×

জাতীয়

ছাপাখানায় শেষ সময়ের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৪৪ এএম

ছাপাখানায় শেষ সময়ের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে

অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাইন্ডাররা। গতকাল রাজধানীর পুরান ঢাকার সুকলা দাস লেনের দৃশ্য -ভোরের কাগজ

করোনার ধাক্কায় পিছিয়ে যাওয়া বাংলা একাডেমির বইমেলা মাসখানেক পরেই শুরু হতে যাচ্ছে। পাঠকের হাতে চাহিদা অনুযায়ী প্রিয় বই পৌঁছে দিতে রাত-দিন কাজ চলছে রাজধানীর ছাপাখানাগুলোতে। চাপ সামাল দিতে এসব ছাপাখানায় শেষ সময়ের ব্যস্ততা তুঙ্গে। কাজ চলছে ২৪ ঘণ্টাই। নিয়োগ দেয়া হয়েছে বাড়তি কর্মীও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেলাকে ঘিরে কয়েক মাস আগে থেকেই বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে নীলক্ষেত, কাঁটাবন, আরামবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ছাপাখানাগুলোতে। যা করোনার কারণে অনেক পিছিয়ে গিয়েছিল। যদিও পুরান ঢাকার বাংলাবাজারই এর আসল ঠিকানা। এখানেই গড়ে উঠেছে শত শত ছাপাখানা। তৈরি হয়েছে বাঁধাইখানাও। ‘বই বাজার’ হিসেবে পরিচিত পুরো এ এলাকাই এখন কম্পোজ, প্রুফ, পেস্টিং, প্লেট, ফাইনাল- শব্দে মুখর। যা চলবে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চজুড়েই। রাজধানীর পুরান ঢাকার বাংলাবাজার, নয়াপল্টন-পুরানাপল্টন এলাকা, মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল, কাঁটাবন ও নীলক্ষেত এলাকার ছাপাখানা ঘুরে দেখা গেছে, মেলা উপলক্ষে নতুন বই ছাপাতে মালিক ও কর্মীদের ব্যস্ততার ধুম। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করছেন তারা। প্রতিটি ছাপাখানাতেই দেখা গেছে কাগজ ও কালির স্তূপ। সেখানে ছাপাখানা মেশিনের খটখট শব্দ মাতিয়ে রাখছে সকাল থেকে মাঝ রাত অবধি। এ যেন এক অন্যরকম উৎসবমুখর পরিবেশ। বলা যায় করোনার কারণে নভেম্বর ডিসেম্বরের নির্দিষ্ট সময়ের ব্যস্ততা পেরিয়ে গেলেও শেষ মুহূর্তে এসে হাসি ফুটিয়েছে মালিক ও শ্রমিকের মুখে। আর নির্ধারিত সময়ে পাঠকের হাতে তার প্রিয় বই পৌঁছে দিতে ছাপাখানার একপাশে চলছে প্রচ্ছদ প্রিন্টও। সব মিলিয়ে ছাপাযন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসছে সদ্য ছাপা হওয়া কাগজের বড় শিট। এগুলো বাঁধাই করার জন্য নেয়া হচ্ছে। বড় সিটগুলো কেটে বাঁধাইয়ের পর আকৃতি নিচ্ছে নতুন বইয়ে। এগুলো গুদামে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে এ বইগুলো নেয়া হবে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায়। জানতে চাইলে কাঁটাবন এলাকার প্রিন্ট গ্যালাক্সির স্বত্বাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার মো. শফিক আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, দীর্ঘ ৮ থেকে ৯ মাস প্রেস একেবারে বন্ধ থাকার কারণে নভেম্বর ও ডিসেম্বর থেকে বই ছাপার অর্ডার আসা কার্যত বন্ধই ছিল। ধুলোর আস্তর পড়েছে প্রেসে। যে কারণে এখন কাজের চাপ এত বেশি, জানুয়ারি থেকে দুই পালায় ২৪ ঘণ্টা প্রেস চালু রেখেছি। কর্মীরা পালাবদল করে কাজ করছেন। এর জন্য আলাদাভাবে জনবল নিয়োগ দিতে হয়েছে। আর যারা ওভারটাইম করছেন তারাও বেশি টাকা পাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এখন আনন্দমুখর পরিবেশে বই তৈরির কাজ চলছে। একই স্থানের শাহীন প্রিন্টার্সের মালিক মো. শাহীন বলেন, কাজের চাপ এখন বেড়ে গেছে, তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০-৭০ সেট করে বই ডেলিভারি দিচ্ছি। সব মিলিয়ে কাজের চাপ অনেক। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে কাজ শুরু করে মধ্য রাতে প্রেস বন্ধ করে বাড়ি যাই। ছুটির দিনেও খোলা রাখতে হচ্ছে। আর এ চাপ মেলা শুরু হওয়ার ১৫-২০ দিন পর্যন্ত থাকবে। একই প্রতিষ্ঠানের কর্মী হাসনাত বলেন, এ মৌসুমে সবসময় কাজের চাপ অনেক বেশি থাকে। যার কারণে আয়ও অনেক বেশি হয়। এতে বেশি কাজ করতেও আনন্দ লাগে। এ মৌসুমে আমাদের মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বাড়তি আয় হয়। কাঁটাবনের মা বাইন্ডিংয়ের মালিক ফারুক আহমেদ বলেন, করোনায় সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। অথচ আমি সারাবছর বিভিন্ন প্রকাশনীর কাজ করি। সারাবছর ১০ জন কর্মী কাজ করে। তারপরও এ সময়টাতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ কাজ হয়ে থাকে। ফলে অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করতে হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। বেহুলাবাংলা প্রেসের মালিক চন্দন চৌধুরী বলেন, বইমেলা এলেই কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম নয়। দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে। গ্রাহকদের চাহিদামতো বই প্রস্তুত করে ডেলিভারি দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে এক ধরনের চাপ হলেও আমাদের কাছে অনেক আনন্দের। কারণ এ মৌসুমে মালিক ও শ্রমিকরা বাড়তি টাকা আয় করতে পারি। আর এখন পিছিয়ে যাওয়া বইমেলার বই প্রস্তুত করার কাজ করতে করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফকিরাপুল এলাকায় জিন্নাত প্রিন্টার্সের মালিক লিয়াকত হোসেন বলেন, করোনার কারণে ফকিরাপুল ও আরামবাগ এলাকার প্রেস ব্যবসার পরিস্থিতি ভয়াবহ। গত বছর ঈদ ও বৈশাখ ঘিরে কোনো কাজের অর্ডারই আসেনি। এবার ইংরেজি বছরের কাজ ও সব শেষে বইমেলার কাজ পেয়ে কিছুটা আশার আলো আলো দেখছি। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি সূত্রে জানা যায়, বাংলাবাজার, সূত্রাপুর, গোপীবাগ, ফকিরাপুল, পুরানাপল্টন, নয়াপল্টন, নীলক্ষেত ও কাঁটাবনে বইমেলার কাজ চলছে। এ এলাকাগুলোয় প্রেসের সংখ্যা প্রায় দুই হাজারের মতো। আর প্রকাশক ব্যবসায়ীরা অক্টোবর-নভেম্বর থেকেই বই ছাপা শুরু করেন। করোনার কারণে তা বিলম্বিত হয়েছে। তবে শেষের দিকে ছাপাখানাগুলোয় চাপ বেশি থাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App