×

সম্পাদকীয়

দোষীদের দণ্ড দ্রুত কার্যকর হোক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:০১ পিএম

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ১২ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। ২০০৯ সালের এই দিনে বিডিআর বিদ্রোহীরা তথাকথিত দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে ৫৭ জন মেধাবী ও চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। একসঙ্গে এত সেনা কর্মকর্তা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও নিহত হওয়ার নজির নেই। নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা, অমানবিকতার যত হীন দৃষ্টান্ত বিশ্বে স্থাপিত হয়েছে, সেগুলোর কাতারে ফেলা যায় এ ঘটনাকে। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মামলাটি এখন আইনি লড়াইয়ে চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। গত ১২ বছরে হত্যা মামলার বিচারের দুই ধাপ শেষ হয়েছে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে। তবে এ ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। ১২ বছর পূর্ণ হলেও পিলখানা ট্র্যাজেডির বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের স্বজনরা। সরকারের প্রতিশ্রুতির অন্যান্য সুবিধা পেলেও দীর্ঘদিনে দোষীদের ফাঁসি কার্যকর না হওয়ার আক্ষেপ তাদের। দিনটিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে বিডিআরের বার্ষিক দরবার চলাকালে সেখানে ঢুকে পড়ে একদল বিদ্রোহী সৈনিক। তারা তৎকালীন মহাপরিচালকের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র তাক করে। এরপরই ঘটে যায় সেই নৃশংস ঘটনা। বিদ্রোহী সৈনিকরা হাতিয়ার নিয়ে সেনা কর্মকর্তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুরো পিলখানায় এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চারটি প্রবেশ গেট নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশপাশের এলাকায় গুলি ছুড়তে থাকে তারা। পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর এ বিদ্রোহের অবসান হয়। পরে বিডিআর কম্পাউন্ডে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের লাশ। এ হত্যাযজ্ঞে ৫৭ কর্মকর্তা, একজন সৈনিক, ২ কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ বিডিআর সদস্য ও ৫ জন বেসামরিক লোক নিহত হন। ইতিহাসের কলঙ্কজনক এ ঘটনার ফৌজদারি মামলার তদন্ত কাজটাও সহজ ছিল না। মামলার আলামত মুছে ফেলতে লাশ পুড়িয়ে দেয়া, গণকবর, ম্যানহোলে ফেলে দেয়াসহ নেয়া হয়েছিল বিভিন্ন পদক্ষেপ। হত্যাকাণ্ডের মামলার ২০১৭ সালে দেয়া রায়ে হাইকোর্ট ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন এবং ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তিন থেকে ১০ বছরের সাজা হয় ২২৮ জনের। আসামিদের মধ্যে ২০৩ জন আসামির পক্ষে এখন পর্যন্ত ৪৮টি আপিল ও লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যারা খালাস পেয়েছেন এবং মৃত্যুদণ্ডাদেশের পরিবর্তে যাদের যাবজ্জীবন হয়েছে, সে রকম ৮৩ আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড চেয়ে ২০টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। সব মিলিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুপক্ষের ৭১টি আপিল ও লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি লিভ টু আপিল, অর্থাৎ আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন। আর ৩২টি সরাসরি আপিল। ১২ বছর আগে সৃষ্ট বিডিআরের ইতিহাসের ভয়ঙ্কর এ ক্ষত এত দিনে হয়তো অনেকটাই মিলিয়ে এসেছে। আমরা পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ সেনা অফিসারদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। সেই সঙ্গে দোষীদের দণ্ড দ্রুত কার্যকর হবে বলে আশা রাখছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App