×

রাজনীতি

খালেদা জিয়াকে মুক্তি করতে রাজপথ দখলে নিতে হবে: গয়েশ্বর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০২:৫৬ পিএম

খালেদা জিয়াকে মুক্তি করতে রাজপথ দখলে নিতে হবে: গয়েশ্বর

রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির সমাবেশ। ছবি: ভোরের কাগজ।

বিএনপি চেয়ারপারনসন বেগম খালেদা জিয়াকে শাস্তির নামে অপমান করা হয়েছে এমন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, তিনি কোনো অন্যায় করেননি। তিনি কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। তার সম্পদের হিসাব দিয়েছিল‌। তারপরও কেনো তাকে কারাগারে দেয়া হল ? কারণ, একটি বিদেশের তাবেদারী করতে হলে খালেদা জিয়া মুক্ত থাকতে পারে না। ‌খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে দেশে গণতন্ত্রের নেতৃত্বের মুক্তি হবে।

সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দির তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

গয়েশ্বর বলেন, গণতন্ত্রহীন রাষ্ট্র তৈরি করতে গেলে তিনি বাইরে থাকতে পারেন না। বাংলাদেশে দুর্নীতির অভয়ারণ্য তৈরি করতে হলে খালেদা জিয়াকে জেলে থাকতে হয়।

আল জাজিরা টিভি চ্যানেল দেখতে চাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কখনো আল জাজিরা টিভি চ্যানেল দেখতে চাইনি। এখন আলজাজিরা দেখতে হচ্ছে কেনো? আল জাজীরা টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে যা প্রকাশ করা হয়েছে বাংলাদেশের দুর্নীতির চিত্রের এক হাজার ভাগের এক ভাগ। সরকারের স্বভাব সুলভ ভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে প্রতিবাদ জানায়। তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আপনাদেরকে প্রমাণ করতে হবে আলজাজিরার প্রতিবেদন সত্য নয়। আজকে বাংলাদেশের জনগণ দেশের দুর্নীতির কাহিনী জানে। এই দুর্নীতিগ্রস্ত দেশকে যদি বাঁচাতে চান, যদি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চান তাহলে অলিখিত যুদ্ধে শামিল হতে হবে। এই যুদ্ধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হবে। এই যুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তুলে না ধরা, দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী থেকে মুক্তি করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে দেশে গণতন্ত্রের নেতৃত্বের মুক্তি হবে। তিনি (খালেদা জিয়া) মুক্তি হলে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিদেশের মাটিতে থাকতে হয় না। সে (তারেক রহমান) বাংলাদেশের মাটিতে এসে জনগণকে নেতৃত্ব দিতে পারে।

তিনি বলেন, আমি বারবার বলছি, আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করে রাজপথ ছাড়বো না। আমাদের কথায় নয় কাজেই প্রমাণ করতে হবে। রাজপথ আমাদের দখলে নিতে হবে। রণাঙ্গনের সকল পথ ঘাট জনগণের দখলে নিতে হবে।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই সরকারকে ঘর থেকে বের হওয়ার পথ তৈরি করতে হবে। ঘরে বসে বসে তারা প্রতিদিন (সরকার) আবোল তাবোল কথা বলছে। অবজ্ঞা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে মানুষকে কথা বলা তাদের রোগে পরিণত হয়েছে। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন হয় না, তাদের জনগণের সমর্থন লাগে না।

গয়েশ্বর বলেন, জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছিলেন স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করে ছিলেন একটি গণতান্ত্রিক দেশ দেখার জন্য। সেই গণতান্ত্রিক দেশে জিয়াউর রহমানের সৈনিক, খালেদা জিয়ার অনুসারী ও তারেক রহমানের সহকর্মী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব জনগণের পাশে থাকে, অধিকার ফিরিয়ে আনা। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে কথা বলে লাভ হবে না। এটা একটা প্রতারক কমিশন। এরা প্রতারণা করছে জনগণের সঙ্গে। ঠাট্টা মশকরা করছে জনগণের সঙ্গে। শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য অন্যায়ভাবে যা খুশি তা করছে।

গয়েশ্বর চন্দ্র নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, করোনা কে উপেক্ষা করে আপনারা যারা রাস্তায় বেরিয়েছেন এই জীবনটাকে অর্থবহ করার জন্য, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য, আমরা সেই যুদ্ধে শামিল হই।

আল-জাজিরা টেলিভিশন বাংলাদেশ নিয়ে তথ্যচিত্র প্রচারিত হয়েছে তা মিথ্যা প্রমাণ করতে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। আব্বাস বলেন, এই সরকারকে বলতে চাই, আপনারা প্রমাণ করুন আল-জাজিরায় যা কিছু আছে সব মিথ্যা। আমরা আপনাদের সমর্থন দিবে। আজকের এই দিনে অন্যায়ভাবে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করা হয়েছিল।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, আমরা এতই দুর্ভাগা, এতই ব্যর্থ যে তোদেরকে মুক্ত করার কোন ব্যবস্থা করতে পারি নাই। তবে সারা জীবন খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকবে এটা সত্যি নয়। আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করেছে আমাদের বন্ধন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। বিএনপি'র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। খালেদা জিয়াকে অন্যায় ভাবে কারাবন্দি করা হয়েছে। তাকে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ কোরার মামলা দেওয়া হয়েছে। আত্মসাৎ করার ঘটনা প্রমাণ করতে পারে নাই। দুই কোটি টাকার জন্য খালেদা জিয়ার যদি সাজা হয়। দুই কোটি টাকা তো ৮ কোটি টাকা হয়ে গেছে তার জন্য খালেদা জিয়ার পুরস্কার কি হবে ? জানতে চাই।

তিনি আরও বলেন, যখন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাবন্দি ছিলেন তখন আমরাও কারাবন্দি ছিলাম। তখন আমরা অনেকেই জেলে ছিলাম। সে সময় তারেক রহমানও জেলে ছিলেন। সুস্থ তারেক রহমানকে জেলে নিয়ে যাওয়া হলো, অসুস্থ তারেক রহমান ফেরত আসলেন। সে সময় আমার সঙ্গে কারাগারে এক রুমে ছিলো আমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বন্দী অবস্থায় আমাদের সঙ্গে আরও ছিলেন ওবায়দুল কাদের, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ, শেখ সেলিমের মত আওয়ামীলীগের বড় বড় নেতারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন। সকালেই বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ছিলেন। ওবায়দুল কাদের সাহেব এখন লম্বা লম্বা কথা বলেন।এখন দেখা যাচ্ছে সেই মামলাগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও নাই। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ সকলের মামলা চলমান আছে। এত বড় অন্যায় অপরাধ করে যাচ্ছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব,সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোর্তাজুল করিম বাদরু, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, কৃষকদলের সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।

এছড়া প্রতিবাদ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহ-সভাপতি নবী উল্লাহ নবী, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, উত্তরের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আঞ্জু, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নেতা কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ, তাঁতী দলের ড.কাজী মনিরুজ্জামান মনির, ছাত্রদল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App