×

পুরনো খবর

সংস্কৃতির বিকাশে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:১০ পিএম

সংস্কৃতির বিকাশে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র
ঢাকাসহ সারাদেশের সিনেমা হলে এখন আর দর্শক সমাগম নেই। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক সিনেমা হল। অধিকাংশ দর্শক আজ চলচ্চিত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অথচ ষাট-সত্তরের দশকে বাংলা সিনেমার কী এক সুবর্ণ সময় ছিল! প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক জহির রায়হান এবং আলমগীর কবীর বেশ কিছু ক্লাসিকাল ছবি বানিয়ে দেশে-বিদেশে সম্মান কুড়িয়েছেন। জয় করেছেন দর্শক হৃদয়। রাজ্জাক, হাসান ইমাম, আনোয়ার হোসেন, কবরী, সুচন্দা, ববিতার মতো শিল্পীরাও অভিনয় প্রতিভার কম স্বাক্ষর রাখেননি। সত্যজিৎ রায়ও ববিতাকে দিয়ে ‘অশনি সংকেত’-এর মতো ছায়াছবি বানাতে সাহস করেছিলেন। এসব ছায়াছবি, অভিনেতা-অভিনেত্রীর কথা দেশের দর্শক আজো ভোলেনি। এরপর কেটে গেছে অনেক সময়। বর্তমান সময়ের ‘মাটির ময়না’, ‘জয়যাত্রা’র মতো ছবি এ দেশে তৈরি হয়েছে। তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলামের মতো ক’জন সর্টফিল্ম নির্মাতা তাদের কর্মে দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন, সম্মান কুড়িয়েছেন। বিশেষ শৈল্পিক গুণের অধিকারী অকালপ্রয়াত চলচ্চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ তো বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এক নতুন ধারার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘গেরিলা’র পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সফল নাট্যব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু আমাদের নিরাশ করেননি। তার গেরিলা ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ মোট ছয়টি পুরস্কার জিতে নেয়। ‘গেরিলা’ ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের সবটুকু উঠে না এলেও যুদ্ধকালীন রণাঙ্গনের কিছু দৃশ্য এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মমতা যেভাবে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশে নির্মিত অন্য কোনো চলচ্চিত্রে খুব কম দেখা গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের কিছু ছবি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে। কুড়িয়ে আনছে সম্মান। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের নায়ক-নায়িকা, ছবির কলাকুশলীরা হচ্ছেন পুরস্কৃত, সংবর্ধিত। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের বর্তমান অবস্থার উত্তরণের লক্ষ্যে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগী হওয়া জরুরি। প্রয়াত জহির রায়হান ও আলমগীর কবীরের মতো চলচ্চিত্রকার চলচ্চিত্র নির্মাণে যে ধারা শুরু করেছিলেন তার পথ ধরে বর্তমান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের এগিয়ে যেতে হবে। অশ্লীল ছায়াছবি নির্মাণ এবং ভিডিও পাইরেসি বন্ধ করতে সবার একাত্ম হতে হবে। উন্নত শিল্পমানসম্পন্ন সুস্থ ধারার ছায়াছবি তৈরি করতে শিল্প-সাহিত্য সংশ্লিষ্টদের হতে হবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। দেশের শিশু-কিশোরদের চরিত্র গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষামূলক শিশুতোষ ছায়াছবি নির্মাণে তৎপর হতে হবে। চলচ্চিত্র যে শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান বলিষ্ঠ মাধ্যম তা ছায়াছবি নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করতে হবে। এফডিসি ও ফিল্ম সেন্সর বোর্ডকে এ ব্যাপারে নিতে হবে বিশেষ দায়িত্বশীল ভ‚মিকা। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা বিশেষ জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকারের পর্যাপ্ত অনুদান প্রদান এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সময় প্রেক্ষাগৃহের টিকেট থেকে বিনোদন কর মওকুফ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি গুণী চলচ্চিত্র শিল্পী ও সংশ্লিষ্টদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিসহ রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভ‚ষিত করা হলে তা চলচ্চিত্র শিল্পের মানোন্নয়ন ও বিকাশে সহায়ক হবে। শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র চরিত্র গঠনেও রাখতে পারে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা। তাই আজকের বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাদের সামজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের শিল্প-সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে তৎপর হলে ক্রমে ভালো সিনেমা দেখার দর্শকও তৈরি হবে। সুস্থ বিনোদনের সুযোগ পেলে নতুন প্রজন্ম খারাপ পথে পা বাড়াবে না। চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালকসহ সিনেমা শিল্পের সঙ্গে জড়িত সব কলাকুশলীরা আর্থিক লাভবান হবেন। বিকশিত হবে আবহমান বাংলার সুস্থ সংস্কৃতির ধারা। লেখক, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App