×

মুক্তচিন্তা

অসুস্থ বিনোদন বন্ধ হোক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৯:১৮ পিএম

অসুস্থ বিনোদন বন্ধ হোক

ফাইল ছবি

বিনোদন আমাদের ক্লান্ত মন এবং মস্তিষ্ককে স্বস্তি দেয়। আমাদের মনকে আনন্দিত-উৎসাহিত-উৎফুল্ল করে, নতুন কাজের প্রতি আগ্রহ জুগিয়ে দেয়। কিন্তু অসুস্থ বিনোদন ঠিক তার বিপরীত করে। অসুস্থ বিনোদন কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক আনন্দ দিলেও দীর্ঘসময়ে তা কাল হয়ে দাঁড়ায়। মস্তিষ্ককে করে ফেলে আসক্ত, মনকে করে ফেলে নিস্তেজ। বর্তমানে টেলিভিশন-ইউটিউব কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে যেসব বিনোদনমূলক ভিডিও-অডিও কিংবা স্থিরচিত্র দেখানো হয় তার বেশির ভাগই অশ্লীল এবং অমার্জিত। যেমন বলা যায়, মুভিতে হিরোকে আরো বেশি স্টাইলিশ এবং মনোরঞ্জক করে তোলার জন্য মদ বা সিগারেটের প্রমোট করা হচ্ছে। অবশ্য পর্দার নিচে লেখা থাকে, ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ তবুও কিছু দর্শক মুভি নামক অভ্যাস থেকে পুরোপুরি বের হতে পারে না। আর সেই মুভির হিরোর চরিত্রটা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অমার্জিত পথে ধাবিত হয়।

এ ছাড়াও বিভিন্ন টিভি সিরিয়াল, নাটক, ওয়েব সিরিজ বাস্তব এবং হাস্যরসাত্মক করার জন্য অশ্লীল ভাষায় গালাগালি, অকথ্য ডায়লগ ডেলিভারি এবং অশালীন বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে থাকে। এতে বিনোদন তো হয়, তবে সঙ্গে অশালীনতাও ছড়িয়ে পড়ে সমাজে, যা পরবর্তীতে ইভটিজিং এবং ধর্ষণের মতো ঘৃণিত কাজের জন্ম দেয়। সোশ্যাল মিডিয়া হচ্ছে অশালীনতার অন্যতম কারখানা। বিশেষ করে ফেসবুক-ইউটিউবে প্রায় সময়ই কিছু অশ্রাব্য ভাষার ভিডিও এবং অডিও ক্লিপ পাওয়া যায়, যা মেসেঞ্জার-হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। টেকনোলজি আমাদের জীবনকে যেমন সহজ এবং সাবলীল করেছে, ঠিক তেমনি আমাদের মানবতাকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে দিনকে দিন।

বর্তমান যুগে বিনোদনের আরেক নাম চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্র দেখেন না এমন লোক খুব কম পাওয়া যাবে এই বাংলায়। কিন্তু আফসোসের বিষয় সেই চলচ্চিত্র জগতেও এখন ঢুকে গেছে নোংরামি এবং অশালীনতা। চলচ্চিত্রের মতো বাংলা নাটকেও এসেছে পরিবর্তন। অথচ এই বাংলায় কলকাতার আগে নাটক সম্প্রচার শুরু হয় এবং নাটকের জন্য মিছিলও হয়েছিল, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল! হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত ‘কোথাও কেউ নেই’-এর মতো নাটক বাংলার ইতিহাসে এখনো দ্বিতীয়টি তৈরি হয়নি। তা ছাড়া আরো আছে- ‘সংশপ্তক’, ‘মাটির কোলে’, ‘জোনাকী জ্বলে’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘অয়োময়’ ও ‘বহুব্রীহি’।

১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র ‘অবুঝ মন’, ১৯৭৫ সালের ‘সুজন সখি’, ১৯৮০ সালে ‘ঘুড্ডি’, ১৯৮২ সালে নির্মিত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর প্রেম উপন্যাস অবলম্বনে ‘দেবদাস’, যা শুধু বাংলায় নয়, হিন্দি এবং উর্দুতেও নির্মিত হয়। অতঃপর ১৯৯৩ সালে বাংলা সিনেমা জগতের কিংবদন্তি সালমান শাহ ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ এবং ‘তোমাকেই চাই’ নামক দুটি চলচ্চিত্র উপহার দেয় বাংলা চলচ্চিত্রকে, যা এখনো মানুষের মনকে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আফসোসের বিষয়, সেই বাংলা চলচ্চিত্র কিংবা নাটকের কথা যা-ই বলি, উভয়েরই নাজেহাল অবস্থা। আধুনিকতার নামে অনুসরণ করা হচ্ছে বিদেশীয় সংস্কৃতি, অযৌক্তিক কন্টেন্ট, অশালীন গল্প, অমার্জিত কোরিওগ্রাফি। যার মাধ্যমে করা হচ্ছে বাংলা সংস্কৃতিকে অবমাননা। প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণেই যে কেউই এখন হয়ে যাচ্ছে নির্দেশক, অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং তৈরি করছে নিম্নমানের সি-গ্রেড চলচ্চিত্র, যা কুরুচি এবং কদার্য পূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইউটিউবের জন্য সেসব অশ্লীল চলচ্চিত্রের অংশবিশেষ বা নোংরা অংশ সহজেই ভাইরাল হয়ে যায়। যার ফলে বদনাম হচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্র।

বাংলা চলচ্চিত্র কিংবা নাটকের রয়েছে একটি সোনালি অতীত, যা এখনো বাংলার মানুষকে বিনোদন দিয়ে আসছে। তবে বর্তমান যুগের চলচ্চিত্র সেই সোনালি অতীতকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এক সময় বাংলার নায়কদের বিভিন্ন স্টাইল অনুসরণ করত বলিউডের অভিনেতারা। কিন্তু এখন হলিউড, বলিউডের ধার করা কন্টেন্ট দিয়ে তৈরি হচ্ছে বাংলা চলচ্চিত্র। সেই সঙ্গে নিয়ে আসছে বিদেশীয় সংস্কৃতি, পোশাক-আশাক, চাল-চলন ইত্যাদি। যা বাংলা চলচ্চিত্র কিংবা সেই সুস্থ বিনোদনকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিচ্ছে।

যদি অতি দ্রুত এসব অসুস্থ বিনোদন কিংবা বিদেশি সংস্কৃতি মিশ্রিত চলচ্চিত্র-নাটক-ওয়েব সিরিজ-ভিডিও ক্লিপ-অডিও ক্লিপ বন্ধ না হয় তবে অচিরেই হারিয়ে যাবে বাংলা চলচ্চিত্র-নাটক। বিনোদনের জন্য মানুষ ঝুঁকে পড়বে নোংরামির দিকে। এবং সেই নোংরামিকে অনুসরণ করে বাস্তব সমাজেও চালু হবে সেসব নোংরামি, যা সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ, সমাজের মানুষের জন্যও হুমকিস্বরূপ।

শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম।

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App