×

মুক্তচিন্তা

সুরক্ষার জন্য টিকা নেয়া জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:১৪ পিএম

সুরক্ষার জন্য টিকা নেয়া জরুরি

ফাইল ছবি।

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে টিকাদান কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আগ্রহ দিন দিন বাড়লেও যারা বিভিন্ন রোগের কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল ও দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগী, যেমন ক্যান্সার, কিডনি, ডায়াবেটিস, লিভার, নিউরোলজিক্যাল ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রোগে আক্রান্ত তারা টিকা নিতে পারবেন কিনা বা টিকা নিলে সমস্যা হয় কি না এমন আতঙ্কে বা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা যে কোনো সময় করোনা ভাইরাস সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন। ইমিউনোকম্প্রোমাইজড বা ইমিউনোসাপ্রেসড (হ্রাসপ্রাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বা ক্লিনিক্যালি খুবই দুর্বল (রোগশয্যায়) প্রকৃতির লোকদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন বেশি, তেমনি সংক্রমিত হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়া এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেক বেশি। গর্ভবতী, বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েরা ও ১৬ বা ১৮ বছরের কম বয়সিদের ওপর টিকাগুলোর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনো শেষ হয়নি বিধায় তাদের টিকা না নেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে যুক্তরাজ্যের টিকা ও টিকাদান সম্পর্কিত যৌথ কমিটি বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জীবন্ত ভাইরাস টিকা ছাড়া অক্সফোর্ডের টিকাসহ অন্যান্য করোনা টিকা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড টিকাগুলোর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সময় কোনো গুরুতর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি এবং যাদের তীব্র অ্যালার্জি সমস্যা ছিল তাদের কাউকেই পরীক্ষার কোনটিতেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অক্সফোর্ডের টিকায় পলিইথিলিন গøাইকল নামক অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপাদান নেই বলে অ্যালার্জি সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিরা অক্সফোর্ড টিকা গ্রহণ করতে পারেন। যাদের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়েছিল এমন হার্টের রোগী ও ফুসফুসসহ ডায়াবেটিসের রোগীরা অক্সফোর্ড টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং কোনো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তাই এসব রোগী এ টিকাটি নিতে পারেন। কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, স্টেম সেল বা অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন ও ইমিউনোথেরাপির মতো কিছু চিকিৎসা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাতে প্রভাব ফেলতে পারে, যা টিকাটির কার্যক্ষমতাকেও কমিয়ে দিতে পারে। তারপরও যুক্তরাজ্যের টিকা ও টিকাদান সম্পর্কিত যৌথ কমিটি এসব লোককে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছে। করোনা টিকাগুলো ইমিউনোসাপ্রেসড ব্যক্তিদের ক্ষতি করতে পারে এমন কোনো উদ্বেগ নেই, তবে তারা টিকা থেকে ততটা সুরক্ষা নাও পেতে পারেন। যারা এমন ওষুধ গ্রহণ করছেন, যা ইমিউনিটিকে দুর্বল করতে পারে বা যেসব চিকিৎসা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটির কার্যকারিতা হ্রাস করে, তা টিকার কার্যকারিতাকেও হ্রাস করতে পারে। কিছু ক্যান্সার রোগীসহ ইমিউনোসাপ্রেসড ব্যক্তিদের কেন টিকাগুলো কাজ করছে না? আমাদের শরীরে টিকাগুলোর প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির জন্য কার্যকর ইমিউনিটি দরকার। তাই আমাদের শরীর টিকার অ্যান্টিজেনটি প্রতিরোধ ব্যবস্থাতে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে অবশ্যই সক্ষম হতে হবে, যাতে ইমিউন কোষগুলো তথা বি এবং টি কোষের অ্যাক্টিভেশন ঘটতে পারে এবং প্লাজমা বি কোষের অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হয়। কাজেই কার্যকর ইমিউন কোষের অভাবজনিত লোকরা কোভিড-১৯ টিকার মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে অক্ষম হতে পারেন। আমেরিকান সোসাইটি অব হেমাটোলজির মতে, ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপির রোগীদের কখন টিকা দেয়া উচিত? পরিকল্পিত ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপি ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা সেপ্লনেক্টোমির কমপক্ষে ২-৪ সপ্তাহ আগে টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যদি কোনো রোগী ইমিউনোসাপ্রেসিভ থেরাপি গ্রহণ করে থাকেন, তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য থেরাপি বন্ধ করার ৬ মাস পরে টিকা নিতে হবে। তা ছাড়া হেমাটোপয়েটিক সেল প্রতিস্থাপনের ৩-৬ মাস পর টিকা গ্রহণ করা উচিত। করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের করোনার কারণে গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যুঝুঁকি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য টিকা নেয়া খুবই জরুরি। তবে টিকা নেয়ার পরও করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা কতটুকু তৈরি হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কিনা তা অবশ্যই বিবেচনায় নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং সংক্রমণ ঝুঁকি থেকে নিজেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য পরিবারের অন্য সদস্যদের টিকার আওতায় আনতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোনো টিকাই শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না এবং অক্সফোর্ড টিকাটিও ৬২-৯০ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে। কাজেই করোনা সংক্রমণ শতভাগ নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত টিকা নেয়ার পরও করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে যারা রয়েছেন তারাসহ সবাইকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতেই হবে। ড. মো. শফিকুর রহমান : অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App