সিরিয়ায় একদশক গৃহযুদ্ধের সময় আটক হওয়া লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা। এছাড়া আরও কয়েক হাজার মানুষ নির্যাতনের শিকার ও নিরাপত্তা হেফাজতে থাকার সময়েই মারা গেছেন বলে জানানো হয়।

দেশটির গৃহযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে নতুন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখন "ন্যাশনাল ট্রমা"য় পরিণত হয়েছে বলেও ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। প্রায় ২ হাজার ৬৫০ সাক্ষ্য আর আটকের পর একশটির বেশি ঘটনার উপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনের সিরিয়া বিষয়ক এই তদন্ত রিপোর্টটি প্রণয়ন করে।

ভিকটিম ও ঘটনাগুলোর অনেক প্রত্যক্ষদর্শী পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন 'কল্পনাতীত দুর্ভোগ' হিসেবে, যার মধ্যে ছিল মাত্র ১১ বছর বয়সী ছেলে ও মেয়েদের ধর্ষণের মতো ঘটনাও। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে যে, আটক অবস্থায় কত মানুষ মারা গেছে তার কোনো হিসেব নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে লাখো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে সরকারি হেফাজতেই।

কমিশনের চেয়ারম্যান পাওলো পিনহেইরো বলেন, সরকারি বাহিনী একতরফাভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের আটক করেছে যে এই সংঘাতের মূল উৎস।  সশস্ত্র গ্রুপগুলো এবং জাতিসংঘ কর্তৃক চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো (হায়াৎ তাহরির আল শাম ও ইসলামিক স্টেট গ্রুপ) এরপর মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া ও একই ধরণের জঘন্য ঘটনা ঘটাতে শুরু করে।

তিনি আরও বলন, পরিবারের লাখ লাখ সদস্যের জানার অধিকার আছে যে, তাদের প্রিয়জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে। এটি একটি ন্যাশনাল ট্রমা যার দিকে সব পক্ষ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরিভাবে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। সরকারি কারাগারগুলোতে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, যে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য অন্তত বিশটি উপায়ে সেখানে নির্যাতন করা হতো। এর মধ্যে ছিলো ইলেকট্রিক শক দেয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে দেয়া, নখ ও দাঁত উপড়ে ফেলা এবং দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখা।

হোমস ও দামেস্কে সামরিক হেফাজতে নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হওয়া এক নারী বলেন, আমি ডায়াপার ছাড়া থাকতে পারি না। পুরো শরীরে মারাত্মক ব্যথা। আমার আসলে আর কোনো আশাই নেই। জীবনটা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে।

২০১১ সালে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয় সেটিই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনও চলছে। এক দশকের এক সংঘাতে কমপক্ষে তিন লাখ আশি হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে সিরিয়ার অন্তত ষাট লাখ মানুষ।

জাতিসংঘের এই কমিশন সব দেশকে অপরাধের জন্য জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছে এবং গত সপ্তাহে জার্মানির একটি আদালতের রায়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যেখানে সিরিয়ার একজন সাবেক কর্মকর্তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছেন।