×

জাতীয়

পাচারের অর্থ ফেরাতে আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:১২ এএম

পাচারের অর্থ ফেরাতে আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক
পাচারের অর্থ ফেরাতে আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক
পাচারের অর্থ ফেরাতে আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক
পাচারের অর্থ ফেরাতে আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক
পাচারের অর্থ ফেরাতে আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক
পাচারের অর্থ ফেরাতে আইনি প্রক্রিয়ায় দুদক

দেশ থেকে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দপ্তরের ড্রাইভার কিংবা পিয়নের মতো কর্মচারীরাও। বাদ যাননি রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কিংবা অন্যান্য কর্তা ব্যক্তিরা। সম্প্রতি উচ্চ আদালতে জমা দেয়া দুদকের প্রতিবেদনে এমনি তথ্য উঠে এসেছে। এ রকম প্রায় শতাধিক ব্যক্তির পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনি প্রক্রিয়ায় এগুচ্ছে দুর্নীতিবিরোধী স্বাধীন সংস্থাটি। তারই অংশ হিসেবে পাচার করা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে পাঠানো হয়েছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিকোয়েস্ট (এমএলএআর)। একই সঙ্গে দেশের বাইরে পালিয়ে থাকা আলোচিত পি কে হালদারসহ দুর্নীতিবাজদের ফেরাতে ইন্টারপোলের সাহায্য চেয়েও আবেদন করা হয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, গত এক দশক ধরে দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে উপার্জিত কোটি কোটি টাকা কৌশলে বিদেশে পাচার করে সেখানে ব্যবসাবাণিজ্য গড়ে তুলেছেন, ঘরবাড়ি করে বিলাসী জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ১ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি) অর্থের সন্ধান বেরিয়ে আসায় অর্থ পাচারের বিষয়টি আবারো ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। এর মধ্যে সব চেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, সিঙ্গাপুরে সন্ধান পাওয়া বিপুল পরিমাণ এই অর্থের মালিকানা দাবি করছে না কেউ। এর মধ্যে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা পুরো দেশেই আলোড়ন তৈরি করেছে।

এছাড়া সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কানাডায় অর্থ পাচারের ২৮টি ঘটনার তথ্য পেয়েছে সরকার। তার এই বক্তব্যের পর অর্থ পাচারের বিষয়টি নতুন করে সচেতন মহলে আলোচনার খোরাক জোগায়। শুরু হয় টাকা পাচারের বিচার-বিশ্লেষণ। তাতে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে কত টাকা বিদেশে পাচার হয় সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য কোথাও রেকর্ড নেই বলে জানা যায়। তবে গত বছরের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি গবেষণায় উঠে এসেছে, শুধু ২০১৫ সালে বাণিজ্য কারসাজির মাধ্যমে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বিদেশে পাচার হয়েছে। জিএফআইর তথ্য মতে, গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা। টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার এ সংক্রান্ত তালিকায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। দুদকের পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক ও উপসহকারী পরিচালক পর্যায়ের অন্তত ২২ জন কর্মকর্তা অর্থ পাচারসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করছেন।

সম্প্রতি পি কে হালদারের ঘটনায় দায়ের করা মামলার শুনানিতে নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ পাচারকারীদের একটি তালিকা প্রতিবেদন আকারে উচ্চ আদালতে দাখিল করে দুদক। সেই প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অর্থপাচারের অপরাধের ৪৭টি মামলায় আদালতে চার্জশিট দেয়ার পাশাপাশি আরো ৮৮টি মামলা তদন্ত করছে দুদক। ৮৮ মামলার মধ্যে ৪১ মামলায় অভিযুক্তরা হলেন বিসমিল্লাহ গ্রুপের কর্ণধার খাজা সোলায়মান ও তার স্ত্রী, বেসিক ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামসহ কয়েকজন, জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ, ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান বাদল, ঢাকা ট্রেডিংয়ের কর্ণধার টিপু সুলতান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বহিষ্কৃত কর্মচারী আবজাল, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান ও তার ছেলে, এনটেক্সের কর্ণধার ইউনুস বাদল, এমএম ভেজিটেবলের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন, এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক, ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান বাবুল চিশতি ও তার ছেলে, ভোলার এমপি হাফিজ ইব্রাহিম, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি পাপুল ও তার স্ত্রী সেলিনা, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাঈল চৌধুরী সম্রাট, অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, যুবলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, ঠিকাদার জিকে শামিম, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, শাহরিস কম্পোজিট টেক্সটাইলের এমডি খাজা সোলেমান আনোয়ার, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল আলম, এনসিসি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান, তার স্ত্রী শিল্পী আক্তার, পুলিশ পরিদর্শক ফিরোজ কবীর, আমানত স্টিলের এমডি হারুনুর রশীদ, ডিএমপির হুমায়ুন কবীর বাতেন, সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুস সালাম, সাবেক সহকারী সচিব শাহরিয়ার মতিন, ইলিয়াস ব্রাদার্সের এমডি শামসুল আলম, ইটিভির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, সাবেক এমডি আশরাফুল আলম, সাবেক কর্মকর্তা ফজলুর রহমান সিকদার, টেলিটকের সাবেক ম্যানেজার শাহ মোহাম্মদ যোবায়ের, প্যারাডক্স ফার্মাসিউটিক্যালসের সাবেক এমডি রকিবুল হাসান রাজন, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, লর্ড ভিশনের চেয়ারম্যান হোসাইন মাহমুদ রাসেল, এএমসি টেক্সটাইলের সাবেক চেয়ারম্যান চাঁদ মিয়া, তার স্ত্রী রাশেদা খাতুন, আইন কমিশনের ড্রাইভার শামসুল আলম এবং এমদাদ হোসেন। এসব অর্থ তারা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়া, ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন।

