প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করুন
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৫৯ পিএম
খাদ্যে ভেজাল ও খাদ্যে বিষক্রিয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি এর ব্যাপ্তি যে হারে বাড়ছে তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। দেশি-আন্তর্জাতিক সব গবেষণায় দেশে খাবারের বিষক্রিয়ার বিষয়টি বারবার উঠে আসছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেল-রেস্টুরেন্ট বা নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্যও এখন ভেজালমুক্ত নয়। সামনে রমজান শুরু হবে। রমজানকে কেন্দ্র করে ভেজালের ব্যাপকতা আরো বেড়ে যায়। গত বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি যারা এ কাজ করছে, তাদের কঠোর হাতে দমনের নির্দেশনা দিয়েছেন। নিরাপদ খাদ্য শুধু পরীক্ষাই নয়, পাশাপাশি মানুষ কীভাবে সুষম খাদ্য গ্রহণ করবে তা প্রচার করে সচেতনতা আনতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা সময়োপযোগী। নির্দেশনা পালনে সংশ্লিষ্টরা গুরুত্ব দেবেন আশা করি। এক গবেষণায় বলছে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। এই পরিসংখ্যানটি আমাদের ভাবিয়ে না তুলে পারে না। ভেজালের দৌরাত্ম্য দেখতে পাই আমরা রমজান মাসে। এ সময় ইফতারি পণ্যে ক্ষতিকর রং এবং অস্বাস্থ্যকর উপকরণের ব্যবহার অহরহ ঘটে। ইফতারের অপরিহার্য পাঁচটি সামগ্রী ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, মুড়ি ও জিলাপির প্রতিটিতেই নানাভাবে মেশানো হয় ভেজাল। মুড়ি আকারে বড় ও সাদা করতে ব্যবহৃত হচ্ছে ট্যানারির বিষাক্ত রাসায়নিক সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড। বেগুনি, পেঁয়াজু, চপ কিংবা জিলাপিতে ব্যবহৃত হচ্ছে টেক্সটাইল কালার। কম খরচে বেশি লাভের আশায় একশ্রেণির বিক্রেতা এসব বিষাক্ত রং ব্যবহার করছেন ইফতার সামগ্রীতে। এসব খাবার খেয়ে সাধারণ মানুষ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। মহাখালী পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের খাদ্য পরীক্ষাগারের তথ্যানুযায়ী, দেশের ৫৪ ভাগ খাদ্যপণ্য ভেজাল ও দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত হয়। সারাদেশ থেকে স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের পাঠানো খাদ্যদ্রব্যাদি পরীক্ষাকালে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। ফলমূল ও শিশুখাদ্যেও ভেজাল চরম আকার ধারণ করেছে। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ নিম্নমানের ৫২ খাদ্যপণ্য প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সেটা খুবই নির্দিষ্ট এমনটা সম্ভবত প্রথম। কিন্তু এর আগে এটা আমরা উদ্বেগের সঙ্গে দেখেছি, হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের পরও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পরিস্থিতির তেমন হেরফের ঘটেনি। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে খাদ্যে ভেজাল দেয়া এবং ভেজাল খাদ্য বিক্রির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা প্রয়োগ করার কোনো নজির নেই। জনসচেতনতা ও প্রশাসনিকভাবে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন ব্যতীত ভেজালের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা অসম্ভব। ভেজাল পণ্য ও অসাধু ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে অভিযান নিয়মিত থাকলে ভেজালকারীদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করা যায়।