গরিব এবং মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৩৩ পিএম
দফায় দফায় যেন বেড়েই চলেছে চালের দাম। সরু চাল থেকে শুরু করে মোটা চাল কোনোটার দামই বাজারে স্থিতিশীল নয়। দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। এমতাবস্থায় গরিব এবং মধ্যবিত্তরা পড়েছেন বিপাকে। যাদের নুন আনতে পান্থা ফুরায় তারা যে কী অবর্ণনীয় কষ্টে দিনযাপন করছে তা স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা বেশ মুশকিল। বেশ কিছুদিন ধরে চালের এমন মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও এর যেন কোনো সমাধানই মিলছে না। সরকার বলছে এক কথা, কৃষক বলছে এ কথা আর মিল মালিকরা বলছে অন্যকথা; ফলে চাল নিয়ে চালবাজির যেন শেষ নেই।
বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০২০ সালে আভাস দিয়েছিল যে, সে বছরের শেষে প্রায় সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে, অথচ বাজারে সব ধরনের চালের দাম এখন বাড়তি। বাজারে নতুন চাল এলেও চালের দাম না কমায় নিম্ন আয়ের মানুষ বেশ কষ্টে দিনযাপন করছে। সরকার ইতোমধ্যে প্রায় কয়েক লাখ টন চাল বিদেশ থেকে আমদানি করলেও চালের দাম কমেনি। এ বিষয়ে সরকার বারবার দেশের চালের কোনো সংকট নেই বললেও কেন বাজারে চালের দাম কমছে না সে বিষয়ে স্পষ্টত কিছুই জানা যায়নি। অনেকে ধারণা করছে, করোনাকালে বিভিন্ন সহায়তা পাওয়ায়, কৃষকরা বাজারে এবার তেমন ধান বিক্রি করেনি ফলে মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে মিল মালিকদের সাফ জবাব, বাজারে ধান কম থাকায় তাদের ধান বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বিধায় চালও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার আমদানি করা চালের ওপর শুল্কহার কমানোর ঘোষণা দেয়ার পরও কেন চালের দাম কমছে না সে বিষয়ে সরকারকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। আমরা অতীতে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে একাধিক সিন্ডিকেটকে বাজারে কারসাজি করতে দেখেছি এবং এ বিষয়ে অনেক সিন্ডিকেটের হোতাদেরও পত্রিকায় নাম বেরিয়ে এসেছে।
এক্ষেত্রে তেমন কোনো সিন্ডিকেট বাজারে কাজ করছে কিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে। অনেক সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রচুর পরিমাণ চাল কিনে গোডাউনে লুকিয়ে রাখে, ফলে বাজারে চালের স্বল্পতা দেখা দেয় এবং চালের মূল্য বাড়তে থাকে। বর্তমানে চালের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তেমন কোনো অসাধু ব্যবসায়ীরা কাজ করছে কিনা সেটা তলিয়ে দেখতে হবে। সরকারকে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, ভাত হচ্ছে আমাদের নিত্যদিনের খাদ্য আর এই ভাতের জোগান দেয় চাল, চালের দাম বৃদ্ধি পেলেই এ দেশের বেশিরভাগ মানুষের ওপরই এর প্রভাব পড়ে, বিশেষ করে গরিব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়। এর বাইরে দেশের এক বিরাট প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় কয়েক কেজি চাল কিনে নিয়ে বাড়িতে ফিরে সংসার চালায় তাদের দুর্গতির সীমা থাকে না। এসব গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে সরকারকে যে কোনো মূল্যে বাজারের চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনবোধে চালের দাম কমানোর জন্য সরকারকে খোলাবাজারে গণহারে কম মূল্যে চাল বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে টিসিবি ছাড়াও আরো কিছু প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে, যারা দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে চায়। চালের দাম বাড়ছে কেন তা তলিয়ে দেখার জন্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের এখনই একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করা জরুরি এবং ওই কমিটি এ বিষয়ে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের রিপোর্ট এবং এ বিষয়ে করণীয় সরকারের কাছে পেশ করা দরকার। চালের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে সাধারণ জনগণের মনে সরকারের বিরুদ্ধে বিরূপ ধারণা জন্ম নেয়ার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দিলে চলবে না। অযৌক্তিকভাবে বাজারে চালের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই জনগণের মনে অসন্তোষ বাড়বে, ফলে আগে ভাগেই সরকারকে এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে হবে। আমরা চালের দাম একটি স্থিতিশীল অবস্থায় দেখতে চাই এবং এর দাম গরিব মানুষের হাতের নাগালে থাকবে, সেটাই প্রত্যাশা করি।
কলেজ শিক্ষক, ঢাকা।