×

সারাদেশ

উচ্ছেদে ফুঁসে উঠেছে পতেঙ্গার লালদিয়া চরবাসী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:৫৮ পিএম

উচ্ছেদে ফুঁসে উঠেছে পতেঙ্গার লালদিয়া চরবাসী

ছবি: প্রতিনিধি

‘নদী রক্ষায় রায় হয় মানুষ রক্ষায় কেন নয়? আমাদের বাসস্থান দিতে রাষ্ট্র কী সক্ষম নয় ? নদীর জন্য মন কাঁদে মানুষের জন্য কেন নয় ? পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদই কি মুজিব বর্ষের উপহার? নদী রক্ষার নামে আমাদেরকে গৃহহীন কেনো?’ -এ ধরনের অসংখ্য ফেস্টুন ব্যানার নিয়ে পতেঙ্গা এলাকার লালদিয়ার চর এলাকার অধিবাসীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শনিবার। উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি লালদিয়ার চরের প্রায় ২ হাজার ৩০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করার যে নোটিশ ও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তারই প্রতিবাদে এলাকার অধিবাসীরা রাস্তায় নেমে এসেছেন।

নানা রকমের শ্লোগান ও দাবি দাওয়া সম্বলিত ফেস্টুন-ব্যানার নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত এসব অধিবাসী শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে পতেঙ্গার বিমানবন্দর সড়কের লালদিয়ার চর এলাকায় এ মাবনবন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে তাদেরকে উচ্ছেদ না করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আকুল আবেদন জানান।

সমাবেশে আতঙ্কগ্রস্ত মানুষজন বলেন, কর্ণফুলী নদীর চর ঘেঁষে প্রায় ৪৮ বছর ধরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানার লালদিয়ার চর এলাকায় বসবাস করে আসছেন ২ হাজার ৩০০ পরিবার। কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের এক নোটিশে স্থানীয় মাঝে তৈরি হয়েছে উচ্ছেদ আতঙ্ক।

চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন পতেঙ্গা এলাকার প্রায় ৫৭ একর জায়গায় এই লালদিয়ার চরে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। সম্প্রতি পরিবেশবাদী একটি সংগঠনের আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত থেকে লালদিয়ার চরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে এ ব্যাপারে আগামী ৯ মার্চের মধ্যে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে আদেশ দিয়েছেন। তাই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও অনন্যোপায় হয়ে উচ্ছেদের গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ আমাদেরকে মানতে হবে।

এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী বলেন, লালদিয়ার চর এলাকার ২ হাজার ৩০০ পরিবারের থাকার জায়গার ব্যবস্থা না করে এভাবে উঠিয়ে দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ভবন নির্মাণ করে দিয়ে যেখানে প্রধানমন্ত্রী মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন, সেখানে এ চরবাসিদের সামান্য থাকার জায়গা ব্যবস্থা করে দেওয়া সরকারের পক্ষে কোনো বিষয় না। আমি এ জনবসতি উচ্ছেদ না করতে সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘চর এলাকার লোকজন খুবই গরিব। উচ্ছেদ করলে ভাড়া বাসায় যাওয়ার মতো সামর্থ্য পরিবারগুলোর নেই। ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের উচ্ছেদ না করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি। তবুও যদি কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করতে আসে তাহলে লালদিয়ার চরবাসি ওইদিন বিামনবন্দর সড়কে শুয়ে থাকবে।’

মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হাসান, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামীগ নেতা মো. ফরিদুল আলম, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম রনি প্রমুখ। স্থানীয়রা জানান, ১৯৭২ সাল থেকে লালদিয়ার চর এলাকায় বসবাস করে আসছে ২ হাজার ৩০০ পরিবার। এ, বি ও সি ব্লকে বিভক্ত হয়ে গঠিত লালদিয়ার চর। ২০০৫ সালের ১২ জুলাই লালদিয়ার চরের বি ব্লকে থাকা প্রায় ৫০০ পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। ২০১৯ সালেও লালদিয়ার চর এ ব্লকের কিছু অংশ উচ্ছেদ করা হয়। নতুন করে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি এ ব্লক উচ্ছেদ করার জন্য নোটিশ দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App