×

সারাদেশ

চৌগাছায় ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রচারণায় প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৪:১২ পিএম

চৌগাছায় ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রচারণায় প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাপ

ফাইল ছবি

যশোরের চৌগাছায় পৌর নির্বাচনের আমেজ শেষ না হতেই ইউনিয়ন নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছে। উপজেলাতে ১১টি ইউনিয়নে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রায় ৪০ জনের বেশি প্রার্থী দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন। এই দৌঁড় ঝাপের মধ্যে গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পাশাপাশি রয়েছে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও।

মে মাসের মাঝামাঝি দেশজুড়ে বড় পরিসরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নির্বাচন কমিশন বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসির (আরএফইডি) নতুন কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ ও নতুন সদস্যদের বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। সিইসি বলেন, এপ্রিলের ৭ তারিখে আরেকটি পৌরসভা নির্বাচন হবে।

একইসঙ্গে কিছু ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হবে। এ জন্য ১৭ ফেব্রুয়ারি কমিশন সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত হবে, কয়টি পৌরসভা ও ইউপিতে ভোট করা যায় তা পর্যালোচনা করা হবে। তবে রমজানে নির্বাচন হবে না। একমাস আমাদের ছুটিতে যেতে হবে। কারণ আমাদের ভোটার লিস্ট তৈরি করা, সেটা চূড়ান্ত করা, তালিকার সিডি করে প্রার্থীদের দিতে হবে। এসব কাজে সময়টা চলে যাবে।

উপজেলার স্থানীয় নেতাদের মতে, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ বা আগে পরে চৌগাছা উপজেলার ইউনিয়নগুলোর নির্বাচন হতে পারে। ২০১৬ সালে ৪ জুন এ উপজেলার ইউনিয়ন নির্বাচন হয়েছিল। জনপ্রিয়তা যাচাই এবং স্থানীয় রাজনীতি ও গ্রুপিং’র কারণে এবার ১১টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রত্যাশী প্রার্থী একাধিক।

গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নাম মনোনয়নের জন্য পাঠানো হবে কিনা প্রশ্নের উত্তরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধূরী বলেন, দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুয়ায়ী কাজ করা হবে। এখনো কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি।

ইতোমধ্যে কিছ কিছু ইউনিয়নে দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রায় চুড়ান্ত বলেই মনে করছেন ইউনিয়নবাসী। তবে যেসব ইউনিয়নে দলীয় নেতা কর্মীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের পছন্দ করে ভোটের অপেক্ষায় আছেন সেসংখ্যা মাত্র ৩/৪টি। সেগুলো হচ্ছে ১ নং ফুলসারা ইউনিয়ন।

গতবার এ ইউনিয়নে নৌকা প্রতিকে নির্বাচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরী। এবারও তিনি নৌকা প্রতিক প্রত্যাশি। এবার দলীয় মনোনয়ন চাইছেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য প্রভাষক হারুর অর রশিদ। অন্য দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ফুলপাশাপোল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মহাসিন মিয়ার ভাইপো ও সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার শাহাজাহান কবিরের ছেলে সাবেক ছাত্রনেতা,উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল এই উনিয়নের শক্ত প্রার্থী।

২নং পাশাপোল ইউনিয়নে নৌকা প্রতিকে চেয়ারম্যান নির্বাচীত হয়েছিলেন সাবেক ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক অবায়দুল ইসলাম সবুজ। পাশাপোল ইউনিয়নের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গ্রহনযোগ্য অবায়দুল ইসলাম সবুজের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে অন্য কাউকেই তালিকায় নিতে রাজিনা ইউনিয়নবাসী। তারপরও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতলেব, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম।

এছাড়াও আছেন মনোনয়ন চাইবেন এই ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকে প্রথম নির্বাচিত জনপ্রিয় চেয়ারম্যান কাশেম হত্যার প্রধান আসামি সাবেক চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান শাহিন। ৫নং চৌগাছা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম। ইতোমধ্যে ইউনিয়নে শক্ত ও মজবুত অবস্থান তৈরি করেছেন সাবেক ছাত্র নেতা শামীম রেজা। তিনি তরুণ মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়।

