×

সাহিত্য

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বইমেলা সাজবে ‘হে স্বাধীনতা’ থিমে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৩৯ এএম

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বইমেলা সাজবে ‘হে স্বাধীনতা’ থিমে

করোনা পরিস্থিতিতে নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়নি অমর একুশে গ্রন্থমেলা। দেরিতে হলেও মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলা একাডেমি। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা ছবি-ভোরের কাগজ

খোঁড়াখুঁড়ি, হাতুড়ি- পেরেকের ঠোকাঠুকি, রং-ব্রাশের মাখামাখি দেখেই বোঝা যাচ্ছে কড়া নাড়ছে বইমেলা। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় তিন লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে এসব ব্যস্ত কর্মযজ্ঞের উপলক্ষ একটাইÑ অমর একুশের বইমেলা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবারের বইমেলা সাজবে ‘হে স্বাধীনতা’ থিমে। একুশের চেতনাকে ধারণ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব জন্মশতবর্ষÑ সব বিষয়ই উঠে আসবে বইমেলার নানা অনুষঙ্গে। করোনার শঙ্কার মধ্যে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে কঠোরভাবে মানা হবে স্বাস্থ্যবিধি। রীতি অনুসারে ফেব্রুয়ারির অমর একুশে বইমেলা এবার শুরু হবে ১৮ মার্চ থেকে। উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারো এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। তিনি এ বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেছেন বলেও জানা গেছে। তবে তিনি সরাসরি মেলা উদ্বোধন করবেন নাকি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন- সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। মেলা শেষ হবে ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ বরণের মধ্য দিয়ে। সেই সময়ে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কার কথা বিবেচনায় রেখে এবারের মেলায় আগতদের জন্য থাকবে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ভোরের কাগজকে বললেন, আমরা মুজিববর্ষকে ধারণ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে প্রাধান্য দেব। বইমেলার এবারের থিম ‘হে স্বাধীনতা’। এই থিমকে ঘিরে আমরা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। একুশকে ধারণ করে, মুক্তিযুদ্ধকে ধরে বাংলাদেশের উৎপত্তি থেকে আজকের বিকাশ সবকিছুই তুলে ধরা হবে। অর্থাৎ বইমেলাজুড়ে থাকবে একুশের চেতনা। সে কারণেই মেলার নাম অমর একুশে বইমেলা-২০২১।

তিনি বলেন, এবারের বইমেলায় কয়েকটি দৃশ্যগত একটি পরিবর্তন আসবে। তা হচ্ছে ঋতু পরিবর্তন। পাঠক-ক্রেতা হিসেবে যারা আসবেন সবাই যেন দুর্যোগ এলে একটি নিরাপদ আশ্রয় পান এটা নিয়ে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব। তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কাজ চলছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ। এই কাজকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবং এটিকে

মেনেই মেলা করতে হচ্ছে। প্রকাশক, লেখক, পাঠকসহ সবার কাছে অনুরোধ, তারা যেন এসব বিষয় ও কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সতর্কভাবে মেলায় আসেন। স্যানিটাইজেশনের ব্যবস্থা থাকবে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে। তারপরও ব্যক্তিগত সুরক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। সবাইকে মাস্ক পরেই মেলায় আসতে হবে। তাহলেই বাঙালি হিসেবে সব প্রতিক‚লতাকে জয় করেই আমরা আরেকটি বিজয় দেখাতে পারব।

জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় স্টল কিংবা প্যাভিলিয়ন নির্মাণের ক্ষেত্রেও বিবেচনায় থাকবে দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি। থাকবে মেলায় আগতদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের ব্যবস্থা। এ ছাড়া মেলাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে নেয়া হবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শও। জানা গেছে, করোনা মহামারিতে প্রকাশকদের ক্ষতির বিষয়টা বিবেচনায় রেখে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে স্টলভাড়া কমানোর দাবি করেছিলেন প্রকাশকরা। সে দাবি পূরণ করেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। যা বইমেলার ইতিহাসে এবারই প্রথম করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রকাশকদের স্টল ও প্যাভিলিয়ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে অন্যবারের থেকে অর্ধেক।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, প্রকাশকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় করোনাকালীন দুঃসময়ে প্রণোদনা হিসেবে পঞ্চাশ শতাংশ ভাড়া পরিশোধ করে দিয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্যাভিলিয়ন ও স্টল ভাড়া কমানোর এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ আমরা জানাই। এবার সব দিক বিবেচনা করে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মেলা করতে হবে। বিষয়টা পাঠক-প্রকাশক সবাইকেই ভাবতে হবে। তবেই মেলা সফল হবে।

জানা গেছে, এবারই প্রথমবারের মতো বইমেলার প্রবেশদ্বারে যুক্ত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনসংলগ্ন গেটটি। এ ছাড়া মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের বাকি দুই প্রবেশপথ হবে টিএসসি এবং বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের গেট। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, করোনা মহামারির প্রতিবন্ধকতাকে বিবেচনায় নিয়েই আমরা একটি সুন্দর ও প্রাণবন্ত মেলার আয়োজন করতে চাই। যা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী- এই দুই উপলক্ষকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত। মেলার কাঠামোগত বিন্যাস ও নকশায় উদ্ভাসিত হবে দুটো বিষয়ই। মেলার আগে টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কটি পরিচ্ছন্ন করে দেয়ার জন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

তিনি আরো বলেন, মার্চ মাসে মেলা হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টির বিষয়টিকেও বিশেষ বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। কারণ এ সময় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করে। তাই এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রকাশক, লেখক, পাঠকসহ সবার সহযোগিতায় আমরা একটি সুন্দর মেলা করতে চাই।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সে উপলক্ষে সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়াল ঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান। সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বিক্রয় কেন্দ্রের বাইরে অন্য প্রকাশকদের বই বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, তখন তিনি বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App