×

জাতীয়

এ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ: শেখ হাসিনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৫:২২ পিএম

এ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ: শেখ হাসিনা

শনিবার গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বিটিভি লাইভ থেকে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ বাংলাদেশের জন্য এক ঐতিহাসিক ঘটনা। আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এ এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশের এই মাইলফলক অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় এই অর্জন ১২ বছরের নিরলস পরিশ্রমের ফসল। এই অর্জনের কৃতিত্ব দেশের মানুষের। এই অর্জন পুরো জাতির জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গর্বের।

শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে বিকেল ৪টায় ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে সূচনামূলক বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় এক বছর পর তিনি সংবাদ সম্মেলনে আসেন। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের এই অর্জন তিনি বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে উৎসর্গ করেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা শুরুর আগ মুহূর্তে তার হাতে হস্তান্তর করা হয় উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের পূর্ব বঙ্গ শুধু অবহেলিত ছিল না। এই পূর্ববঙ্গের যত সম্পদ তার সবই নিয়ে যাওয়া হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। অথচ সংখ্যা গরিষ্ঠ প্রায় ৫৬ ভাগ মানুষের জন্য ব্যায় করা হতো মাত্র ২৫/৩০ ভাগ সম্পদ। বাকি সব তারা ব্যবহার করতো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম সোচ্চার হোন এবং তার প্রতিবাদ করেন। তিনিই সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক মুক্তির আন্দোলন শুরু করেন। দেশ স্বাধীনতার পর এই দেশে নেমে আসে ভয়ংকর পরিস্থিতি, এই ধ্বংসপূর্ণ দেশটিকে বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় জিডিপির প্রবিদ্ধির হার ছিলো ৭ শতাংশে পৌঁছে। এবং বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশ করে। কিন্তু উন্নয়নের যে রূপরেখা করেছিলেন সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ৭৫ এর ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা বিরোধীরা বঙ্গন্ধুসহ স্বপরিবারে হত্যা করে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে নেমে আসে ভয়ংকর পরিস্থিতি। প্রতিটা মুহুর্ত আতংক বিরাজ করতো। রাত ও দিনের অধিকাংশ সময় কারফিউ থাকতো। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তি দিতে এবং বঙ্গবন্ধুর সপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য আমি দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং জনগণের পূর্ণ সমর্থণ নিয়ে আমি দেশে আসি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য গ্রামের দুঃখ দুর্দশা মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে আমি গ্রামে গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে দুঃখ দুর্দশা আর অভাব অনটন দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলমা আল্লাহ যাদি আমাকে কখনো দেশ পরিচালনার ক্ষমতা দেয় তাহলে সর্বপ্রথম গ্রামকে অগ্রাধিকার দিবো। এবং গ্রামের মানুষের উন্নয়নে কাজ করবো। তখন প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করতো।

৯৬ সালে জনগণের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সর্বপ্রথম সরকার গঠন করে। সেই থেকে আমরা দেশেকে উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা করতে থাকি। আজকের যে অর্জন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ তা আমাদের বিগত ১২ বছরের নিরলস পরিশ্রম ও পরিকল্পনার সফল।

প্রিয় সাংবাদিকগণ, মাথাপিছু আয় মানব সম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত এই তিনটি বিষয়ে জাতিসংঘ পর্যালোচনা করে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রথশ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের তিনটি মানদণ্ডই খুব ভালোভাবে পূরণ করতে সক্ষম হয়। তার ধারাবাহিকতায় এবার ত্রিবার্ষিক সভায় অত্যন্ত সফলভাবে সকল মানদণ্ডে সম্পন্ন করে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করলো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-০৯ বছরে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ১০৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০ সালে তা ৩৩০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮-০৯ বছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ১৫.৫৭ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৮-১৯ বছরে তা ৪০ দশমিক পাঁচ-চার বিলিয়ন ডলারে বৃদ্ধি পায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০০৮-০৯ বছরের ৭ দশমিক চার-সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪৪ দশমিক শূন্য-তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০১ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮.৯ শতাংশ এবং হত-দারিদ্র্যের হার ছিল ৩৪.৩ শতাংশ। ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ২০.৫ ভাগ এবং হত-দারিদ্র্যের হার ১০.৫ শতাংশে। ২০০৯-১০ সালে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ছিল ৫,২৭১ মেগাওয়াট। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে উন্নীত এবং বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে তৃতীয় এবং মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও স্বয়ং-সম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। উন্নয়ন অভিযাত্রায় ’ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর সুবিধা শহর থেকে প্রান্তিক গ্রাম পর্যায়েও বিস্তৃত হওয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ এর সুবিধা কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথাও তিনি বলেন। করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে গণ টিকাদানের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে। তবে এ অর্জনকে সুসংহত এবং টেকসই করার উপর জোর দেন তিনি। এলক্ষ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেশকিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, দুই ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। মাত্র নয় মাসে আমরা আমাদের স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত-সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। আসুন, দলমত নির্বিশেষে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এ মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App