×

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে সেনা ক্যু : প্রতিবাদে যোগ দিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৩:৪২ পিএম

মিয়ানমারে সেনা ক্যু : প্রতিবাদে যোগ দিলেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা

রাজধানীতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে জলকামান দিয়ে গরম পানি ছোড়ে পুলিশ

মিয়ানমারের শহর ও নগরগুলোতে টানা তৃতীয় দিনের মতো সেনা অভ্যুত্থান বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। প্রতিবাদ ও অসহযোগ আন্দোলন দিন দিন জোরদার হয়ে উঠছে। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে প্রতিবাদ মিছিলে শ্রমিক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে গেরুয়া পোশাক পরা বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও যোগ দিয়েছেন। অধিকাংশ স্থানেই শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ হলেও এ দিন রাজধানী নেপিদোতে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ মারমুখী হয়ে ওঠে। তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর জলকামান ব্যবহার করে। বিক্ষোভের উদ্যোক্তারা সেনাশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাতে জনসাধারণকে দলে দলে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাচ্ছেন। খবর রয়টার্স ও গার্ডিয়ানের।

রাজধানীতে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে জলকামান দিয়ে গরম পানি ছোড়ে পুলিশ। পুলিশের এই পদক্ষেপে কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। পুলিশের এমন তৎপরতা সত্ত্বেও বিক্ষোভ চালিয়ে যান আন্দোলনকারীরা।

ইয়াঙ্গুনের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে ভিক্ষুরা সামনের সারিতে থেকে প্রতিবাদ সমাবেশের নেতৃত্ব দেন। সু কির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) লাল ব্যানারের পাশাপাশি মিছিলে বহুরঙা বৌদ্ধ পতাকাও তাদের হাতে শোভা পায়।

মিছিলের একজনের হাতে উঁচু করে ধরা এক কাগজে লেখা ছিল, ‌‘আমাদের নেতাদের মুক্তি দাও’, ‘আমাদের ভোটকে শ্রদ্ধা কর’, ‘সেনা অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান কর।’ অন্য সাইনগুলোতে লেখা ছিল ‘গণতন্ত্র রক্ষা কর’, ‘স্বৈরতন্ত্রকে না বল’। অনেক বিক্ষোভকারীর গায়ে ছিলো কালো পোশাক।

আগের দিন মিয়ানমারজুড়ে সেনা শাসন বিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে ‘গেরুয়া বিপ্লবের’ পর এটি ছিল সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। ‘গেরুয়া বিপ্লব’ মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সংস্কারের গতি বাড়াতে ভূমিকা রেখেছিল।

জান্তা সরকার সব সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও আন্দোলনকারী থিনজার মং ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে ফেসবুকে তার অনুসারীদের প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‌ইয়াঙ্গুনের সব এলাকার মিছিলকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে আসুন ও জনগণের সমাবেশে যোগ দিন।

দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর ডাউইয়ে কয়েক হাজার মানুষ সেনা শাসন বিরোধী মিছিল করেছে। উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন রাজ্যের রাজধানী মায়িতকিনায়  সারা শরীর কালো পোশাকে ঢেকে জান্তা বিরোধী বিক্ষোভ করেছে সু কি সমর্থকরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ পর্যন্ত যতো প্রতিবাদ হয়েছে সবই ছিল শান্তিপূর্ণ। তবে রোববার রাতে ইয়াঙ্গনের রাস্তায় সামরিক বাহিনীর একটি ট্রাকবহরকে  টহল দিতে দেখা যায়, এ সময় কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল ।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে এসব প্রতিবাদের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

সেনা সরকার রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনব্যাপী ইন্টারনেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল। দুই জন আন্দোলনকারী তাদের ফেসবুকে পেজে জানান, পুলিশ তাদের খোঁজে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে, কিন্তু তখন তারা বাড়িতে ছিলেন না এবং তারা এখনও মুক্ত আছেন।

সেনাশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভের পাশাপাশি দেশটিতে অসহযোগের ডাক দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। প্রথমে অসহযোগ শুরু করেন চিকিৎসকেরা। পরে শিক্ষকসহ অন্য পেশাজীবী ও সরকারি কর্মচারীরা এ অসহযোগে যোগ দেন। অসহযোগের প্রতি সমর্থন দিন দিন জোরালো হচ্ছে। প্রবীণ আন্দোলনকারী মিন কো নায়িং বলেন, ‌সব বিভাগের সরকারি কর্মচারীদের সোমবার থেকে কাজে যোগ না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি আমরা। ১৯৮৮ সালে মিন কো নায়িং ও তার সঙ্গীদের দেখানো কৌশলে শুরু হওয়া বিক্ষোভই সু কিকে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এনে দিয়েছিল।

আন্দোলন পরিস্থিতি নিয়ে মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টমাস অ্যান্ড্রুজ এক টুইটে বলেছেন, ১ ফ্রেবুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। সেনাশাসনের বিরুদ্ধে ও আটক রাজনীতিকদের মুক্তির দাবিতে মিয়ানমার জেগে উঠেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App