আর ৩ তলা ভাঙলেই অস্তিত্ব হারাবে বিজিএমইএ ভবন
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৪১ পিএম
বিস্মৃত হয়ে থাকবে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পের ‘ক্যানসার’ হিসেবে চিহ্নিত বিজিএমইএ ভবনটি
আর মাত্র ৩ তলা ভাঙলেই অস্তিত্ব হারাবে বিজিএমইএ ভবন/ছবি: ভোরের কাগজ
রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পের ‘ক্যানসার’ হিসেবে চিহ্নিত বিজিএমইএ ভবনটি আর কয়েক মাসের মধ্যেই পুরোপুরি অস্তিত্ব হারাবে/ছবি: ভোরের কাগজ
বিজিএমইএ ভবনটির পূর্বের ও বর্তমান অবস্থা/ছবি: ভোরের কাগজ
রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পের ‘ক্যানসার’ হিসেবে চিহ্নিত বিজিএমইএ ভবনটি আর কয়েক মাসের মধ্যেই পুরোপুরি অস্তিত্ব হারাবে। এরপর ক্রমেই বিস্মৃত হবে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বিশালাকার একটি নান্দনিক স্থাপনার কথা। এ পর্যন্ত ১৬ তলা ভবনের ১৩ তলা ভাঙ্গা হয়েছে। বাকি আছে ৩ তলা আর বেজমেন্ট। যদিও চুক্তি অনুযায়ী আরো আগেই কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনে প্রবেশের আগে সংযোগ কালভার্টের ফটকে ‘প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত’নোটিশ ঝুলানো হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে রয়েছেন এক যুবক। আলী হোসেন নামে ওই প্রহরী জানান, প্রতিদিন ৬০/৭০ জন শ্রমিক ভাঙ্গার কাজ করছেন। বড় হাতুরী, ইলেক্ট্রিক হ্যামার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি দিয়ে তারা কাজ করছেন। এভাবে চলতে থাকলে পুরো ভবনটি ভাঙ্গতে আরো ৩/৪ মাস লাগবে বলে জানান তিনি। ভেতরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বাইরে এসে জানান, করোনার কারণে শ্রমিক সংকটসহ কিছু সমস্যা রয়েছে। তবুও তারা দ্রুত কাজটি শেষ করতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।
[caption id="attachment_265348" align="aligncenter" width="864"]বিস্মৃত হয়ে থাকবে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পের ‘ক্যানসার’ হিসেবে চিহ্নিত বিজিএমইএ ভবনটি[/caption]
পরে পাশ্ববর্তী ফ্লাইওভারে উঠে সব মিলিয়ে ১০/১২ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা যায়। কারওয়ান বাজারের রেললাইনের পাশে মাছের ব্যবসা করেন সুমন মিয়া। তিনি জানান, প্রথম দিকে অনেক শ্রমিককে তারা কাজ করতে দেখতেন। কিন্তু এখন বাইরে থেকে দেখেই কাজে ধীর গতি চোখে পড়ে।
[caption id="attachment_265350" align="aligncenter" width="728"] রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্পের ‘ক্যানসার’ হিসেবে চিহ্নিত বিজিএমইএ ভবনটি আর কয়েক মাসের মধ্যেই পুরোপুরি অস্তিত্ব হারাবে/ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি ওই সময়ের গৃহায়ন ও পূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ভবন ভাঙ্গার কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তবে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় কিছুদিন পিছিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নছিরুল্লাহ তখন জানান, ৬ মাসের মধ্যে ভবনটি ভেঙ্গে সব কিছু সরিয়ে নেয়া হবে। এ জন্য কোনো অর্থ নেবেন না তারা। উল্টো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ১ কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করবেন। প্রথমে ভবনের কাঁচগুলো সতর্কভাবে সরিয়ে নিতে শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
[caption id="attachment_265349" align="aligncenter" width="696"] আর মাত্র ৩ তলা ভাঙলেই অস্তিত্ব হারাবে বিজিএমইএ ভবন/ছবি: ভোরের কাগজ[/caption]প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল উচ্চ আদালত এক রায়ে বিজিএমইএ ভবনকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করেন। রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন আদালত। এর বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ। ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে সেটি খারিজ হয়। এরপর ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিলের মধ্যে বিজিএমইএ ভবনটি সরিয়ে নিতে সময় দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। সময় পার হওয়ার পর ওই বছরের ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে রাজউক। পরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়ে ভবন ভাঙ্গার কাজ শুরু করা হয়।
[caption id="attachment_265352" align="aligncenter" width="746"] বিজিএমইএ ভবনটির পূর্বের ও বর্তমান অবস্থা[/caption]মূলত কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই সরকারি জমিতে ভবনটি গড়ে তোলে তৈরি পোষাক শিল্প মালিকদের সর্বোচ্চ সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি নিজেদের জন্য ৪টি ফ্লোর রেখে বাকি ফ্লোব দুটি ব্যাংকসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে। এছাড়া ভবনের ওপরের দুই তলা নিয়ে বিলাসবহুল ‘অ্যাপারেল ক্লাব’ করা হয়। সেখানে সংগঠনের সদস্যদের জন্য সুইমিং পুল, ব্যায়ামাগার, রেস্টুরেন্ট, সভাকক্ষ প্রভৃতি করা হয়।