষা দেওয় তা পড়ানোটা ভারতে বসবাসকারী প্রত্যেকের জন্য বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের নাজবুল হক হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আলাউদ্দিন ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, এই সব গ্রন্থে আপত্তিকর কিছু নেই। আমার কথা হল হিন্দু ধর্মে তো খারাপ কিছু নেই। কেউ যদি সেরকম বলে- তাহলে সেটা তার ভুল ধারণা। অনেকে হয়তো ধর্মের ব্যাখ্যাকে খারাপভাবে ব্যবহার করছে, কিন্তু ধর্মগ্রন্থে খারাপ কিছু আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। মাদ্রাসায় কিন্তু আমরা শাস্ত্রশিক্ষা দিই না, পড়াশুনো করাই। যেমন আরবি পড়ানো হয় একটা ভাষা হিসেবে, এখানে ধর্মের কোনও ব্যাপার নেই। এমন কী কেউ চাইলে আরবি নিতেও পারে, কেউ আবার না-ও নিতে পারে। এটা ছাত্রদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।

কোনো ছাত্রকে বাধ্য করা হবেনা জানিয়ে এনআইওএস বলেছে, মাদ্রাসার কোনো ছাত্রকেই জোর করে কোনো বিষয় নিতে বাধ্য করা হবে না। উন্মুক্ত শিক্ষা পদ্ধতিতে তাদেরও অধিকার থাকবে তারা বেদ-গীতা-পাণিণির সূত্র পড়বে কি-না, সেটা বেছে নেওয়ার।