৩নং সিংহঝুলি ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশি ও প্রচারণায় আছেন সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রেজাউর রহমান রেন্দু। তিনি শহীদ জিল্লুর রহমান মিন্টুর আপন বড় ভাই। ২০১১ সালে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শহীদ জিল্লুর রহমান মিন্টু এই ইউনিয়নের সর্বাধিক ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে তারই ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ৫টি হত্যা,অস্ত্র ও নারী নির্যাতনসহ একাধিক মামলার আসামী শামীম কবির ওরফে কিলার শামীম জনসন্মুখে জিল্লুর রহমান মিন্টুকে গুলি করে হত্যা করে। সেই কিলার শামীমও এবার দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রচারনায় আছেন।

৪নং ধূলিয়ানী ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী মমিনুর রহমান। এই ইউনিয়নে মনোয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন। মনোনয়ন চাইবেন ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি মাষ্টার আলিম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মাষ্টার ফারুক হোসেন, উপজেলা যুব মহিলা লীগের সহ-সভাপতি রিপা খাতুনসহ আরো ৩/৪ জন।

৬নং জগদিশপুরে চাচা ভাইপোসহ ৫ জন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ইউনিয়নের উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তবিবুর রহমান খান নৌকা প্রতীকের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন তারই আপন ভাইপো উপজেলা যুবলীগের সদস্য আজাদুর রহমান খান। মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান মাষ্টার সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আব্দুল কাদের।

৭ নংপাতিবিলা ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে আছেন ৩জ ন। সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিয়া। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা এমএ জাফর মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন।

৮নং হাকিমপুর ইউনিয়ন সবসময়ই বিএনপির দখলে। স্থানীয় আওয়ামী নেতাদের গ্রুপিং ও এই ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থীর প্রতি সহমর্মিতার কারণে কোনো সময়ই সুবিধা করতে পারিনি আওয়ামী লীগ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাফিজুর রহমান সদস্য মামুন কবির এবং আওয়ামী লীগ নেতা ডেভিড দলীয় জনপ্রিয়তায় শক্ত প্রার্থী। এদের মধ্যে কেউ একজন নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন পেলেই হাকিমপুর ইউনিয়নকে বিএনপির কবল থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করছেন হাকিমপুর ইউনিয়নের নেতা কর্মীরা।

৯নং স্বরুপদা ইউনিয়নে মনোনয়ন চাইছেন ৭জন। তবে ১৯৭৮ সালে চৌগাছা উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল কদর এবং আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মাহাবুবুল আলম রিংকু আছেন স্থানীয়দের পছন্দের তালিকায়।

১০নং নারায়নপুর ইউনিয়নে আছেন ৭জন। নৌকা প্রতিকে নির্বাচীত চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদিন মুকুল শারিরিক ভাবে খুবই অসুস্থ। তবুও তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। সেই সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশিরা হলেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও প্রেসক্লাব চৌগাছার সম্পাদক প্রভাষক অমেদুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহ আলম সরকার,উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং এই ইউনিয়নের নির্বাচিত মেম্বার মিলন।

১১ নং সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশি ৪জন। গতবারের নৌকা প্রতিক পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা চাদনী। মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলাইমান হোসেন,মাষ্টার নুর ইসলাম ও গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী তোতা মিয়া। এই ইউনিয়নে এবার দলীয় মনোনয়ন চাইবেন যশোর জেলা পরিষদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হবিবর রহমান।

মনোনয়ন প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে নৌকা প্রতিক যেই পাবেন তার সঙ্গে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই বিএনপির সঙ্গে ভোট যুদ্ধ হবে। তবে যদি বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকে সেক্ষেত্রে একমাত্র হাকিমপুর ইউনিয়ন ছাড়া নৌকা প্রতিকের বিপরীতে চেয়ারম্যান হওয়ার মতো অন্য দলের কোনো প্রার্থী নেই বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App