যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুততর করা হোক
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৪৪ পিএম
করোনার কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। গতকাল ভোরের কাগজে খবরে প্রকাশ, ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা ২৭টি আপিল বছরাধিককাল ধরে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। বিচার প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়ায় বিচারপ্রার্থী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বের কারণে সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখন আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়েছে। করোনা ইস্যু সামনে রেখে যুদ্ধাপরাধের বিচারকাজ থেকে দূরে সরে আসা কতটা প্রাসঙ্গিক। আমরা মনে করি, যুদ্ধাপরাধ মামলার আপিল নিষ্পত্তির উদ্যোগ দ্রুত নিতে হবে। না হলে একে নিয়ে রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব-বিবাদ প্রলম্বিত হতে থাকবে। তাই বিচার ও রায় কার্যকর করে এই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি খুব জরুরি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ২০১০ সালের ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২০১৩ সাল থেকে রায় দেয়া শুরু হয়। এরপর প্রতি বছরের প্রতিটিতে কোনো না কোনো মামলার রায় হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর গত প্রায় ১০ বছরে রায় হয়েছে ৪২টি মামলার। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৯৭। গড়ে বছরে রায় হয়েছে ৪টি করে মামলার। গত ১ বছরে কোনো মামলার রায় হয়নি। সর্বশেষ রায় হয়েছে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর। ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে চ‚ড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ১০টি মামলা। এর মধ্যে ৬টি রায় কার্যকর হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আব্দুল কাদের মোল্লা ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ ৬ জনের। আসামির মৃত্যুর কারণে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩টি মামলা। ১ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির রায় কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। সর্বশেষ কার্যকর হয়েছে ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ জামায়াতের মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায়। ঘোষিত রায়ের মধ্যে আপিল বিভাগে বর্তমানে বিচারাধীন আছে ২১টি মামলা। প্রায় ৩ বছর আপিল বিভাগে এই মামলাগুলোর কোনো শুনানি হয়নি। এসব মামলায় মৃত্যুদণ্ডের আসামি অন্তত ৩৩ জন। সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিল খারিজ করে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে একটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। মহামারি পরিস্থিতির কারণে ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার যেমন থমকে আছে, পাশাপাশি একই কারণে যেসব মামলার রায় হয়ে আপিল পর্যায়ে রয়েছে, সেগুলোও থমকে রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া জরুরি। এ বিচারে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করা। মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলোও গণহত্যার বিচারে অনন্য নজির স্থাপন করেছে, যা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অপ্রতিরোধ্য অঙ্গীকারের প্রতিফলন। প্রকাশ্য, স্বচ্ছ এবং অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সব ধরনের সুযোগ নিশ্চিত করে এ বিচারব্যবস্থা আগ্রহ ও নজর কেড়েছে বিশ^ সম্প্রদায়ের। আশা করছি, ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ চালিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন। তা না হলে গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।