×

জাতীয়

আন্দোলনে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা: কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৪৪ এএম

আন্দোলনে চার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা: কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়/ ফাইল ছবি

আর কত দিন বন্ধ থাকবে স্কুল? বাচ্চারা একেবারে অতিষ্ঠ করে তুলছে। এর মধ্যে চলতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য সিলেবাসও সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। এখন ছেলেটাও পড়াশোনা করছে না। কীভাবে তাকে পড়াশোনায় ফিরিয়ে আনব বুঝতে পারছি না। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় সন্তানদের নিয়ে জেরবার হয়ে পড়া হবিগঞ্জের আলিফ সোবহান চৌধুরী সরকারি কলেজের প্রভাষক আবদুল হাই ভূঁইয়া এভাবেই হতাশা প্রকাশ করেন।

রবিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) তিনি ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সব খুলে গেছে। সরকারের উচিত এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও খুলে দেয়া। করোনা ছুটি যত বাড়বে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অমনোযোগিতা তত বাড়বে। করোনার সংক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে প্রায় এক বছর ধরে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় পড়াশোনার যে ক্ষতি হয়েছে তার হিসাব বের করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন এই কলেজ শিক্ষক। তিনি বলেন, সব চালু, পরিবারের সবাই ঘর থেকে বের হচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থীদের ঘরে আটকে রেখে কী লাভ হচ্ছে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় চালু ও আবাসিক সুবিধার জন্য হল খুলে দিতে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু আবদুল হাই ভূঁইয়া নন, আবালবৃদ্ধবনিতাই এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। শিক্ষা প্রশাসনও তাদের আর্জি মেনে গত ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু ৩০ জানুয়ারি উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, করোনা একটু নিয়ন্ত্রণে না এলে স্কুল-কলেজ খোলা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর এমন কথা শুনেই শিক্ষা প্রশাসন আরো দুই দফায় ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ছুটি বাড়িয়েছে। এর ফলে অভিভাবকসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরছে- কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনও খোলাসা করে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে না। শুধু বলছে, পরিস্থিতি আয়ত্তে এলেই খুলে দেয়া হবে।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব (ভারপ্রাপ্ত) ড. ফেরদৌস জামান ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হল খুলে দেয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। ওই বৈঠকে মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ২২-২৩ জন উপাচার্যের বক্তব্য শুনেছেন। এরপর সময়ের অভাবে বৈঠকটি মুলতবি হয়ে যায়। ২-৪ দিনের মধ্যে মন্ত্রী ও উপমন্ত্রী ফের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আসন্ন বৈঠকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত আলোচনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, স্কুল-কলেজ কবে খুলবে তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই জানেন। তিনি যেদিন সম্মতি দিয়ে বলবেন, স্কুল-কলেজ খুলে দাও; সেদিন থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও সেই নির্দেশ পালন করবে।

তবে গত শুক্রবার মৌলভীবাজার সফরে গিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেছেন, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এমন নিশ্চয়তা পেলেই স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হবে। এ জন্য আমরা করোনা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। আপাতত আমাদের ভাবনা হলো, মার্চ থেকে পুরোদমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করা। অন্য ক্লাসগুলোর পাঠদানও ধাপে ধাপে শুরু হবে। তবে এটি চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নয়, সরকারের ভাবনা। সব কিছুই নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার ওপর।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে (আগামীকাল) আবাসিক হল খুলে দেয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে হল খুলে দেয়া না হলে তারা আবার আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগামী ১ মার্চ থেকে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আবাসিক হল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের শহরের বিভিন্ন এলাকার মেসসহ ভাড়া বাসায় উঠতে হয়েছে। অথচ অনেক শিক্ষার্থীর ভাড়া দেয়ার সামর্থ্য নেই। এছাড়া বাইরে ভাড়া থাকতে গিয়ে তারা নানাভাবে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আবু হেনা পহিল বলেন, বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী হল খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে আগামী ২৭ মার্চের পর থেকে বিভাগওয়ারি স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষাগুলো শুরু হবে। এ জন্য কেবল পরীক্ষার্থীদের আগামী ১৩ মার্চ থেকে আবাসন সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে খুলে দেয়া হচ্ছে হলগুলো। এক্ষেত্রে অন্য শিক্ষার্থীরা বলেছেন, কেবল পরীক্ষার্থীদের কেন, ঢাবির সব শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হলগুলো খুলে দিতে হবে। এ জন্য তারা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাবির মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জুনাইদ খান ভোরের কাগজকে বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় আমরাও পিছিয়ে যাচ্ছি। সুতরাং আবাসিক সুবিধা দিয়ে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। দাবি আদায়ের জন্য আজ সোমবার দুপুর ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্রসমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করার কথা রয়েছে।

এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলে না থাকতে পেরে আশপাশের গ্রামগুলোতে মেস ভাড়া নিয়ে বাস করছেন। কিন্তু নানা কারণে গ্রামবাসীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। এরকম পরিস্থিতিতে কয়েক দিন ধরেই দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সুবিধা চালু করার দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। সেই দাবি না মানায় গত শনিবার তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টিরও বেশি হলে তালা ভেঙে ঢুকে যান। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, সরকার সিদ্ধান্ত না দিলে আবাসিক সুবিধা চালু করা সম্ভব নয়। তালা ভেঙে হলে ঢোকাটা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তবিরোধী।

রাজশাহী বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থীরাও আবাসিক হল ও ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। গতকাল সকাল ১১টায় বিশ্ববিদালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পেছন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এরপর মিছিলটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে হল খুলে দেয়ার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। দাবি মেনে নিতে প্রশাসনকে আগামী ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টার মধ্যে তাদের দাবি মেনে নেয়ার সময়সীমা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দাবি মেনে হল ও ক্যাম্পাস খোলার সিদ্ধান্ত না নেয়া হলে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আক্তারুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে জাতীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে এই সমস্যার সুরাহা করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, পরীক্ষা নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেয়া উচিত। নতুবা শিক্ষার্থীরা বিড়ম্বনায় পড়তে পারে। সমস্যাটা এখানেই। এ জন্য সরকারের একটি সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

আর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা চালু ও আবাসিক সুবিধার জন্য হল খুলে দেয়ার বিষয়ে একেক বিশ্ববিদ্যালয় একেকভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সরকারের নির্বাহী সিদ্ধান্তেই এখন বিশ্ববিদ্যালয় গুলো বন্ধ আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App