×

জাতীয়

করোনা ভাইরাস বাড়িয়েছে ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:১৫ এএম

ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস আজ আক্রান্তদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৭ গুণ বেশি

দেশে বর্তমানে প্রায় ৭১ লাখের বেশি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে ধারণা করা হয়। এমন তথ্য দিয়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস) বলছে, বাংলাদেশে দিন দিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস এখন মহামারি হয়ে উঠছে। বছরে বাড়ছে এক লাখ রোগী। আগামী ২০ বছরে এ সংখ্যা পৌঁছবে ১ কোটি ২০ লাখে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ৮৩ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যাচ্ছেন।

বাংলাদেশে যেমন ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বেশি, তেমনি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হারও বেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম ছিল। কিন্তু আরো ভয়াবহ হলো ২০৩০ ও ২০৪৫ সালে বাংলাদেশ নবম অবস্থানে থাকবে। পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে উচ্চহারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের ১০ জনের মধ্যে একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তবে ৫৭ শতাংশ মানুষই জানে না, তার ডায়াবেটিস আছে। এমনি ভয়াবহ পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আরো বহুগুণ ঝুঁকি বাড়িয়েছে ডায়াবেটিক রোগীদের।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ষাটোর্ধ্ব ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্তদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। জটিল রোগের অন্যতম একটি হলো ডায়াবেটিস। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বলছে, কোভিড-১৯ শনাক্ত রোগীদের মোট ২৫ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী। আর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপের তথ্য বলছে করোনা আক্রান্ত মানুষের ডায়াবেটিস থাকলে তার মৃত্যুর ঝুঁকি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। ওই দিন ৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর খবর জানিয়েছিল রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ওই দিন আইইডিসিআরের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় মৃত ব্যক্তিটি ষাটোর্ধ্ব। তার যেসব কো-মরবিডিটি ছিল এর মধ্যে ছিল সিওপিডি ও ডায়াবেটিস।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান ভোরের কাগজকে বলেন, যে অসুখে আক্রান্ত থাকার কারণে করোনার মৃত্যুর ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়ে যায় তার অন্যতম একটি ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিক রোগী করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরে নিতে হয়। অনেক সময় তাদের মৃত্যুও হয়েছে।

বাংলাদেশের জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৭-১৮ তথ্য বলছে মাত্র ১৩ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। ২২ শতাংশের বেশি মানুষের তা নিয়ন্ত্রণে নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন এক সময় ছিল যখন ডায়াবেটিস বংশগত বলে ধরা হতো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই যে কোনো বয়সে যে কোনো সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। করোনায় যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের একটি বড় অংশ ডায়াবেটিস রোগী। এ ধরনের রোগীর যদি করোনা হয় তা সাধারণ আক্রান্তদের চেয়ে আরো বেশি মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে এবং আরো মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে যদি ওই ব্যক্তির ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে।

চিকিৎসকারা বলছেন, ডায়াবেটিস মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে। যে কারণে ডায়াবেটিক রোগী খুব সহজে দ্রুত অন্যান্য জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন। তাই টাইপ-১ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্তদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা নেয়া উচিত। ডায়াবেটিস রোগটির ভয়াবহতা ও ব্যাপকতা সম্পর্কে জানতে এবং জনগণকে সচেতন করতে সবার আগে দরকার এ সম্পর্কে জাতীয় তথ্য। এ জন্য জরুরিভাবে জরিপ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এই প্রেক্ষাপটে আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস ও সমিতির ৬৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘কোভিড ও ডায়াবেটিস, প্রতিরোধে বাঁচবে জীবন’। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি নিয়েছে। সমিতির অন্যান্য অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত অধিভুক্ত সমিতিগুলোও এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, রোড শো, আলোচনা সভা ও আদর্শ ডায়াবেটিক রোগীদের ক্রেস্ট ও অভিনন্দনপত্র প্রদান, বিনামূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয়, কমমূল্যে হার্ট ক্যাম্প। এছাড়া ডায়াবেটিস সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কান্তির বিশেষ সংখ্যা ও সচেতনতামূলক লিফলেট ও পোস্টার প্রকাশ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App