×

পুরনো খবর

যোগ্যরা যেন সবাই ভর্তির সুযোগ পায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:০০ পিএম

যোগ্যরা যেন সবাই ভর্তির সুযোগ পায়

অলোক আচার্য।

করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈশি্বক শিক্ষাব্যবস্থা। থমকে গেছে পরীক্ষা, ক্লাসসহ সব কার্যক্রম। পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হওয়ায় ইন্টারমিডিয়েটে অটোপাসের মাধ্যমে ফল ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষ পদ্ধতিতে মূল্যায়নের মাধ্যমে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে গত বছরের চেয়ে জিপিএপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ শুরু হবে। পাসের সংখ্যা এবং জিপিএ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রতিযোগীও বেড়েছে। ফলে ভর্তিযুদ্ধেও অতিরিক্ত চাপ থাকবে। সেই চাপ সামলে যোগ্য শিক্ষার্থীকে নিতে হবে। শিক্ষার এই ক্ষেত্রটা এমন যে, এর পরপরই শিক্ষার্থী তার ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে। এমন একটা পরিস্থিতিতে অটোপাস দেয়া হয়েছে যখন এর কোনো বিকল্প ছিল না। অনেকেই এর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু সঠিক পদ্ধতি কী অর্থাৎ করোনার মধ্যে এর চেয়ে আর বেশি কী করার ছিল। ভালো ফল করা সব শিক্ষার্থীই পছন্দের আসনে ভর্তি হতে চায়। কিন্তু আসনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সবার মনের আশা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ যোগ্য শিক্ষার্থী এবার অনেক বেশি। ফলে তাদের তীব্র প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পছন্দের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে। এবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ২০টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় তাদের ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। যে নীতিমালা অনুযায়ী প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে কোনো ফি নেয়া হবে না। পরে যাচাইয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচিতরা ৫০০ টাকা আবেদন ফি দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এছাড়া রয়েছে গত কয়েক বছর ধরেই গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। কেন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে? এক সময় একজন শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবক দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে এভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রায় সময়ই নানা বিড়ম্বনার শিকার হন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, একই শিক্ষার্থীর একই তারিখে একাধিক পরীক্ষা থাকে। সে ক্ষেত্রে তাকে একটি পছন্দ করতে হয়। তাছাড়া যদি পরপর দুদিনও পরীক্ষা থাকে সে ক্ষেত্রে যাতায়াত পথ দীর্ঘ হলে পরীক্ষার্থী ক্লান্ত হয়ে যায়। এতে তার পরীক্ষার ওপরও প্রভাব ফেলে। ইতোপূর্বে যানজট অনেক ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। এসব কারণে জোর দাবি ছিল সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার। প্রতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই সময়টা কাটে ছাত্রছাত্রীদের টেনশনের ভেতর। কোথাও ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত তার মধ্যে এই দুশ্চিন্তা কাজ করে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়া, সেখানে থাকার চিন্তা- সব মিলিয়ে বেশ সংগ্রাম করতে হয় এ সময়। জীবনযুদ্ধ থেকে কোনো অংশে কম না এই ভর্তিযুদ্ধ। প্রতি বছর যে হারে পাসকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা তার থেকে কম। তারপর আবার রয়েছে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়, পছন্দের বিষয় নির্বাচন। সব মিলিয়ে বিশাল চাপ। উচ্চশিক্ষার জন্য তাই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। এই তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তারা নিজেদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়। কিন্তু তারা এই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়। এইচএসসি পাসের পর আবার শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম তোলার পালা। আলাদা আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে আলাদা আলাদা ফরম তুলতে হয়। ফর্ম কেনার সাধ্যও অনেক পরিবারের থাকে না। সেখানেও গরিব মেধাবীরা পিছিয়ে পড়ে। সময়ের দাবি ছিল গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া। এবার তার স্বপ্ন অনেকটা পূরণ হচ্ছে। এক সময় সবাই গুচ্ছ পদ্ধতিতেই ভর্তি পরীক্ষা নেবে বলে বিশ্বাস করি। তাছাড়া এই করোনাকালে যেখানে এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে অটোপাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখার প্রচেষ্টা ছিল, সেখানে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার উপায় সর্বোৎকৃষ্ট। তবে সব শিক্ষার্থী পাস করার ফলে এবং জিপিএ ৫ বৃদ্ধি পাওয়াতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। তাছাড়া যে শিক্ষার্থীরা জিপিএ ৫ পায়নি তারা প্রথম আবেদনের পর যদি তাদের আর সুযোগ না দেয়া হয় তাহলে অনেক মেধাবী বঞ্চিত হতে পারে। কারণ জিপিএ ৪ যারা পেয়েছে তারাও অনেকেই মেধাবী এবং জিপিএ ৫ পাওয়ার যোগ্য। কেবল অটোপাসের সিস্টেমে পড়ে তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বা বিষয়ে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া দুঃখজনক হবে। আশা করি আমরা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মতো একটি মহৎ কর্মযজ্ঞ দেখতে পারব এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির অবসান ঘটবে।

সাংবাদিক ও লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App