×

মুক্তচিন্তা

মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ও এর ভবিষ্যৎ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৫৭ পিএম

একটি শান্তিপূর্ণ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুনরায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতার দখল নিয়েছে। ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এক বছরের জরুরি অবস্থা। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দেশটির একসময়ের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু কিসহ প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের। তাই দেশটির বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ কেন এই অভ্যুত্থান ঘটল বা এর ভবিষ্যৎই বা কী এবং নতুন সামরিক জান্তার চ্যালেঞ্জ-ই বা কী?

দীর্ঘ ৫০ বছরের সামরিক শাসনের পর মিয়ানমারে ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনটি ছিল কার্যত দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন।

নভেম্বরের ওই নির্বাচনে এনএলডি ৮০ শতাংশেরও বেশি ভোট পায়। কিন্তু ভোটের পর পরই জালিয়াতির অভিযোগ তোলে সামরিক বাহিনী। কেননা সেই নির্বাচনে সামরিক বাহিনী-সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটের খুব সামান্য অংশই পেয়েছে। নির্বাচনের এই ফলাফল সেনাবাহিনীকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এ ছাড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনী সংবিধান পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কায় ভীত-সন্ত্রস্ত। তাদের হাত ধরেই ২০০৮ সালে মিয়ানমারের নতুন সংবিধান গ্রহণ করা হয়। নতুন এই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে শুধু ৭৫ শতাংশ আসন রাখা হয় সাধারণ জনগণের জন্য, আর বাকি ২৫ শতাংশ সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত করা ছিল।

এনএলডি বা যে কোনো রাজনৈতিক দল যাতে বৈচিত্র্যময়, বহু জাতিগত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কখনো ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্যই এমন একটি সংবিধান প্রস্তুত করেছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এক্ষেত্রে এবার তাদের ভয় ছিল যদি সু কির নেতৃত্বাধীন এনএলডি সংবিধানটি বাতিল করে দেয়, তাহলে সামরিক বাহিনী ক্ষমতার একচ্ছত্র আধিপত্য হারাবে। সে কারণে তারা নির্বাচনকেই জালিয়াতিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে সেটাকেই হাতিয়ার করেছে সু কিকে হটানোর জন্য। যদিও বাস্তবিকপক্ষে সু কির এটি করা প্রায় অসম্ভব ছিল। অন্যদিকে বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধানের আর কয়েক মাস পরে অবসরে যাওয়ার কথা।

অবসরের পর তার পদবি কী হবে বা তিনি কোনো প্রশাসনিক সেক্টরে থাকতে পারবেন কিনা! এছাড়া রোহিঙ্গা নিধনের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যদি মিয়ানমার দণ্ডিত হয় তাহলে প্রথম সাজা হতো সেনাপ্রধানের। এসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত ছিলেন সেনাপ্রধান। এজন্য এটিও হয়তো অভ্যুত্থানের অন্যতম আরো একটি কারণ।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের জন্য বেশ কিছু বিষয় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকবে। বিশেষত, রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যে মামলা চলছে সেখানে সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার যেভাবে ভূমিকা পালন করতে পেরেছিল সেভাবে পারবে না সামরিক জান্তা সরকার। এটিকে হয়তো একটি চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে পশ্চিমা দেশগুলো। অন্যদিকে আরসার মতো মিয়ানমারের বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে।

যা সামরিক সরকারের জন্য বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া সেনা অভ্যুত্থানের জেরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিয়ানমার গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্বের। যদিও নিষেধাজ্ঞা মিয়ানমারকে খুব বেশি চাপে রাখতে পারবে না। এ ছাড়া ভারত, চীন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের জোট আসিয়ানের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো তাদের সদস্য মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানকে ‘অভ্যন্তরীণ’ ব্যাপার বলে বিবেচনা করছে। তবে মিয়ানমারের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট যে, বর্তমান সেনাপ্রধান দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষমতায় আসছেন। ফলে খুব সহসাই যে মিয়ানমার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App