×

জাতীয়

জবিতে ভাষা শহীদ রফিকের ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি শিক্ষার্থীদের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:০৭ পিএম

জবিতে ভাষা শহীদ রফিকের ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি শিক্ষার্থীদের

ফাইল ছবি

১৯৫২ সালে 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' দাবিতে যে কয়জন ছাত্র নিজের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে বিসর্জন দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ) হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রফিক উদ্দিন আহমদ ছিলেন অগ্রগামী। বাংলাকে রাষ্টভাষা করতে প্রথম শহিদ তিনি। জগন্নাথে ছাত্র রফিক ভাষার জন্য জীবন দিলেও তার স্মৃতি শুধুমাত্র একটি ভবনের নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তার নামে নেই কোনো স্মৃতি স্তম্ভ, ভাস্কর বা ম্মৃতি জাদুঘর। এমনকি রফিকের জন্ম ও মৃত্যু দিনেও হয় না আলাদা করে কোন স্মরণ সভা বা বিশেষ আয়োজন।

জানা যায়, ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার পারিল গ্রামে (বতর্মানে রফিকনগর) আবদুল লতিফ মিয়া এবং রাফিজা খাতুন দম্পতির ঘরে জন্ম নেন প্রতিবাদী ও সাহসী সন্তান রফিক উদ্দিন। ১৯৪৯ সালে রফিক স্থানীয় বায়রা স্কুলে মাধ্যমিক শেষ করে ভর্তি হন মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে। এরপর তিনি ভর্তি হন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে। এ সময় শুরু হয় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন। এ আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন রফিক।

কিন্তু দিন কয়েক পরেই যে পানু বিবির সঙ্গে রফিকের বিয়ে। তাই ছেলেকে মিছিলে যেতে মানা করেন লতিফ মিয়া। ২১ ফেব্রুয়ারি বিয়ের শাড়ি-গহনা নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। কিন্তু বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২-র ২১শে ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আন্দোলন মিছিলে যান তিনি। তাদের মিছিল ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেল প্রাঙ্গণে গুলি চালায় পুলিশ। এতে রফিক মাথায় গুলিবিদ্ধ হন এবং ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

ভাষার জন্য গুলিবিদ্ধ হয়ে রফিক প্রথম শহীদ হন বলে ওইদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরত মুহাম্মদ মাহফুজ হোসেন এক সাক্ষাৎকারে জানান। পরে রাত ৩টায় সামরিক বাহিনীর প্রহরায় ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

শহীদ রফিকের স্মৃতি রক্ষার্থে ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন বিজনেস স্টাডিজ ভবনের নাম পরিবর্তন করে ‘ভাষা শহীদ রফিক ভবন’ নামকরণের প্রস্তাব করা হলে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। বর্তমানে এ ভবনে বাংলা ও ইতিহাস বিভাগসহ নিচের তালায় মেডিকেল সেন্টারের কাজ চলছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে নেই কোনো ভাস্কর্য বা স্মৃতি স্তম্ভ।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ভোরের কাগজকে বলেন, শহীদ রফিক জগন্নাথের ছাত্র হয়ে ভাষার জন্য জীবন দেয়ায় আমরা সবসময় গর্ববোধ করি। অনেক শিক্ষার্থী হয়তো জানেও না তার ইতিহাস। তাই ভাষা শহীদ রফিকের ভাস্কর্য নির্মাণ ও ইতিহাস সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি আমরা।

একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আনোয়ারা বেগম বলেন, ভাষা আন্দোলন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তি ও অনুপ্রেরণার জায়গা ছিল। জগন্নাথের ছাত্র ভাষা শহীদ রফিকের স্মৃতি শুধু ভবনের নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। শহীদ রফিকের স্মৃতি রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্মৃতি স্তম্ভ বা ভাস্কর্য বানালে সবার কাছে ইতিহাস রক্ষিত হবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শহিদ শিক্ষকসহ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App