যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ২৭টি আপিল শুনানি থমকে আছে
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:১৭ এএম
ফাইল ছবি
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা ২৭টি আপিল বছরাধিককাল ধরে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। করোনা ভাইরাসের কারণে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম প্রায় এক বছর বন্ধ থাকে। এ সময়ে দণ্ডপ্রাপ্তদের কোনো আপিলের শুনানি বা নিষ্পত্তি হয়নি। বর্তমানে ভার্চুয়াল এবং সরাসরি আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়েছে। আইনজ্ঞরা বলছেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বর্তমান পরিস্থিতিতেও এসব আপিলের শুনানি সম্ভব।
যুদ্ধাপরাধ বিচারের সর্বশেষ আপিল শুনানি হয় ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিলের শুনানি হয় সেদিন। কায়সারের আপিল আবেদনের শুনানি করে আদালত রায় দেয়ার জন্য ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেন। ওই দিন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৪ সদস্যের বেঞ্চ ৭৮ বছর বয়সি কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে কায়সার একই বছরের ৩০ অক্টোবর আপিল বিভাগে একটি রিভিউ আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনের শুনানি এখনো আদালতে মুলতবি রয়েছে। এছাড়া জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখায় গত বছরের ১৯ জুলাই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে তিনি রিভিউ আবেদন করেন। বর্তমানে সেটিও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে মোবারক হোসেন, মাহিদুর রহমান, ফোরকান মল্লিক, সিরাজ মাস্টার, খান আকরাম হোসেন, আতাউর রহমান, ওবায়দুল হক তাহের, শামসুদ্দিন আহম্মেদ, মহিবুর রহমান বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া, মো. শামসুল হক ওরফে বদরভাই, এস এম ইউসুফ আলী, সাখাওয়াত হোসেন, মো. মোসলেম প্রধান, মো. আব্দুল লতিফ, ইউনুছ আহমেদ, মো. আমির আহম্মেদ ওরফে আমির আলী, মো. জয়নুল আবেদীন, মো. আব্দুল কুদ্দুস, মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকির, মো. আকমল আলী তালুকদার এবং মো. ইসহাক শিকদার, আব্দুল জব্বারের আপিল আবেদন। গত ৮ বছরে আপিল বিভাগ সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আবেদনসহ এ পর্যন্ত মাত্র ৯টি
আপিল নিষ্পত্তি করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম ও জামায়াতে ইসলামীর আরেক নেতা আবদুস সোবহান মারা যাওয়ায় কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে তাদের করা ৩নটি আপিল বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ এর সংশোধনী আসে। সংশোধনীতে ৬০ দিনের মধ্যে সাজার বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তির বিধান রাখায় আশা করা হয়েছিল যে, সুপ্রিম কোর্ট মামলাগুলোর রায় দ্রæত দেবেন। কিন্তু তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদসহ আইনজীবীরা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করার বিধান কেবল একটি নির্দেশনা ছিল, বাধ্যতামূলক না।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে ট্রাইব্যুনালের দেয়া সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল দীর্ঘদিন ধরে শুনানি না হওয়াটা খুবই দুঃখজনক। বিচার না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার দিন দিন মারা যাচ্ছেন। তাহলে কী হবে এই বিচারের। এটা জাতি হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য। তিনি আরো বলেন, এখনো যুদ্ধাপরাধের অভিযুক্ত সংগঠনের বিচার শুরু করতে পারিনি। এমনকি পাকিস্তান হাইকমিশনকেও বিচারের মুখোমুখি আনতে পারিনি। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনা হচ্ছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। এখন শুধু পুরনো মামলার শুনানি চলছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যুদ্ধাপরাধ মামলার আপিল নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেব।