×

মুক্তচিন্তা

পাহাড়ে সংঘাতের শেষ কোথায়?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৪৮ পিএম

পাহাড়ে প্রতিনিয়ত রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে সবুজ পাহাড়। খুন হচ্ছে একের পর এক। আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুনাখুনি বাড়ছে। সর্বশেষ গত বুধবার রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে উপজেলা পরিষদে ঢুকে ইউপি সদস্য ও জেএসএস সংস্কার দলের নেতা সমর বিজয় চাকমাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিস রুমে ঢুকে গুলি করে ইউপি সদস্য সমর বিজয় চাকমাকে হত্যা করা হয়। তিনি উপজেলার রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংসতা নতুন নয়। গত চার বছরে আঞ্চলিক দলগুলোর সংঘাতে সেখানে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত মূলত জনসংহতি সমিতির দুটি অংশ এবং ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক। পাহাড়ি অধিবাসীদের মধ্যেই এ পক্ষগুলোর কমবেশি সমর্থন রয়েছে। তারা কেউ পার্বত্য শান্তিচুক্তির পক্ষে, কেউ বিপক্ষে। আদিবাসী ও সেটলারদের মধ্যেও বিবাদ-সংঘাতের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পাহাড়ে সংঘাতের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে এমন বিভিন্ন সংস্থার রাখা হিসাব এটি। এছাড়া অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, ছোট-বড় হামলার ঘটনাও ঘটছে পাহাড়ে। কিছুদিন পরপরই অশান্ত হয়ে উঠছে পার্বত্যাঞ্চল। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ঘটছে প্রাণহানি। পার্বত্যাঞ্চলে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের নামে সক্রিয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নিজেরাই পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকছে সবসময়। আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিনিয়ত চলছে বন্দুকযুদ্ধ ও অপহরণের ঘটনা। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় সে সময়কার বিচ্ছিন্নতাবাদী শান্তি বাহিনীর ২ হাজার সশস্ত্র কর্মী অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। অবসান ঘটে অব্যাহত রক্তপাতের। দুঃখজনক ব্যাপার, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এখনো এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের দিকে সব সময় বন্দুক তাক করে থাকছে। প্রায়ই শোনা যাচ্ছে পাহাড়ি জনপদে অপহরণ, রক্তাক্ত সংঘর্ষ, জমি দখলের খবর। পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। আঞ্চলিক গ্রুপগুলোর সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করে এর সুফল দৃশ্যমান করতে হবে পার্বত্যবাসীর কাছে। বুধবারের ঘটনায় জেএসএস সন্তু লারমা দলের ১০ সদস্যের নাম উল্লেখ করে মোট ১৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন রূপকারী ইউনিয়নের অপর ইউপি সদস্য বিনয় চাকমা। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত মোটিভ উদঘাটন জরুরি। পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে সমর বিজয় চাকমা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App