×

জাতীয়

শিক্ষক নেতার বিচার চেয়ে এমপির ‘ডিও’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৫৬ এএম

শিক্ষক নেতার বিচার চেয়ে এমপির ‘ডিও’

মিরপুরের সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনি

একসময় তিনি ছিলেন বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক সংগঠনের অর্থ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ভোল পাল্টে নৌকার সমর্থক বনে যান। কোনো ধরনের চোটপাট না করে নিজেই একটি শিক্ষক সংগঠন খুলে বসেন। এরপর দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে কিছু শিক্ষককে নিয়ে আন্দোলনে নামেন। নিজেই নিজের পদ ঘোষণা করে বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের ‘মুখপাত্র’ তিনি। এরপর জাতীয়করণের দাবিসহ শিক্ষা প্রশাসনের নানা ইস্যুতে সরকারবিরোধী কাজ শুরু করেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্বঘোষিত এই শিক্ষক নেতা রাজধানীর মিরপুরের সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনি। তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হওয়ার পর বিচার চেয়ে গত ১১ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী বরাবর ‘ডিও’ লেটার দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ মো. আসলামুল হক। এছাড়া করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার যেখানে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে সেখানে এই শিক্ষক নেতা তার স্কুল খোলা রেখে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রেখেছেন। এমন অভিযোগ পেয়ে রাজধানীর দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ গতকাল বুধবার প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনিকে থানায় ডেকে নিয়ে জেরা করেছেন। জানতে চাইলে ওসি তোফায়েল আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলেও সিদ্ধান্ত হাইস্কুলসহ আরো কয়েকটি স্কুলে ক্লাস-পরীক্ষা চলছে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনিকে ডেকে নিয়ে এসে মূল ঘটনা জানতে চেয়েছিলাম। প্রধান শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, দশম শ্রেণির সংক্ষিপ্ত সিলেবাস বিতরণের জন্য শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডাকা হয়েছিল। ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। এরপর আমি রনি সাহেব বলে দিয়েছি, কোনোভাবেই সরকারের নিয়ম ভাঙা যাবে না।

এদিকে নজরুল ইসলাম রনির বিচার চেয়ে গত ১১ জানুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্থানীয় সাংসদ যে ডিও লেটার দিয়েছেন তা ভোরের কাগজের কাছে এসেছে। ওই ডিও লেটারে সাংসদ আসলামুল হক লিখেছেন, আমার নির্বাচনী এলাকার মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনির বিরুদ্ধে ওঠা এমপিও জালিয়াতি, সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা ও জাতির পিতার ছবি অবমাননার বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ওই ডিও লেটারে সাংসদ আরো লেখেন, ১৯১৭ সালে মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুল প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমান প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনির কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি প্রায় ধ্বংসের পথে। ২০০০ সালের ১৪ মে মিরপুর জান্নাত একাডেমি হাইস্কুলের সৃষ্ট পদে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ওই সময়ে বিধি অনুযায়ী এমপিওভুক্তির সুযোগ না থাকলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে অবৈধ উপায়ে তৎকালীন জান্নাত একাডেমির অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের ইনডেক্স নম্বর জালিয়াতি করে এমপিওভুক্ত হন। পরে সিদ্ধান্ত হাইস্কুলে এসে প্রধান শিক্ষক হন এই বিএনপি নেতা। চারদলীয় জোটের আমলে শিক্ষক সমিতির নেতা সেলিম ভূঁইয়ার কমিটির অর্থ সচিবও ছিলেন। এছাড়া মোবাইল চুরির দায়ে জেল খাটা আসামি তিনি। ডিও লেটারে আরো লেখা হয়, আমার নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের গোপন বৈঠকের সময় ৩০ জন শিক্ষকসহ হাতেনাতে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রনি। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের কথাও বলা হয় ওই ডিও লেটারে।

জানতে চাইলে সাংসদ মো. আসলামুল হক গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, আমি বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ। আর এ কারণেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দিয়েছি। এক মাস আগে ডিও লেটার দিয়েছেন, মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি স্বচ্ছ, ক্লিয়ার। আমার কাছে কোনো স্বজনপ্রীতি নেই। এখন ওদের (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) দায়িত্ব। তিনি বলেন, আমার এখানে থেকে উল্টাপাল্টা কাজ কী করে বাস্তবায়ন করে তা আমি দেখব। অন্য এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা ঠেকাতে সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখেছে। আর সে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছে। এটাও আমি দেখব।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক নেতা ও মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনি বলেছেন, এসব বিষয় নিয়ে এমপির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারপরও তিনি ‘ডিও’ লেটার দিয়েছেন। এখন আমি কী করতে পারি? মোবাইল চুরির দায়ে জেল খেটে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনায় তদন্ত হয়েছে। কিন্তু জীবনে তো কখনো জেল খেটে আসিনি। বিএনপি সমর্থিত সেলিম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে শিক্ষক সংগঠন করলেও যত দিন সেলিম ভূঁইয়া শিক্ষক নেতা ছিলেন তত দিন তিনি ওই সংগঠনে ছিলেন। কিন্তু যে দিন থেকে সেলিম ভূঁইয়া বিএনপির পদধারী হয়েছেন সে দিন থেকেই তাকে ছেড়ে চলে এসেছেন দাবি করে নজরুল ইসলাম রনি বলেন, তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App