×

মুক্তচিন্তা

সূর্যমুখীর সম্ভাবনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৫১ পিএম

সূর্যমুখীর সম্ভাবনা
সারাবিশ্বে সূর্যমুখী তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই তেলের উৎস হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সূর্যমুখীর ব্যাপক চাষ হয়। এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে ৬০-৭০ দশকের দিকে বাংলাদেশেও শুরু হয়েছিল সূর্যমুখী ফুলের চাষ। তবে শুরুতে ততটা সাড়া না ফেললেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে সূর্যমুখী ফুল একটি সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে দেখা দিয়েছে। এক সময় বাড়ির আঙ্গিনায় শুধু শোভাবর্ধনের জন্য এই ফুল গাছ লাগানো হলেও এখন এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে। অনেক অনাবাদি পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা। বিভিন্ন জায়গায় সূর্যমুখী ফুলের হলুদ রাজ্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণকারীরা। সূর্যমুখীর ক্ষেতে গেলে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু হলুদ আর হলুদ। ক্ষেতে প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন হলুদের আভায় চারদিকে ছড়িয়ে আছে এক অপার মুগ্ধতা। সারি সারি গাছে সূর্যের দিকে মুখ করে ফুটে থাকা অগণিত সূর্যমুখী ফুলের সমারোহ সৌন্দর্যপ্রেমী মানুষদের কাছে টেনে আনবেই। সূর্যের দিকে হাজারো ফুলের তাকিয়ে থাকার এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে নিজেকে সামলানো আসলেই ভীষণ দায়। বাতাসে দোল খাওয়া সূর্যমুখী দেখে পাশ দিয়ে চলা যে কেউ অবশ্যই আন্দোলিত হবেন। সবুজ মাঠ আর হলুদ সূর্যমুখী ফুলের ওপর মৌমাছি আর পাখির আনাগোনা মুগ্ধ করার মতো। বলে রাখা ভালো, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এ ফুল ফোটে। এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এই একবর্ষী সূর্যমুখী ফুলের চাষ। তবে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ডোমরাকান্দি গ্রাম, মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পানিশালা গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ, সুতিয়ারা, চান্দিয়ারা ও মজলিশপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর মাধবরাম গ্রাম, রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী হরিণা এলাকার কাপ্তাই হ্রদের পাড়, খুলনা জেলার উপক‚লবর্তী কয়রা উপজেলার আমাদি ইউনিয়নের চণ্ডীপুর গ্রাম, নোয়াখালী সদর উপজেলা ও সুবর্ণচরে ব্যাপক আকারে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়। সূর্যমুখী ফুলের চারপাশে সারাক্ষণ মৌমাছি ভন ভন করে ভিড় জমায় মধু সংগ্রহের জন্য। তাই সূর্যমুখী ফুল থেকে তেল উৎপাদনের পাশাপাশি অনেক জায়গায় উৎপাদিত হচ্ছে মধুও। তবে সূর্যমুখী যে শুধুই প্রকৃতির শোভা-সৌন্দর্য বাড়ায় তা নয় বরং এর রয়েছে অনেক গুণাগুণ। এই ফুল থেকে যে তেল পাওয়া যায় তার গুণগতমান এক কথায় অনন্য। এই ফুলের বীজে ৪০-৪৫ শতাংশ লিনলিক এসিড থাকে এবং এর থেকে তৈরি তেলে ইউরিক এসিড না থাকায় তা হার্টের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। সূর্যমুখীর তেল ঘিরে বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যা বনস্পতি তেল নামে পরিচিত। এই তেল অন্যান্য রান্নার তেলের চেয়ে ভালো। এতে কোলেস্টেরলের মাত্রা অত্যন্ত কম থাকায় হৃদরোগীর জন্য বেশ কার্যকর। এ ছাড়া এতে ভিটামিন এ, ডি ও ই রয়েছে। সূর্যমুখী ফুলের বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই আছে, যা আমাদের ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখে। সেল ড্যামেজের হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে। সূর্যমুখী বীজের ফ্যাটি এসিড ত্বকে কোলাজেন ও ইলাস্টিন তৈরি করে দাগ দূর করে। প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় সূর্যমুখী ফুলের বীজ খুবই উপকারী একটি উপাদান। এর ফলে হজম খুব ভালো হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর হয়। এর বীজে রয়েছে ভিটামিন বি-৬, যা মাথার ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এতে করে চুল পড়া কমে ও নতুন চুল জন্মায়। হাড়ের সুস্থতার জন্য ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালশিয়াম দুটোই খুব জরুরি। সূর্যমুখীর বীজ খনিজ পদার্থের খুব ভালো উৎস, তাই এটি সুস্থ হাড় গঠনে সহায়তা করে। এতে আরো রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ, যা জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। এই বীজে আছে উচ্চমানের ফাইটোস্টেরল ও লিগন্যানস যা ক্যান্সার প্রতিরোধক। এসব উপাদান শরীরে ক্যান্সারের কোষ তৈরি হতে দেয় না। এছাড়া হাড়ের জোড়ায় ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক আলসার, দেহের চামড়ায় জ্বালা-পোড়া, হাঁপানি ইত্যাদি রোগ সারিয়ে তুলতে সূর্যমুখীর তেল খুবই উপকারী। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম উপাদান মানসিক চাপ দূর করে। মাইগ্রেনের সমস্যা এবং মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এই তেল। আসলে বলতে গেলে সূর্যমুখী ফুলের কোনো অংশই ফেলনা নয়। এই ফুল থেকে তেল ছাড়াও এর খৈল দিয়ে মাছ, গরু-ছাগলের খাবার এবং এই ফুলের গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সূর্যমুখীর রূপ ও গুণ বলেও শেষ করা যাবে না। তাই নানা প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের কৃষি খাতে অপার সম্ভাবনাময়ী সূর্যমুখী চাষে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করা যায়। সমাজকর্মী ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App