×

জাতীয়

শিক্ষার্থী অসন্তোষের পেছনে ইন্ধন!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:০৬ এএম

শিক্ষার্থী অসন্তোষের পেছনে ইন্ধন!

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিতের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধকালে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন শিক্ষার্থীরা -ভোরের কাগজ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সরকারের ঘোষণার পরও সারাদেশে শিক্ষার্থীদের অব্যাহত আন্দোলন, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র। অনেকের জিজ্ঞাসা এই আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অপব্যবহার করে কোনো রাজনৈতিক অপশক্তি ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন কেউ কেউ। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সরকার উল্টে যাবে মর্মে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মন্তব্য, সাবেক ডাকসু ভিপি ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূরের আল্টিমেটাম নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।

বিভিন্ন আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে একটি মহল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে চাইছে এমন দাবি সরকারপক্ষেরও। স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়ে আগামীকাল শনিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে। তবে সব শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার পরই আবাসিক হলে তোলা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সেগুনবাগিচায় মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার কারণে হলগুলোর সংস্কারকাজ এবং শিক্ষার্থীর সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য সময় নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে একটি মহল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে চাইছে। শিক্ষার্থীদের সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রী জানান, শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির বৈঠক হবে, সেখানে আগামী ১ মার্চ থেকে স্কুল খুলে দেয়া হবে কীনা, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন মাস পরে পরীক্ষা দিলেও

সেশনজটে পড়বে না। মানবিক কারণেই সাত কলেজে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। পরীক্ষা না নিলে তারা তিন বছর সেশনজটে পড়ে যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার পূর্বপ্রস্তুতি আগেই ঘোষণা করা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও জানানো হয়েছে। চলমান বৈশি^ক বাস্তবতা মেনেই শিক্ষক-শিক্ষার্থী-স্টাফ সবাইকে টিকা নিয়েই প্রতিষ্ঠানে আসার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োপযোগী। এ ব্যাপারে শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, এরকম অস্থিরতার নানারকম উদ্দেশ্য থাকে। যেখানে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হচ্ছে, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান বের করতে পারেন। কোভিড নিয়ে পুরো বিশ্বই এখনো ঝুঁকির মুখে রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খোলা হয়নি। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার বিশ্বাস, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমস্যা হচ্ছে সেখানে আলোচনার মাধ্যমে অবশ্যই একটি সমাধান আসবে এবং আন্দোলন থেমে যাবে।

ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হুঁশিয়ারিকে বিশেষ একটি গোষ্ঠীর ইন্ধন বলেই মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সরকার উল্টে যেতে পারে- ডা. জাফরুল্লাহর এমন বক্তব্য ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড টিকা ছাড়াই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলে যদি একটি শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়, এর দায় কে নেবে? তারা কি এমন অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চাচ্ছে? যখন কোভিডকালেও বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ খ্যাতি অর্জন করছে, তখনো সরকারের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল।

জানতে চাইলে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা কথা বিবেচনা করে সরকার গত বছরের মার্চ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে। এরপর ধাপে ধাপে বন্ধ বাড়ানো হয়েছে। বৈশ্বিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। গবেষকরা কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারের জন্য নিরন্তর চেষ্টা করেছেন। এই সংকটে স্বার্থ হাসিলের সুযোগ খুঁজছে স্বার্থান্বেষীরা। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। নিজেদের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের অপব্যবহার করছে। কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এই জায়গা থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের এই ফাঁদে পা দেয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না। কারণ জ্ঞানচর্চা বন্ধ নেই। অনলাইনে ক্লাস চলছে। দশ মাসের বেশি সময় তারা অপেক্ষা করতে পেরেছে। তাহলে আর তিন চার মাসে কি যাবে আসবে? বিশ্বের কোথাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়নি। বর্ধিত সময় এডজাস্ট করা হবে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অযথা উদ্বেগের কোনো কারণ নেই।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হল খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আগামী ১ মার্চের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাবেক ডাকসু ভিপি ও বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর। না হলে সারা দেশের ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে আরো কঠোর কর্মসূচির দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। সাবেক ভিপি নুরের এমন মারমুখী বক্তব্যেও ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তদের মতে, দশ মাস পর যখন দেশে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিয়েছে তখন এ ধরনের হুমকি কোনো রাজনৈতিক অপকৌশলের নামান্তর। তবে এসব হুমকি-ধমকি কোনো কাজে আসবে না বলেও মনে করছেন তারা। এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের হলগুলোতে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের বসবাস করতে হয়। এখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কঠিন। এ ছাড়া বিশ্বের কোথাও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা দেয়া হয়নি। যারা দেশের বাইরে পড়াশোনা করছেন, পিএইচডি করছেন তারাও অনলাইনে ক্লাস করছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। ঠিকা না দিয়ে কোনোভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিত হবে না। যারা আন্দোলন করছে তাদের নানা কারণে ঘরে থেকে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, যার বহিঃপ্রকাশ গিয়ে পড়ছে গেটের তালার ওপর ইটের আঘাত হিসেবে। স্থানান্তরিত এই ক্ষোভ থেকেই তারা আন্দোলন করছে। তবে যারা আন্দোলন করছেন তারা দুই একদিনের মধ্যেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন এবং আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াবেন।

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের আবাসিক হল খোলা ও পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App