×

মুক্তচিন্তা

সংকট কি শুধুই একজন সামাল দেবেন?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:১৭ এএম

সংকট কি শুধুই একজন সামাল দেবেন?
আল জাজিরার প্রতিবেদন মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার আগেই কারাগারে মারা গেলেন লেখক মুশতাক। মানবাধিকার সংগঠন ও বিশ্ব মিডিয়া কি দেখে থাকবে? তাদের কথা না হয় বাদ দিলাম। আমরা কি ভাবব না, যে দেশে বঙ্গবন্ধুর খুনি মোশতাক মারা যায় নিজের বাড়িতে সে দেশে একজন লেখক মুশতাক মারা যায় কারাগারে? এর নাম কি ডিজিটাল সমাজ, ডিজিটাল দেশ? দেশ যে এগিয়ে চলেছে তা সবাই স্বীকার করেন। মূলত বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা এখন বিশ্বস্বীকৃত। আমাদের দেশের অর্জন কিন্তু কম না। এক সময় আমরা ঐতিহাসিক অর্জনগুলো নিয়ে গর্ব করতাম। যেমন একুশে যেমন মুক্তিযুদ্ধ। এসব আমাদের অবিনাশী চিরকালীন অর্জন। কিন্তু এগুলো আমাদের চেতনাময় অতীত। একটি দেশ বা সমাজ যদি উন্নয়নের পথে চলতে না পারে তাহলে তার স্বাধীনতা তোপের মুখে পড়বেই। উপমহাদেশের দেশগুলো তার জ্বলন্ত উদাহরণ। এখন বিশ্বায়নের যুগ। দুনিয়ার সব দেশ একে অপরকে পলকে জানে মুহূর্তে খবর নিতে পারে। যে কারণে আমাদের উন্নতি আর এগিয়ে যাওয়া পাকিস্তানিদের ও চমকে দেয়। তাদের বুদ্ধিজীবীরা টিভিতে এসে বলেন, হামলোগকো বাংলাদেশ বানা দো। শেখ হাসিনার কট্টর বিরোধীরাও জানেন তারা সবাই উন্নয়নের সুফল ভোগ করছেন। তারা এও জানেন, হাজারবার চেষ্টা করেও তারা মানুষকে মাঠে নামাতে পারবেন না। শুধু কি তাই? মানুষ যত উন্নত আর অগ্রগামী হয় তত তার জীবনে ব্যক্তিগত হয়ে ওঠে। মানুষ নিজেদের বিনোদন আনন্দ আর খুশি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আমাদের যৌবনে রাস্তায় নামা আর জান দিয়ে হলেও এরশাদ হটানোর কারণ ছিল। ছিল না চাকরি। সরকারি তহবিল কীভাবে ব্যবহার হয় কারা তা পায় আর কারা তা পায় না তা নিয়ে না ছিল কোনো ধারণা, না কোনো স্বচ্ছতা। এখনো সে আঁধার যায়নি। কিন্তু এটা নিশ্চিত, শেখ হাসিনার আমলে মানুষ খেয়ে-পরে জীবিকা নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে আছেন। তাদের হাতে হাতে মোবাইল। ঘরে ঘরে ইন্টারনেট। তারা কি আমাদের মতো ভারত গিয়েই খুশি থাকে এখন? সামাজিক মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখি বাঙালি এখন বালি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ঘুরে বেড়ায়। ডাল-ভাত হয়ে গেছে নেপাল-ভুটান। আমাদের পাসপোর্টের মর্যাদাও বেড়েছে বাইরে। পৃথিবীর বহু দেশ পৌঁছানোর পর বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে রাজি এখন। এই অন এরাইভ্যাল ভিসা একসময় চিন্তাও করা যেত না। আমাদের দেশের আনাজ-মসলা ক্রিকেট সংস্কৃতি বিদেশিদের প্রভাবিত করছে। প্রভাব ফেলেছে প্রবাসী বাঙালিদের জীবন ও আচার। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছিলাম। হনলুলু না হয় আমাদের পরিচিত। গানে কবিতায় এর নাম এসেছে বহুবার। কিন্তু আরেকটি দ্বীপ যার নাম বিগ আইল্যান্ড, আমি নিজেও তার নাম জানতাম না। যেতামও না যদি সেখানে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি না থাকত। সে দ্বীপে গিয়েও দেখেছি বাংলাদেশির দোকান। কোথায় নেই আমরা? বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া আমাদের দেশে পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতির চাকাকে সচল করে রেখেছে। সঙ্গে আছে গার্মেন্টস ও কৃষি। এতসব অর্জনে ভালো থাকার পর ও সুখে থাকতে ভ‚তে কিলানোর বাঙালি কি চুপ থাকে? দেশে কোনো বিরোধী দল নেই। শুধু নেই না, স্তব্ধ তারা। একসময় খালেদা জিয়ার নকল জন্মদিন আর রক্তমাখা কেক কাটার ছবিতে সয়লাব ছিল মিডিয়া। সে কি উল্লাস। দিন দিন সেই কেকের ওজন বাড়ত। তাও বঙ্গবন্ধুর করুণতম মৃত্যুদিনে। বুঝলাম তিনি এখন কারাগারে। বিএনপি আছে কী নেই বোঝা কঠিন। কিন্তু এবার কী শুনলাম আমরা? জান বাঁচাতে ভ‚তের মুখে রাম নামের মতো বলা হচ্ছে জন্মদিন নাকি আসলে ১৬ আগস্ট। দিনরাত্রির হেরফেরে নাকি গণ্ডগোল হয়ে গিয়েছিল। এমন সময়েও আমরা কিন্তু মাঠ গরম দেখছি। এমন না যে, ক‚ট তর্ক বা ঝামেলা থেমে আছে। কারা করছে এসব? চোখ মেলে দেখুন আওয়ামী লীগের নানা গ্রুপই দায়িত্ব নিয়ে আজে বাজে কথা বলছে। যেমন জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের অপঢেউ তোলা সারেগামাপার গায়ক নোবেলের কথার পর এবার দেখলাম বঙ্গবন্ধু বেগম মুজিব শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ব্যানার ঝুলিয়ে গোপালগঞ্জ নামের পরিবর্তন আর জাতীয় সংগীত বদলানোর আবদার। কত বড় সাহস এদের। ঘটনা এই একটা না। এখন সারাদেশে মানুষের বিরক্তি ও রাগের কারণও কিন্তু সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। কারণ তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করতে করতে এমন জায়গায় পৌঁছে গেছে যে, মানুষকে মানুষই মনে করছে না। এই যে একতরফা বাড়াবাড়ি এমন কিন্তু চুয়াত্তর-পঁচাত্তরেও দেখেছি। একদা যারা আওয়ামী লীগ পরে বাকশাল বাকশাল বলে মুখে ফেনা তুলত তারাই পাল্টে গিয়েছিল রাতারাতি। এ তালিকায় বুদ্ধিজীবী থেকে নেতা কেউ-ই বাদ পড়েননি। আজ আবার দেখছি সবাই মিলে আওয়ামী লীগার হওয়ার অপচেষ্টা। এটা একটা সাধারণ প্রশ্ন, সবাইকে কেন একদল করতে হবে? আর করে কী লাভ? লাভ আছে বলেই তারা পড়িমরি করে মরিয়া হয়ে এমন করছে। উন্নতি যতই হোক দেশের সামাজিক দুর্নীতি বা সমাজে যে অনিয়ম তা দূর হয়নি। হয়নি বলেই শেখ হাসিনা বলছেন ঘুষ দেয়া ও নেয়া সমান অপরাধ। আর অপরাধীর ছাড় নেই। প্রত্যেকটি জায়গায় দলীয় প্রভাব আর দলবাজির নামে মূলত সরকারকে অজনপ্রিয় করার খেলা চলছে। যারা অন্তরে ঘোর আওয়ামীবিরোধী তারাই আজ বঙ্গবন্ধু প্রেমিক। এতে কী হচ্ছে? একদিকে নিবেদিতপ্রাণ আন্তরিক কর্মী-সমর্থকরা দূরে সরে যাচ্ছে আরেক দিকে ঢুকে পড়ছে কাউয়া তথা সুবিধাবাদীরা। এই সুযোগ সন্ধানীরাই সরকারকে ঠেলে দিচ্ছে খারাপ অবস্থানে। জাতীয় সংগীত ও জায়গার নাম বদল কাদের এজেন্ডা? কারা সেই পঁচাত্তরের পর থেকে এসব অপকর্ম করে আসছে? আমরা সবাই জানি কাদের গোস্বা গোপালগঞ্জ নামের ওপর। অথচ সেই এজেন্ডা কৌশলে চালানো হচ্ছে সরকারি দলের নেতাদের ছবির ব্যানারে। সবই কি শেখ হাসিনাকে দেখতে হবে? সব তিনি জানার পর বন্ধ হবে? তাহলে অন্যদের কাজ কী? আওয়ামী লীগের মতো এত বড় দল ও এত পুরনো একটি দলে দ্বিতীয় তৃতীয় স্তরের নেতৃত্ব কোথায়? কোথায় মনিটরিং? সবাই জানেন আওয়ামী লীগের শক্তি কোথায়। মুক্তিযুদ্ধ আর অসাম্প্রদায়িকতাই হলো তাদের আসল খুঁটি। সে খুঁটি নড়বড়ে করে তুললে কাদের লাভ? এসব জানার পরও কেউ থামছে না। নেতারা বলছে তো বলছেই। মন্ত্রীরাও কথাবার্তায় বেসামাল। সঙ্গে জুটেছে ব্যানারওয়ালারা। এদের যখন যা ইচ্ছা লিখে টানিয়ে দিচ্ছে। আর ক’দিন হইচইয়ের পর থেমে যাচ্ছে প্রতিবাদ। কিন্তু এই থামাটা সাময়িক। কারণ এরা আসলে মাঠ টেস্ট বা এসিড টেস্ট করছে। ভাববেন না এগুলো কোনো সময় বা মুহূর্তের ভুল। জেনে বুঝে করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য শেখ হাসিনার হাত দুর্বল করা। দলকে প্রশ্নের সম্মুখীন করা আর দেশ ও সমাজকে ভাবিয়ে তোলা। মানতেই হবে উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজ ও সংসারে শান্তি নেই। নেই কোনো নৈতিকতা। রাজনীতিতে একদলের প্রভাব আর একদলীয় আধিপত্য একদিকে যেমন ব্যালেন্স বা ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে তেমনি বাড়ছে সমস্যা। টান দিতে দিতে এরা এখন আমাদের অসাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয় সংগীত নিয়েও কথা বলছে। পাকিস্তান আমলে যারা যা সাহস করেনি এখন অনায়াসে তারা তাই করছে তা বলছে। এই নিয়মহীনতা যদি অচিরেই বন্ধ করা না হয় আওয়ামী লীগ কিন্তু বিপদ এড়াতে পারবে না। শেখ হাসিনাকে সব সামাল দিতে হলে বাকিদের প্রয়োজনীয়তা আর অপ্রয়োজনীয়তা নিয়ে মানুষের সংশয় কি দূর হবে কখনো? অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App