×

জাতীয়

কারসাজিতে বাড়ছে দাম!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:১৯ এএম

কারসাজিতে বাড়ছে দাম!

ভোগ্যপণ্য। ফাইল ছবি

ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম সরকার

রমজান শুরুর দেড় মাস আগেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর নানা কারসাজি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণত রোজার সপ্তাহখানেক আগে সর্বোচ্চ বাজারমূল্য নির্ধারণ করে সরকার। এর আগেই দাম বাড়ালে বেশি মুনাফা করা যাবে। সে জন্যই নানা চালাকিতে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দফায় দফায় জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) হিসাবে গত এক বছরে দেশে সয়াবিন তেলে ২৪ দশমিক ৩২ শতাংশ ও পাম অয়েলে ২২ দশমিক ৮৪ শতাংশ দাম বেড়েছে। গত এক মাসে বোতলজাত তেলের দামই বেড়েছে কেজিতে ১০-১৫ টাকা। এ সময়ে বেড়েছে চাল, ডাল, চিনি, লবণসহ অন্যান্য জিনিসের দামও। এ নিয়ে নানা উদ্যোগ থাকলেও তার কোনোটিই তেমন কাজে আসেনি। দফায় দফায় বৈঠক করেও অসাধুচক্রের লাগাম টেনে ধরা যায়নি। সব মিলিয়ে ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. রায়হান। শান্তিনগর বাজারের তিনটি দোকানে ঘুরলেন, যদি তেলের দাম অন্তত ৫ টাকা কমে পাওয়া যায়। কিন্তু সফল হননি। এক বছরের ব্যবধানে ৪৫০ টাকার ৫ লিটারের ভোজ্যতেলের বোতল তাকে কিনতে হয় ৬৩০ টাকায়। শান্তিনগর বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শফিক জানান, সবজির দামও আগের তুলনায় কিছুটা চড়া। আগে মোটামুটি ৩০০ টাকার সবজি কিনলেই পুরো সপ্তাহ চলে যেত। এখন দাম বাড়লেও তিনি ব্যয় বাড়াতে পারেননি। তাই দুই পদের বদলে এক পদ দিয়েই দিন চালান।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন সরকারও। রমজান মাস সামনে রেখে ৬ পণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংক্রান্ত দর নির্ধারণ কমিটি। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১১৫ টাকা, বোতলজাত প্রতি লিটার ১৩৫ ও ৫ লিটার ৬৩০ এবং পামসুপার তেল প্রতি লিটার ১০৪ টাকায় বিক্রি হবে। অন্যদিকে ভোজ্যতেলের পাশাপাশি চিনি, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, ধনে, জিরা, আদা ও তেজপাতা- খুচরা পর্যায়ে এ পণ্যগুলোর দামও বাড়তে শুরু করেছে। এসব পণ্যের আকস্মিক লাগামহীন মূল্যে অনেক ক্রেতাই দিশাহারা। বাজারের এ অস্থিরতা দূর করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। কমিশনের যুগ্ম প্রধানকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। তবে এখনো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে। কবে নাগাদ কাজ শুরু করতে পারবেন, তা বলছেন না কমিশনের কেউই। ফলে অনিশ্চিতই রয়ে যাচ্ছে ভোজ্যতেলসহ ১৫টি নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণে সরকারি উদ্যোগের বাস্তবায়ন।

টিসিবির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, গত এক মাসের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। খোলা ও প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে কেজিতে দুই টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৬ টাকা, পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৪০ টাকা, মসুর ডাল কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা, দেশি রসুন কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২০ টাকা, দেশি শুকনা মরিচ কেজিতে ৮০ টাকা, আমদানি করা শুকনা মরিচ ২০ টাকা, হলুদ কেজিতে ১০ টাকা, তেজপাতা কেজিতে ৪০ টাকা বেড়েছে। এর আগে ভোজ্যতেলের বাজার সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কয়েকটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল ট্যারিফ কমিশন। প্রতিবেদনে ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে বিদ্যমান ভ্যাট মওকুফ এবং সরবরাহ ও খুচরা পর্যায়ে কমিশনের হার লিটারপ্রতি যথাক্রমে ৩ ও ৫ টাকা নির্ধারণ করা যেতে পারে বলে জানানো হয় সরকারকে।

দ্বিতীয় সুপারিশে বলা হয়, ভোজ্যতেলের ওপর থেকে অগ্রিম কর তুলে নিলে বাজারে ভোজ্যতেলের দামে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং দাম কমবে। তৃতীয় সুপারিশে আমদানি মূল্যে শতকরা হারের পরিবর্তে টনপ্রতি নির্দিষ্ট হারে ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়। কমিশন আরো বলছে, আমদানিকারকদের দুই পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি, অগ্রিম কর প্রত্যাহার এবং সরবরাহ ও খুচরা পর্যায়ে কমিশন যৌক্তিক করলে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১১০ টাকার মধ্যে রাখা যাবে। তবে এসব সুপারিশের কোনোটাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নেয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ জানান, ভোজ্যতেলসহ ১৫টি নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণের বিষয়ে ট্যারিফ কমিশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গাইডলাইন অনুসারে নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ পদ্ধতি প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিটি কাজ করছে। কমিটি তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করে বাজারে পণ্যের দাম যাচাই করে একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App