×

জাতীয়

বোতামে জ্বলে না বাতি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৩৩ এএম

বোতামে জ্বলে না বাতি!

জেব্রা ক্রসিংয়ে রাস্তার দুই পাড়ে হলুদ-কালো-হলুদে রাঙানো দুটি লোহার খুঁটির গায়ে পুশ বাটন আর ব্যবহার নির্দেশিকা আঁটা। তাতে লেখা : ‘থামুন, বাটন চাপুন, অপেক্ষা করুন, সিগন্যাল দেখুন, হাঁটুন’। বোতামে চাপ দিলে জ্বলবে সবুজ বাতি। তখন পারাপার হবেন পথচারীরা। তবে পুশ বাটন, নির্দেশিকা সবই পড়ে আছে অকেজো। ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা। রাজধানীর দুই-তিনটি সড়কে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে এখন। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর পথচারীদের রাস্তা পারাপারের সুবিধার্থে রাজধানীর তিনটি স্থানে পুশ বাটন সিগন্যাল পদ্ধতি চালু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। শাহিন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই মেশিনগুলো সরবরাহ করেছিল। কিন্তু স্থাপনের এক মাসের মাথায় অচল হয়ে যায় এসব পুশ বাটন। তারপরও নগরের আরো ২০টি স্থানে এই পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি।

ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল (টিইসি) সূত্র জানায়, নতুন করে নগরের আরো ২০টি স্থানে এই পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনা আছে। এতে ব্যয় হবে দুই কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ১০টি আর আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে আরো ১০টি স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে সংস্থাটির।

এর মধ্যে তিনটি স্থানে এই পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত চ‚ড়ান্ত। ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, কুড়িল চৌরাস্তা, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে মাইলস্টোন কলেজের সামনে ও প্রগতি সরণিতে গুলশান কমার্স কলেজের সামনে পুশ বাটন সংকেত পদ্ধতি চালুর জন্য দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে।

পুশ বাটন সংকেত পদ্ধতিতে রাস্তা পারাপারে ইচ্ছুক কোনো পথচারী বোতাম চাপলে সময় গণনা শুরু হবে। নির্ধারিত সময় শেষে পথচারীদের জন্য সবুজ বাতি জ্বলবে, যানবাহনের চালকদের জন্য জ্বলবে লাল বাতি। আর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পথচারীরা ‘ভয়েস’ নির্দেশিকা শুনে সড়ক পার হতে পারবেন। এই পদ্ধতি পুশ বাটন টাইম কাউন্টডাউন সিগন্যাল নামে পরিচিত।

২০১৯ সালের অক্টোবরে পরীক্ষামূলকভাবে মোহাম্মদপুরের গ্রিন হেরাল্ড স্কুল ও মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এই সংকেত পদ্ধতি চালু করা হয়। পুশ বাটন যন্ত্রগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা জানান, স্থাপনের কিছু দিন পরই এতে কারিগরি ত্রæটি দেখা দেয়। এরপর কার্যত তা অচল হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে সম্প্রতি মিরপুর কমার্স কলেজের সামনে আরেকটি পুশ বাটন সংকেত পদ্ধতি চালু করেছে ডিএনসিসি। জানতে চাইলে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রথম দুটি প্রকল্প ছিল পরীক্ষামূলক। ব্যবহার করে সমস্যা চিহ্নিত করে পরেরগুলোতে তা সমাধান করা হবে। এজন্য সব কয়েকটি একসঙ্গে না করে ধীরে ধীরে করা হচ্ছে। পুশ বাটন সচলের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৭২৪ টাকা খরচ করে মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বসানো পুশ বাটন সংকেত পদ্ধতি এখন পুরোপুরি অচল। সংকেত বাতি ভেঙে ঝুলে আছে। পথচারীরা যে যার মতো রাস্তা পার হচ্ছেন, আর গাড়িচালকেরা গাড়ি চালাচ্ছেন ইচ্ছেমতো। সংকেতের অকেজো বাটন চেপে বিভ্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এমনকি উল্টাপাল্টা সিগন্যালে খেই হারিয়ে ফেলছেন গাড়ির চালকরাও।

গ্রিনহেরাল্ড স্কুলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার বাটনের গায়ে রং উঠে গেছে। নির্দেশনাও নেই সিগন্যালটির আশপাশে। এমনকি যন্ত্রটি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা কর্মী বা পুলিশেরও দেখা নেই। বাটন চেপে চেপে বিভ্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। নির্দেশমতো বাতি জ্বলে না। এলাকাবাসীর সঙ্গে জানা গেছে, দেশে প্রথমবারের মতো এই আধুনিক সিগন্যাল চালুর এক মাস পর্যন্ত তা ব্যবহারের কোনো নির্দেশিকা সেখানে ছিল না। উদ্বোধনকালে পথচারী ও চালকদের ট্রাফিক আইন ও পুশ বাটন সম্পর্কে অবগত করতে লিফলেট বিতরণ করেছিলেন মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেছিলেন, ডিজিটাল পুশ বাটন ব্যবস্থাপনার জন্য করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুই শিফটে ছয়জন, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে চারজন এবং স্কুলের পক্ষ থেকে দুই শিফটে চারজন কাজ করবেন। তারা পথচারীদের নিরাপদে পারাপার হতে সহযোগিতা করবেন। কিন্তু এ কাজে নিয়োজিত কাউকেই এখন খুঁজে পাওয়া যায় না। করোনার বন্ধের কারণে স্কুলের কর্মচারীরা আসেন না। পুলিশ এসে ঢু মেরে চলে যায়। বাসচালক জুবায়ের হোসেন বলেন, কখন সিগন্যাল লাল হয়, কখন সবুজ হয় বুঝি না। একবার দেখি ৩০ সেকেন্ড টাইম উঠল, টাইম শেষ হলে তো সিগন্যাল সবুজ হওয়ার কথা। না, আবার ৩০ সেকেন্ড টাইম ওঠে। এটা কেমন সিস্টেম! পথচারীদের ভাষ্য, বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে ডিজিটাল পুশ বাটন সিগন্যাল পদ্ধতি কার্যকর করার জন্য যে প্রচারণা চালানো দরকার ছিল, তা করা হয়নি ডিএনসিসির পক্ষ থেকে। ফলে মানুষের মধ্যে সচেতনাও তৈরি হয়নি সেভাবে।

জানতে চাইলে ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরহাদ বলেন, কোনো ভুল থাকলে সেগুলোকে শুধরে নিয়ে আগামীতে কাজ করা হবে। পুশ বাটন ব্যবহারে জনগণের বিভ্রান্তি থাকতে পারে তবে নতুন এই পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষ আস্তে আস্তে সচেতন হবে, রপ্ত করবে।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চল বলেন, পুশ বাটন সিগন্যাল পদ্ধতি যেহেতু নতুন পদ্ধতি সেহেতু এ বিষয়ে জনগণকে আরো সচেতন করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, এ ধরনের সিগন্যাল ব্যবহার নিশ্চিত করতে স্কুল, সিটি করপোরেশনের লোক এবং পুলিশ থাকার কথা ছিল। আমাদের সমস্যা এখানেই, আমরা নিয়ম করি, কিন্তু সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারি না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App