×

মুক্তচিন্তা

বাঙালির স্বাধীনতার মাস

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২১, ১২:২১ এএম

বাঙালির স্বাধীনতার মাস
বাঙালির জাতীয়  জীবনে  দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রাম, শোষণ-বঞ্চনা  আর ত্যাগ-তিতিক্ষার সুদীর্ঘ পথ ধরেই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও লাখ লাখ সাধারণ মানুষ ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করে। দেশের সব মুক্তিকামী মানুষ অংশ নিয়েছিল মহান এ যুদ্ধে। মুক্তি সংগ্রামে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন দেশের অগণিত কবি, লেখক, গায়ক, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। অনেকে লেখালেখি করে, গান গেয়ে বা নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ করে যুদ্ধের অর্থের জোগান দেন। বন্দিশিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেন দেশের বহু চিকিৎসক, নার্স। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের উন্মত্তার শিকার হন দেশের অগণিত মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী সাধারণ মানুষ। ওরা জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বাংলার লাখ লাখ ঘরবাড়ি, হাটবাজার। লুটপাট করে বাংলার মানুষের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল। নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করে। ওদের  নৃশংসতা থেকে রক্ষা পায়নি দেশের নারী, শিশুরাও। প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা দিতে শত চেষ্টা সত্তে¡ও সেখানে দেখা দেয় মানবিক বিপর্যয়। শরণার্থী শিবিরে প্রায় ৩ লাখ শিশু অপুষ্টিতে মারা যায়। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হন। খুন, ধর্ষণের শিকার হন দেশের ২ লক্ষাধিক নারী। ১৬  ডিসেম্বর বিজয় লাভের দিন পর্যন্ত চলে এ হত্যাযজ্ঞ। ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওদের দোসরদের সহযোগিতায়  চালায় এ দেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস অভিযান। বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে ওরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, শিল্পীসহ সর্বস্তরের বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করে মিরপুর ও রায়ের বাজার বধ্যভ‚মিতে ফেলে রাখে। গ্রাম-বাংলার নদনদী, খাল-বিলে ভাসতে থাকে অগণিত লাশ। শিয়াল, কুকুর, শকুন ছিঁড়ে খায় বাংলার অগণিত মানুষের গলিত দেহ। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হত্যাযজ্ঞ দেখে সারা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয় কেঁপে ওঠে। খোদ নিউইয়র্কের রেডিসন স্কোয়ারে মার্কিন পপ তারকা জর্জ হ্যারিসন ও ভারতীয় সুরসম্রাট রবিশঙ্কর কনসার্ট করে তহবিল সংগ্রহ করেন। পৃথিবীর বন্ধুপ্রতিম দেশ থেকে আসে সাহায্য-সহযোগিতা। মুক্তিযুদ্ধ বেগবান হয়। ভারতের মিত্রবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বাত্মক সাহায্য করে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও প্রায় ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। আসে চ‚ড়ান্ত বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পায় স্বাধীন, সার্বভৌম এক দেশ, বাংলাদেশ। স্বাধীনতা লাভের পর মাত্র চার বছরের মধ্যে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তারপর চার জাতীয় নেতাকেও নির্মমভাবে কারাগারে গুলি করে মারা হয়। বিশ্ব রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণের অন্যতম। বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনকের ওই ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিল জাতীয় ঐক্যের মূল চালিকাশক্তি, যার আবেদন আজো এতটুকু মøান হয়নি। এ গর্বকে বুকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে নতুন প্রজন্মের সামনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার গৌরবগাথা তুলে ধরতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সন্নিবেশিত করে বিস্তৃতভাবে তাদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। বর্তমানে শিশু-কিশোরদের পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টি কিছুটা তুলে ধরা হয়েছে, যা যথেষ্ট নয়। উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষায় বৃহত্তর কলেবরে গবেষণাভিত্তিক প্রবন্ধ সংযোজিত হওয়া জরুরি। শিশু-কিশোরদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে তৈরি চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা নিতে হবে। যে মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ দেশের লাখো মুক্তিকামী মানুষ একাত্তরে বিজয় পতাকা ছিনিয়ে এনেছিল, তাকে সফল করে তুলতে হলে নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখাতে হবে। ভুলিয়ে দিতে হবে সব দ্বিধা, সংশয় ও ভেদাভেদ। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে, দিতে হবে যথাযথ সম্মান।  মুক্তিযোদ্ধাদের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার দায়িত্ব তুলে দিতে হবে নতুন প্রজন্মের হাতে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ। ওদের সৎ ও আত্মত্যাগের মানসিকতায় গড়ে তুলতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও সম্ভ্রম হারানো ২ লাখ মা-বোনের অশ্রæভেজা পিচ্ছিল পথ ধরে অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথে গড়ে তুলতে হবে এক শোষণহীন, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও বৈষম্যহীন স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশÑ স্বাধীনতার মাস মার্চে এটাই হোক অঙ্গীকার। মুসাহিদ উদ্দিন আহমদ কলাম লেখক, মালিবাগ, ঢাকা। সঁংযধযরফ.পড়ষঁসহরংঃ@মসধরষ.পড়স

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App