×

জাতীয়

জঙ্গিদের আত্মসমর্পণে হট মেইলে মিলছে সাড়া

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:৫৯ এএম

জঙ্গিদের আত্মসমর্পণে হট মেইলে মিলছে সাড়া

প্রতীকী ছবি

 
বেশ কয়েকজন যোগাযোগ করেছেন মস্তিষ্কের আদর্শিক জায়গা নিয়ে কাজ করতে হবে গত ১ বছরে ৩৫১ জঙ্গি গ্রেপ্তার
অন্যান্য অপরাধ দমনের পাশাপাশি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) শুরু থেকেই সন্ত্রাসবাদ দমনে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিনিয়তই তাদের অভিযানে ধরা পড়ছে জঙ্গিরা। গত মাসেই ৩৪ জন জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের বিভিন্ন ইউনিটের হাতে। তবে শুধু গ্রেপ্তারই নয়, সন্ত্রাসবাদে যারা জড়িয়ে পড়েছেন জলদস্যুদের মতো তাদেরকেও সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে চায় পুলিশের এ এলিট ফোর্স। এরই মধ্যেই গত ১৪ জানুয়ারি ৯ জন তরুণ-তরুণীকে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করেছে এ বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ার পর যারা ভুল বুঝতে পেরেছেন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইছেন, তবে কীভাবে ফিরবেন বুঝতে পারছেন না তাদের যোগাযোগের জন্য সম্প্রতি একটি ই-মেইল হটলাইন চালু করা হয়। চালুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বেশ সাড়া মিলেছে বলে জানা গেছে। এদিকে এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অপরাধ বিশ্লেষকরাও। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক ভোরের কাগজকে বলেন, জঙ্গিদের একটি প্রখর আদর্শিক দিক থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক সাড়াশি অভিযানে জঙ্গিদের ধ্বংস বা সামর্থ্য নষ্ট করা সম্ভব, তবে মস্তিষ্ক থেকে আদর্শিক দিক নয়। আর তাই যারা ফিরে আসতে চাইছেন, তাদের মোটিভেশনাল দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। যেখানে ম্যানুয়াল ও প্রাযুক্তিক দুটি বিষয়ই থাকবে। জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে গত ১৮ জানুয়ারি ৎধনরহঃফরৎ@মসধরষ.পড়স-এ হটলাইন মেইল চালু করে র‌্যাব। চালুর সময় জানানো হয় ফৌজদারি বা ভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত নয় এমন যারা উগ্রবাদে জড়িয়েছেন, তাদেরকে মোটিভেশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু ধারায় ফিরিয়ে আনতেই র‌্যাবের এ উদ্যোগ। এ হটলাইন মেইলের মাধ্যমে পলাতক জঙ্গিরা র‌্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে তাদেরকে প্রথমে আত্মসমপর্ণের সুযোগ দেয়া হবে। এরপর তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হবে। আগ্রহীরা চাইলে তাদের নাম-পরিচয় গোপন রেখেও র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। এর আগেও গত ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানে নৃশংস জঙ্গি হামলার ঘটনার পর সাত জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করায় র‌্যাব। ডি-রেডিক্যালাইজেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রামটি সমন্বয় করছে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা। গোয়েন্দা শাখা সূত্র বলছে, বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বেশ কয়েকজন জঙ্গি আত্মসমর্পণের জন্য এরই মধ্যে র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। র‌্যাব তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। তবে ভিন্ন ভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের এ সদস্যদের নামে বেশ কিছু মামলা আছে। আত্মসমর্পণের শর্তে তারা মামলা থেকে অব্যাহতিও চেয়েছে। র‌্যাব এরই মধ্যে তাদের কাছ থেকে মামলার কাগজপত্র চেয়ে নিয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। এ বিষয়ে র‌্যাব আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ ভোরের কাগজকে বলেন, মাদক ও অবৈধ অস্ত্রের বিষয়ে র‌্যাব ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করলেও সন্ত্রাসবাদ থেকে আমরা কখনই দৃষ্টি সরাইনি। গত বছরই আমরা বিভিন্ন মতের ৩৫১ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছি। শুধু গত জানুয়ারি মাসেই গ্রেপ্তার হয়েছে ৩৪ জন। এ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে আসলে এদের ফিরিয়ে আনতে গ্রেপ্তারের চেয়ে ডি-রেডিক্যালাইজেশন জরুরি। এ থেকেই আমাদের এমন কর্মকাণ্ডের সূচনা। এরই মধ্যেই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে আমরা সুন্দরবন ও এর আশপাশের এলাকা দস্যুমুক্ত করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে আত্মসমর্পণে ইচ্ছুকদের এখন পর্যন্ত সংখ্যা কত, তা না জানালেও তিনি বলেন, আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। খুব একটা সময় অতিবাহিত হয়নি। আর সংখ্যা বেশি বা কম দুটি বিষয়ই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বলব এর মধ্যেই আমরা আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছি। বেশ কয়েকজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা তাদের অনুপ্রাণিত করছি। তাদের সঙ্গে কথা বলছি। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত বিপথে যাওয়া পুরুষদেরই মেইল এসছে বেশি। দেশের বাইরে অবস্থান করছে এমন কেউ এখনো যোগাযোগ করেনি। তবে সামাজিক আত্তীকরণে ফিরতে চায় অনেকেই। এক্ষেত্রে সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। র‌্যাবের এ মুখপাত্র বলেন, যেসব জঙ্গি ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তারাও আবেদন করতে পারবেন। তবে তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা তাদের আইনি সহযোগিতা করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App