×

জাতীয়

কেন হলে উঠতে মরিয়া শিক্ষার্থীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:২২ এএম

মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ রয়েছে। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন। হল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি খানিকটা সহনীয় হয়ে এলে হল খুলে দেয়ার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে দেশের শীর্ষ দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেকটা বাধ্য হয়েই তালা ভেঙে হলে প্রবেশ করেছেন। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের দাবি না মানলে নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের হলে ওঠার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তবে তা একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক রকম। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশে প্রায় সব কিছুই চলছে স্বাভাবিকভাবে। কিন্তু, শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবসিক হলসমূহ বন্ধ রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নামমাত্র মূল্যে এসব আবাসিক হলে থেকে পড়াশোনা করেন। কিন্তু এখন তাদের অনেকেই বাধ্য হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের মেসগুলোতে থাকছেন। এসব মেসের পরিবেশও যাচ্ছেতাই। আবার ভালোভাবে থাকতে হলে নিতে হচ্ছে বাসা, যার জন্য গুনতে হয় চড়ামূল্য। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর নেই এ সামর্থ্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জুনাইদ খান বলেন, গত মার্চ মাস থেকে আমরা বাড়িতে রয়েছি। আমাদের শিক্ষাজীবন থেকে এক বছর নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা দেখেছি স্নাতক চতুর্থবর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তারা হলে উঠে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হলে আমাদেরটা না করার পেছনে যুক্তি কী? মোটের উপর আমাদের চাকরির আবেদনের সময়ও তো এর প্রভাব পড়বে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অনেককেই টিউশনি কিংবা কোনো খণ্ডকালীন চাকরি করে নিজের খরচ মেটাতে হয়। অনেকে আবার বাড়িতেও টাকা পাঠান। এ কারণে আমাদের ঢাকায় মেসে থাকতে হয়। আমার জানা মতে, এরকম শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক। হল খুলে দিলেও যে পরিবেশ হবে, তার চেয়েও খারাপ পরিবেশে আমরা এসব মেসে থাকি। তার বাইরে আমরা যে পরিমাণ টাকা পাই এ সব খণ্ডকালীন চাকরি থেকে, তার প্রায় সবটাই চলে যায় মেসভাড়া ও খাওয়ার খরচে।

তবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার দাবির সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার দাবিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্র্থী সামিয়া হাসান। তিনি বলেন, অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হলে ওঠার দাবির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক কারণ থাকলেও আমাদের কারণ একটিই। তাহলো আমাদের নিরাপত্তা। আমরা যারা বাইরের মেসে থাকি, তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। মাইকে ঘোষণা দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। আমাদের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী স্থানীয়দের হামলায় আহত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অজ্ঞাতনামা প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আমি কীভাবে বুঝব এ মামলায় আমার নাম নেই। এ মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করবে না, এর নিশ্চয়তা কী? আমরা নিরাপত্তাঝুঁকির জন্যেই হলে উঠতে চাচ্ছি। তা নাহলে আমরা প্রায় এক বছর অপেক্ষা করছি। হঠাৎ, কেনই বা হলে উঠতে চাইব।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সাইন্সেস ও হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের ২০১৬-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আমান উল্লাহ জানান, তাদের কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা চলমান। হল না খুলেই পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর যে নামমাত্র ক্লাস নেয়া হবে তাও আমরা জানি। কার্যত হল খোলার কিছুুদিনের মধ্যেই আমাদের পরীক্ষা নেয়া হবে। তাছাড়া আমরা হলে থেকে অভ্যস্ত। গ্রামে যারা থাকি বা মেসে থাকি, সেখানে পড়াশোনার পরিবেশ নেই। আমরা একসঙ্গে অনেকেই মেসে গাদাগাদি করে থাকি। ফলে আমরা নিজেদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারছি না।

শিক্ষার্থীদের হলে ওঠার আন্দোলন কিংবা তালা ভেঙে জোর করে হলে প্রবেশের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঔদাসীন্যই দায়ী বলে মনে করেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ। তিনি বলেন, বিশ্বদ্যিালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কথা না ভেবেই অনলাইন ক্লাস শুরু করেছে। এখানে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারেনি। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের নানা কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে অবস্থান করতে হচ্ছে। কিন্তু, তাদের অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা এক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।

তিনি আরো বলেন, করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কোনো সাহায্য বিশ্ববিদ্যালয় করেনি। আমরা শুরু থেকে তাদের বৃত্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছিলাম। তা করা হয়নি। বরং, হলে না থাকলেও তাদের কাছে হলের ফিসহ নানান অযাচিত ফি নেয়া হচ্ছে; যার কোনো সুবিধাই তারা বিগত এক বছরে পায়নি। তাই, অনেকটা বাধ্য হয়েই ও ক্ষোভের বশেই তারা হলে প্রবেশ করেছেন বা করতে চাচ্ছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App