×

জাতীয়

যে ভালোবাসার শেষ নেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:১০ এএম

যে ভালোবাসার শেষ নেই

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা সরু

সবাই ভালোবাসি বলতে পারে। কিন্তু, ভালোবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা করতে পারে কজনাই বা। অপেক্ষাকে বলা হয় শুদ্ধতম ভালোবাসার একটি চিহ্ন। আর এ শুদ্ধতম চিহ্ন বুকে ধারণ করে ৩৯ বছর ধরে ভালোবাসার মানুষের জন্য অপেক্ষা করছেন একজন। কৈশোর, যৌবন পেরিয়ে এখন বৃদ্ধ। তারপরও ভালোবাসার মানুষের হাত ধরার অপেক্ষায় আছেন তিনি।

এ মানুষটির নাম সরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তার দেখা মিলবে। থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের বারান্দায়। ক্যাম্পাসের সবাই তাকে সরু ভাই বলেই ডাকেন। সরু ১৯৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। সেসময় থাকতেন জহুরুল হক হলের ২০৯ নম্বর কক্ষে।

তার গল্পের শুরুটা ছিল অন্য পাঁচটা গল্পের মতোই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ক্লাসে মন দেন সরু। তবে, ক্লাসের চেয়ে তার দৃষ্টি আরো বেশি আকর্ষণ করেছিল বেলা নামের একটি মেয়ে। প্রথম দিন থেকেই বেলার প্রতি অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে সরুর। কিন্তু গ্রামের লাজুক ছেলে সরু তাকে কিছু বলার সাহস পাচ্ছিলেন না। তবে, বেলার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ একদিন পেয়ে যান সরু। বেলা একদিন ক্লাসে তার খাতা ফেলে যায়। সে খাতা ফেরত দিতে গিয়েই প্রথম কথা হয় বেলার সঙ্গে। তারপর আস্তে আস্তে পরিচয়। একসময় বেলার সঙ্গে সরুর প্রেম হয়। ভালোই কাটছিল তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন।

তবে ভালো সময় তাদের দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষের দিকে বেলার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব আসে। সরু তখনো বেকার। বেলা সরুকে কিছু করতে বললেও সরুর পক্ষে কোনো চাকরি জোগাড় করা সম্ভব হয় না। বেলা গ্রামে চলে যায়। পরিবারের সিদ্ধান্তে বেলা বিয়ে করেন এক প্রকৌশলীকে। বিয়ের পরেই তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

বেলার বিয়েতে অবশ্য সরু গিয়েছিলেন। সেবারই বেলার সঙ্গে সরুর শেষ দেখা। বেলার বাড়ির জানালার লাল নীল আলোর ভিড়ে বেলাকে শেষবারের মতো দেখেন সরু। বেলা হয়তো সরুকে দেখেননি। একরাশ নীরবতায় সরু বেলার জানালা দিয়ে তাকে দেখেন। বেলাকে দেয়ার জন্য সরু একটা চিঠি লিখেছিলেন সেটা আর দেয়া হয়নি।

অনেকদিন গড়িয়ে গেছে। কেটে গেছে ৩৯ বছর। বদলে গেছে অনেক কিছুই। এখন ২০২১ সাল। তবে, বদলায়নি সরুর ভালোবাসা। সরু এখনো পড়ে আছেন তার ঠিকানা জহুরুল হক হলের বারান্দায়। শিক্ষার্থীরা কিছু খেতে দিলেই তার খাওয়া হয়। কোনো কোনোদিন অভুক্ত সরু পড়ে থাকেন হলের বারান্দায়।

কেন এত অপেক্ষা, এমন প্রশ্নের কোনো জবাব মেলে না সরুর কাছে। তবে, সরুর ছলছল চোখ ঠিকই বলে দেয় সরুর অপেক্ষার কারণ। বেলা এখন কোথায়, তা জানেন না সরু। তবে, মনেপ্রাণে এখনো বিশ্বাস করেন বেলা ঠিকই ফিরে আসবে। সুনীলের ৩৩ বছর পেরিয়ে গেলেও কেউ যেমন কথা রাখেনি, তেমনি সরুর ৩৯ বছর কাটলেও বেলা এখনো ফিরে আসেননি। তবে সরু জানে বেলা একদিন ঠিকই ফিরবে। বেলার কোলেই চোখ বুজবেন, এজন্যই তার এখনো অপেক্ষা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App