×

সারাদেশ

এখনো চাকরি ফিরে পাননি যমুনা অয়েলের তিন কর্মকর্তা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৪৫ এএম

এখনো চাকরি ফিরে পাননি যমুনা অয়েলের তিন কর্মকর্তা
রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান যমুনা অয়েল কোম্পানিতে কথিত একটি তেল চুরির ঘটনা সাড়ে তিন বছরেও সুরাহা না করে উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করছে না যমুনা অয়েল কর্তৃপক্ষ। তেল চুরির কথিত অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পরও সাময়িক বরখাস্তকৃত কোম্পানির তিন কর্মকর্তা এখনো চাকরি ফিরে পাননি। কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর খুলনা ও ফতুল্লা ডিপোর জন্য লোড হওয়া এমটি রায়দা ও এমটি মনোয়ারাতে প্রায় দেড় লাখ লিটার তেল বেশি লোড হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগে এমটি রায়দা জাহাজটি খুলনার দৌলতপুর ডিপোতে যাওয়ার পথে আটক করে র‌্যাব-৬ খুলনার দীঘলিয়া থানায় ওই বছরের ৭ নভেম্বর মামলা করে। মামলায় ১৭ জন আসামির মধ্যে যমুনার তিন কর্মকর্তা তৎকালীন এজিএম (টার্মিনাল) নুরুদ্দীন আহমেদ আল মাসুদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (অপারেশন্স) প্রিয়তোষ নন্দী ও ডিউটি অফিসার সমীর কুমার পালকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মামলার পরদিন যমুনা কর্তৃপক্ষ তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে। পুলিশ, বিপিসি ও যমুনার নিজস্ব কমিটি অভিযোগ তদন্ত করে। কোনো কমিটিই তেল চুরির ঘটনার সত্যতা পায়নি বলে জানায়। এছাড়া আলোচিত জাহাজটি আদালতের গঠিত কমিটি, বিপিসির কমিটি ও যমুনার কমিটির তত্ত্বাবধানে খালাস করেও অতিরিক্ত বা তেল ঘাটতি পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি খুলনা আদালত যমুনার তিন কর্মকর্তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। এরপর তৎকালীন ডিজিএম (এমআইএস এন্ড আইটি) ও বর্তমান ডিজিএম (এইচআর) মাসুদ করিমকে প্রধান করে গঠিত বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ২০১৮ সালের ৩ জুলাই অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিবেদন জমা দেয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে এক প্রশ্নের জবাবে নিজের করা তদন্ত প্রতিবেদনে অসামঞ্জস্যতা থাকার কথা স্বীকার করে নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রধান ডিজিএম (এইচআর) মাসুদ করিম নিজেই ওই কমিশনের কাছে চিঠি দিয়েছেন। কোম্পানির তরফে চিঠিতে অভিযোগ অনুযায়ী তেলের কোনো প্রকার ঘাটতি বা আর্থিক ক্ষতি বা অস্বাভাবিক ক্ষতি মজুতে বা হিসাবে বা অডিটে পাওয়া না যাওয়ার কথা স্বীকার করা হয়। এদিকে কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে রাখার ভিত্তি নেই মন্তব্য করে সব বিভাগীয় প্রক্রিয়া দুমাসের মধ্যে শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সাময়িক বরখাস্ত আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে যমুনা অয়েলের তৎকালীন এজিএম (টার্মিনাল) নুরুদ্দীন আল মাসুদের করা রিটের আদেশে আদালত এ রায় দেন। রায়টি দেন বিচারপতি মো. আসফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টে ৩৩নং বেঞ্চ। গত ২৩ সেপ্টেম্বর দুমাসের সময়সীমা সংবলিত আদালতের রায় যমুনায় আসে। কিন্তু এখনো যমুনা অয়েল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুরাহা করেনি ও তিন কর্মকর্তার সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করেনি। ঘটনাটি দীর্ঘদিন নানা অজুহাতে ঝুলিয়ে রাখায় গত ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ৪৭৩তম বোর্ড সভায় উষ্মা প্রকাশ করেন খোদ যমুনার পরিচালনা পর্ষদ। সাড়ে তিন বছর ধরে তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাখায় যমুনার এমডির প্রতি পরিচালকদের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে বোর্ড সভার একটি সূত্র জানায়। পরিচালনা পর্ষদ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উচ্চ আদালতের আদেশ মোতাবেক বিভাগীয় মামলাটি চাকরি বিধিমালা ও নিয়ম-নীতি অনুসারে নিষ্পত্তি করতে সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদের এই সিদ্ধান্ত আড়াই মাসেও বাস্তবায়ন করেননি যমুনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, কোম্পানির কর্মকর্তাদের ২টি গ্রæপের অভ্যন্তরীণ বিরোধের বলি হয়েছেন বরখাস্তকৃত এই কর্মকর্তারা। আদালতের রায় এবং বিভিন্ন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে তেল অতিরিক্ত বোঝাই বা ঘাটতির সত্যতা পাওয়া না গেলেও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেন নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া তিন কর্মকর্তাকে চাকরি ফিরিয়ে দিচ্ছেন না, তা বোধগোম্য নয়। এ বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী আখতার কবির চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, আদালত যে রায় বা নির্দেশ দিয়েছেন এবং এটি যে কর্তৃপক্ষকে বাস্তবায়ন করতে উল্লেখ করে দিয়েছেন, তা যথাযথভাবে পালন করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। আদালতের নির্দেশ না মানার কোনো সুযোগ নেই। আদালত নির্দোষ সাব্যস্ত করে মামলা থেকে খালাস দেয়ার পর আর কোনো বিভাগীয় প্রসিডিউর চলতে পারে না। কারণ আদালতের রায়ই চূড়ান্ত। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে যমুনা অয়েল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আনসারির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে থাকার অজুহাত দেখিয়ে মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কোম্পানির এজিএম (টার্মিনাল) নুরুদ্দীন আহমেদ আল মাসুদ ভোরের কাগজকে বলেন, নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও শুধু ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হয়ে আমরা সাড়ে তিন বছর ধরে বরখাস্ত হয়ে আছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App