×

জাতীয়

জেল খাটার আগে ছিনতাই পরেও ছিনতাই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০২:৩৩ পিএম

জেল খাটার আগে ছিনতাই পরেও ছিনতাই

র‌্যাবের হাতে আটক অপরাধীরা

কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ হোটেল বয় কেউবা বিয়ে বা পার্টির ডেকোরেশনের কাজের সাথে জড়িত। কিন্তু রাতের বেলা তারা হয়ে উঠেন ভয়ংকর ছিনতাইকারী। তারা ছিনতাইকৃত পিকআপ বা মাহেন্দ্র ট্রাকে চড়ে নির্জন এলাকা, ফাঁকা ফ্লাইওভার এলাকায় অবস্থান নিয়ে সাধারণ পথচারী, মোটরসাইকেল, মালবাহী যানবাহন থামিয়ে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করে আসছে।

চক্রটির দলনেতা শাওন আহম্মেদ জয় একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও সে তার ছিনতাই মিশন থামায়নি। বরং জেলে গিয়েও ডাকাত-ছিনতাই চক্র গুছিয়েছে। বেড়িয়ে আবার জড়িয়েছে ছিনতাই অপকর্মে। চক্রের প্রত্যেকটি সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের একাধিক মামলাও।

গত ২ ফেব্রুয়ারি এমনই একটি চাঞ্চল্যকর ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। চক্রটি দুজনকে ছুরিকাঘাত ও মারধরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে ২২ হাজার ডিমবাহী একটি পিকআপসহ ৫২ হাজার টাকা, চারটি মোবাইলফোন নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। পথচারীদের মাধ্যমে হাজী মো. রিপন ও চালক নূর মোহাম্মদ কোনো রকমে স্থানীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালে যান। ফিরে মামলা করেন।

ওই ঘটনা চাঞ্চল্য ছড়ালেও তারও আগে থেকে আরেক মামলায় ছায়া তদন্ত শুরু করে এই চক্রটির সংশ্লিষ্টতা পায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশ।

এরপর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে অস্ত্রসহ পেশাদার ছিনতাই-ডাকাত চক্রটির ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন, শাওন আহম্মেদ জয়, জাহিদুল ইসলাম, ইয়ামিন, হৃদয় ও বাবুল। এসময় তাদের হেফাজত হতে ছিনতাই করা এবং ছিনতাই-ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দুটি পিকআপ, চাপাতি ১ টি, ছুরি ৩ টি ও ১১ টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

বুধবার দুপুর ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, গত ২৮ জানুয়ারি ভোর সোয়া ৪টায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে দুই ব্যক্তিকে ৬/৭ জন ডাকাত একটি পিকআপ গাড়ি দিয়ে গতিরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোনসহ নগদ অর্থ ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।

ওই ঘটনায় চকবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলা গোয়েন্দা ডিবি লালবাগ বিভাগ ছায়া তদন্ত জানা যায় এই চক্রটিই ওই ছিনতাইয়ের ঘটনাতেও জড়িত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সদস্য। তারা রাজধানী এবং আশপাশের এলাকা থেকে পিকআপ বা ছোট মাহেন্দ্র ট্রাক ছিনতাই করে। ছিনতাইকৃত যানবাহনের মাধ্যমে রাত ১২টার পর তারা হয়ে উঠেন ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী। রাজধানীর মাহখালী, সাভার, শাহআলী, মিরপুরের গুদারা ঘাট, শেরেবাংলানগরসহ আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ এবং ভুলতা এলাকার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ছিনতাই ডাকাতি করে থাকে।

চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলার তদন্তে জানা যায়, ওই ডাকাতির ঘটনায় ৭ জন ডাকাত অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে উল্লেখিত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকী অভিযুক্তসহ এ চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

হাফিজ আক্তার বলেন, এই চক্রটি গত ২ ফেব্রুয়ারি নরসিংদী বেলাবো থেকে কামরাঙ্গীরচরগামী একটি ডিমবাহী পিকআপ ২২ হাজার ডিমসহও ছিনতাই করে। ছিনতাইকালে তারা দুজনকে দেশীয় অস্ত্রে আঘাত করে ফেলে রাস্তায় ফেলে ডিমসহ পিকআপটি নিয়ে পালিয়ে যায়।

গ্রেপ্তারদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি, দস্যুতাসহ অন্যান্য মামলা রয়েছে বলে উল্লেখ করে হাফিজ আক্তার বলেন, কিছুদিন আগে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় চক্রটির দলনেতো শাওন আহমেদ জয় জেলে গেছে। জেলে বসেই তার ডাকাতি-ছিনতাই দলের সদস্য সংগ্রহ করে। জেল থেকে বেড়িয়ে ফের ছিনতাই ডাকাতি কার্যক্রম শুরু করে। সর্বশেষ সে গত রাতে ফের গ্রেপ্তার হয়।

ডিএমপি গোয়েন্দা প্রধান বলেন, আমরা দেখেছি এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটলেও পুলিশি অভিযোগ হয় খুবই কম। আবার কোনো চক্র গ্রেপ্তার হবার পর বেশ অভিযোগ আসে। আমরা মহানগর এলাকাসহ এর আশপাশে এ ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হলে পুলিশকে জানান। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিয়মিত সিসিটিভি মনিটরিং করছি। তবে অভিযোগ না আসলে তো তদন্ত কাজও ব্যাহত হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App