×

জাতীয়

এগিয়ে যাচ্ছে লাল-সবুজের বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২১, ১২:০৩ এএম

এগিয়ে যাচ্ছে লাল-সবুজের বাংলাদেশ

‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার/ সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার।’ ঠিক পঞ্চাশ বছর আগে, একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চে ফিনিক্স পাখির মতো ধ্বংসস্তুপে জেগে ওঠেছিল বাংলাদেশ। অপারেশন সার্চলাইটে জলপাই রঙের দানব ট্যাঙ্কের পৈশাচিক উল্লাসে মৃত্যু উপত্যকায় প্রিয় স্বজনের রক্তে মেখে শপথ নেয়া বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায় স্বজন হত্যার বদলা নেওয়ার। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগমুহুর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এর আগেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে উজ্জীবিত জাতি প্রস্তুতি নেয় দেশমাতৃকাকে শত্রু মুক্ত করার। ২৫ মার্চ কালোরাত থেকে শুরু হওয়া গণহত্যার দীর্ঘ নয় মাসের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে বিজয় অর্জিত পঞ্চাশে পা রাখা বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।

পঞ্চাশ বছরে বদলে যাওয়া দিনে এগিয়ে যাওয়া বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে চরণ ফেলে লক্ষ্যপূরণের স্বপ্নে বিভোর। রূপকল্প-২০৪১ অর্জনে দারিদ্র্যের তকমা ঘুচিয়ে মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ। তবে শুরুর যাত্রাটা মসৃণ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত পোড়ামাটির মৃত্যুউপত্যকায় রিজার্ভ ব্যাংকে ছিল মাত্র ১ টাকা। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট সবই ছিল ভঙ্গুর। ঘরে ঘরে দারিদ্র্যপীড়িত ভূখা নাঙ্গা মানুষের আহাজারি। কঠিন দারিদ্র্যে হোঁচট খেয়ে বাধাগ্রস্ত হয় উন্নয়ন। ৮০ শতাংশের বেশি দারিদ্র্যের হারের বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যায়িত করে ভবিষ্যতে ‘ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত হবে’ বলে দাম্ভিক উক্তি করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সেক্রেটারি অব স্টেট হেনরী কিসিঞ্জার। আর জাতিসংঘের দুই বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফ্যালান্ড ও জন পার্কিনসন বাংলাদেশ ঘুরে যৌথভাবে গবেষণাগ্রন্থ লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশ: এ টেস্ট কেইস অব ডেভেলপমেন্ট।’ তাদের নেতিবাচক মন্তব্য ছিল, বাংলাদেশের উন্নয়ন হলে বিশ্বের সব দেশের উন্নয়ন হবে এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে দু’শো বছর সময় লাগবে। কিসিঞ্জার আর জাতিসংঘের অর্থনীতিবিদদের গবেষণা ভুল প্রমাণ করে পঞ্চাশ বছরে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর বাংলাদেশের বড় অর্জন। বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫ দশমিক ৩।

বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের ঝড়-ঝাপটা পেরিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত, দক্ষ হাতে সংকট মোকাবিলা, ঝুঁকি নেওয়ায় কোভিড বিশ্বেও উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ বাংলাদেশ। মরণব্যাধি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের চমকপ্রদ মুন্সিয়ানায় জাতিসংঘসহ বিশ্বে নজর কেড়েছে বাংলাদেশ। যদিও কোভিডে উন্মোচিত হয়েছে দেশের স্বাস্থ্যখাতের থলের বেড়াল। লুকিয়ে থাকা আসল চেহারা বাইরে বেরিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে প্রয়োজনীয় এই খাতটি কতটা দুর্বল। বিব্রতকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে সরকারকে। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ এবং সর্বস্তরে শুদ্ধি অভিযান জনমনে কিছুটা স্বস্তি এনেছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজ, নিজস্ব অর্থায়নে বিশ্বের এগারতম সেতু ‘পদ্মা সেতু’র মূল অবকাঠামোর দৃশ্যমান, করোনা ধাক্কা কাটিয়ে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজে পূর্ণগতি, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে সফল বাংলাদেশ।

বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ, মাতারবাড়ি আলট্রা সুপার বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলি টানেলের কাজ এগিয়ে চলছে। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রোরেলের দূরত্ব ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার। কাজের অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৪০ শতাংশ। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত দূরত্ব ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দূরত্ব ৮ দশমিক ১২ কিলোমিটার। অগ্রগতি ৪৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। আগামী বিজয় দিবসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মেট্রোরেল চালুর আশা সরকারের। স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত এবং সুশাসন নিশ্চিত করে সোনার বাংলা বিনির্মাণের মাইলফলক হিসেবে দেখছে সরকার। আর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ১০০ অর্থনৈতিক জোন, ডেল্টা প্ল্যান, মেগাপ্রকল্প, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা এবং দুর্নীতি দমনকে বিশেষ গুরুত্ব দেবে সরকার। টেকসই উন্নয়নে শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় বন্যা, নদীভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়েছে সরকার।

পঞ্চাশে পা রাখা বাংলাদেশের কলঙ্কও কম নয়। সপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড, তারই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চারনেতার নির্মম হত্যাকাণ্ড, বিডিআর বিদ্রোহের নামে অর্ধশত দক্ষ সেনা কর্মকর্তার করুণ পরিনতি বারবার প্রশ্নের মুখে ফেলেছে স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বকে। স্বৈরশাসকের বন্দুকের ডগায় অসংখ্যবার ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে ত্রিশ লাখ শহীদের পবিত্র রক্তে কেনা সংবিধান। সংবিধানের চারমূলনীতিকে বিসর্জন দিয়ে দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চলেছে। চলেছে ইতিহাসবিকৃতির মহোৎসব। বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে মানবতা ছিল নির্বাসনে। দীর্ঘ একুশ বছর পর ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কুখ্যাত ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যাকারীদের বিচার ও রায় কার্যকর করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে কলঙ্কমোচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রক্তস্নাত বাংলাদেশ।

তবুও পঞ্চাশ বছরে এসে লড়তে হচ্ছে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে। একদিকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে নেওয়ার কঠিন শপথ, অন্যদিকে উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জ। স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে ফিনিক্স পাখির মতোই আগুনডানায় ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে লাখো শহীদের রক্তে কেনা লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App