×

জাতীয়

অনিয়মে প্রশ্নবিদ্ধ পৌরভোট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২১, ০৮:২৭ এএম

শেষ হলো স্থানীয় সরকারের অন্যতম স্তম্ভ পৌরসভাগুলোর নির্বাচন। দেশের মোট ৩২৮টি পৌরসভার করোনা মহামারির মধ্যে ৫ ধাপে মোট ২২৯টিতে নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১৮৭ জন মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। আর অন্যতম প্রধান দল বিএনপি মাত্র ১২টিতে বিজয়ী হয়েছে। মোট প্রাপ্ত ভোটের ৬৪ শতাংশ আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা পেলেও মাত্র ১২-১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে বিএনপির অধিকাংশ প্রার্থীর জামানত হারিয়েছেন। তবে এ নির্বাচনে ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে প্রায় ১০-১২ শতাংশ কম ভোট পড়ায় তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

তাছাড়া বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টি (জাপা) নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গতানুগতি নমনীয় আচরণ, ভোটকেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দিয়ে জোর করে নৌকা মার্কায় সিল মারা, ইভিএমে সূক্ষ্ম কারচুপি, প্রতিপক্ষ ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একচোখা আচরণ, নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও মৃত্যু, ভোটে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক না থাকাসহ পেশিশক্তি ব্যবহার ও টাকা ছড়ানোর অভিযোগ করেছেন। এসব অনিয়মের কারণে তৃণমূলের এ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, কমিশন শক্ত হাতে তাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা প্রায় ভেঙে পড়েছে।

সারাদেশে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ ধাপের পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৮৭টিতে বিজয়ী হয়েছে। বিএনপির মাত্র ১২ জন, স্বতন্ত্র ২৮ জন, জাতীয় পার্টির ১ জন ও জাসদের (ইনু) ১ জন মেয়র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এবার আওয়ামী লীগের ৩ জন নারী প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন। এ নির্বাচনে গড়ে ৬০-৬৭ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে ইসি। তবে ২২৯টি পৌরসভার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ পৌরসভায় ইভিএম এবং বাকি ৪০ শতাংশ পৌরসভায় ব্যালটে ভোট নেয়া হয়। ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ১০-১২ শতাংশের মতো ভোট কম পড়ায় ব্যালটে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অধিকাংশ মেয়র প্রার্থীর জামানাত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।

পাঁচ বছর আগে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২০১৬ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কয়েক ধাপে ২৩৫টি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়রপদে আওয়ামী লীগ ১৮২টি, বিএনপি ২৪টি, জাতীয় পার্টি ১টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৮টি পৌরসভা দখল করেন। ওই নির্বাচনে ভোট পড়ার হার ছিল ৭০ দশমিক ৯২ শতাংশ।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে ইভিএমের চেয়ে ব্যালটে ভোট বেশি পড়েছে। এটি হতে পারে ভোটারদের যন্ত্রের প্রতি ভীতি বা বোঝে না এমন। তাছাড়া আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট দিতে ব্যর্থও হয়েছেন কোনো কোনো ভোটার। অন্যদিকে চিরাচরিত ব্যালটে ভোট দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন ভোটারা। তিনি বলেন, আমি নিজেও পৌরসভা নির্বাচনের সব কটি ধাপের ফলাফল পর্যালোচনা করেছি। ইভিএমে ভোট পড়ার হার কম কেন, তা নিয়ে একটি গবেষণা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এ নিয়ে কমিশন বিশ্লেষণ করবে বলেও জানান এ কমিশনার।

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ূন কবীর খন্দকারের মতে, দুজনের মৃত্যু দুঃখজনক হলেও নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে অনিয়মের জন্য ভোট স্থগিত করা হয়েছে, তবে সার্বিকভাবে ভোট নিরপক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ছিল বলেও জানান তিনি।

অপর দিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, ইসিকে তার সাংবিধানিক ক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার বা প্রয়োগ করতে হবে। এটা দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইসির নির্দেশ ঠিকমতো মানছে না এমন অভিযোগ রয়েছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক থাকছে না। ইভিএমে ভোট কম পড়ার কারণে হিসেবে তিনি বলেন, ইভিএমে ভোট কারচুপির সুযোগ কম। তার চেয়ে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ফেলা অনেক সহজ। সেটি অনেক নির্বাচনে হয়েছে ইতোপূর্বে। তবে ইভিএমে ভোট পড়ার হার কম কেন, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইসির বের করা উচিত।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পৌরভোট নিরপেক্ষ না হওয়ার অভিযোগ তুলে সরকার ও ইসির ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ কারণে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।

অপরদিকে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, বিএনপির হারের অন্যতম কারণ দেশে বিএনপি আছে তা জনগণ জানেই না। যে দলটি দেশের কোনো উন্নয়ন করেনি। যে দল চলে ল-ন থেকে, যারা মনোনয়ন বাণিজ্য করে, তাদের জনগণ কেন বিশ্বাস করবে? বিএনপিকে শুধু মিডিয়াই বাঁচিয়ে রেখেছে। বাস্তবে মাঠে বা রাজনীতিতে বিএনপির অস্তিত্ব দেখা যায় না। তাছাড়া কোন বিএনপিকে ভোটাররা ভোট দেবে খালেদা জিয়ার বিএনপি, তারেকের বিএনপি, নাকি ফখরুলের বিএনপি? এ বিভ্রান্তির মধ্যে দলটিকে আর জনগণ পছন্দ করে না।

এদিকে ৫ ধাপের নির্বাচনে প্রায় সব ধাপেই বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে সহিংসতায় ২ জন এবং ভোট দিতে গিয়ে বুথে হার্ট অ্যাটাক করে আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ৫ শতাধিক প্রার্থী ও সমর্থক। ভোটের মাঝ পথে অর্ধেকের বেশি পৌরসভায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীদের ভোট বর্জন বা ভোট বয়কটের একটা নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছে।

শেষ হওয়া পৌর নির্বাচনে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে নওগাঁর ধামাইয়ের হাটে (ব্যালটে) ৯২ দশমিক ১৪ শতাংশ; ইভিএমে সর্বোচ্চ রাজশাহীর কাকনহাটে ৮৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর কম ভোট পড়েছে (ব্যালটে) মৌলভী বাজারে ৪১ দশমিক ৮৭ শতাংশ; আর ইভিএমে সাভার পৌরসভায় ৩৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। গড় ভোটের হার ৬০-৬৭ শতাংশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App