দুদকের একজন পরিচালক বলেন, শতাধিক ব্যক্তির পাচার করা টাকা দেশে ফেরাতে এরই মধ্যে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এমএলএআর পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে দুদক থেকে পাঠানো অর্ধশতাধিক চিঠির জবাব পাওয়া গেছে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শুধু মামলাই নয়, বিদেশ থেকে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এখন জোর দিয়েছে কমিশন।

এদিকে সুইস ব্যাংকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধার কার্যক্রমের কৌশল নির্ধারণের জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন দুর্নীতি দমন কমশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একজন করে প্রতিনিধি। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন কার্যক্রম প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স ওই কমিটি গঠন করে। এই কমিটিও পাচারের অর্থ ফেরানোর বিভিন্ন কর্মকৌশল নির্ধারণে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

তবে এ বিষয়ে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি কাজ করছে সত্য। কিন্তু এ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যে কারণে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। দুদক এককভাবে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নিচ্ছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, এ ক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষ থেকে বিএফআইইউ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে অবস্থানরত দেশীয় দূতাবাসগুলোকে দুদককে সহযোগিতা করতে ইতোমধ্যে জরুরি নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৪ জানুয়ারিও অর্থ পাচারকারীদের পরিচয় জানতে চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফের চিঠি দেয় দুদক।

এ বিষয়ে বিএফআইইউর একজন কমকর্তা বলেন, আইনগতভাবে অর্থ পাচারবিষয়ক সব তথ্য বিএফআইইউকে দেশের সব সংস্থা দিতে বাধ্য। কিন্তু নিজ উদ্যোগে ব্যাংক ছাড়া কেউ দেয় না। সব ব্যাংকও দেয় না। বিএফআইইউকে তদন্ত করে এগুলো বের করতে হয়। যে কারণে অনেক সময় লাগে। সবার সহযোগিতা থাকলে কাজটি আরো দ্রুত হতো। এখানে কাজের সমন্বয় বাড়াতে হবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পাচার করা অর্থে বিদেশে (কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরসহ) বিলাসবহুল বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন এমন বাংলাদেশিদের পরিচয় জানতে চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। তারা স্ব স্ব এজেন্সির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের জানাবে। এটি কমিশনের নিয়মিত কাজের অংশ বলেও তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কঠিন হলেও পাচার করা টাকা ফেরানো সম্ভব। তবে হয়তো একটু সময় লাগতে পারে। এজন্য এর দায়িত্বে থাকা সব সংস্থাকে লেগে থাকতে হবে। আইনি প্রক্রিয়াগুলো আইনিভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সেন্ট্রাল ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংকের যোগাযোগ বাড়াতে হবে এবং এটা হঠাৎ না করে অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া টাকা ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত সংস্থাগুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সংস্থাগুলোকে অযথা বিলম্বিত প্রক্রিয়া পরিহার করতে হবে। তাছাড়া রাজনৈতিকভাবে যদি সিদ্ধান্ত হয়, পাচার করা টাকা ফেরানো হবে, তাহলে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনা খুব বেশি কঠিন হবে বলে মনে করি না। এখন বিশ্বব্যাপী মানিলন্ডারিং আইন খুব কঠোর। একে কাজে লাগিয়ে পাচার করা টাকা ফেরানো সম্ভব।

পাচারের টাকা ফেরানো সম্ভব: ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ

অর্থ পাচার ও পাচারের অর্থ ফেরানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কঠিন হলেও পাচার করা টাকা ফেরানো সম্ভব। তবে হয়তো একটু সময় লাগতে পারে। এজন্য এর দায়িত্বে থাকা সব সংস্থাগুলোকে লেগে থাকতে হবে। আইনি প্রক্রিয়াগুলো আইনিভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সেন্ট্রাল ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংকের যোগাযোগ বাড়াতে হবে এবং এটা হঠাৎ হঠাৎ না করে অব্যাহত রাখতে হবে।

টাকা ফিরিয়ে আনাসংক্রান্ত সংস্থাগুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সংস্থাগুলোকে অযথা বিলম্বিত প্রক্রিয়া পরিহার করতে হবে। তাছাড়া রাজনৈতিকভাবে যদি সিদ্ধান্ত হয় যে, পাচার করা টাকা ফেরানো হবে, তাহলে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনা খুব বেশি কঠিন হবে না। এখন বিশ^ব্যাপী মানি লন্ডারিং আইন খুব কঠোর। একে কাজে লাগিয়ে পাচার করা টাকা ফেরানো সম্ভব।

প্রয়োজন সদিচ্ছা ও ধারাবাহিকতা: ড. ইফতেখারুজ্জামান

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার না হলে দেশের অর্থনীতিতে কোনো না কোনোভাবে ভূমিকা রাখে। কিন্তু যখনই এ অর্থ বিদেশে পাচার হয়, তখন এটি দেশের অর্থনীতিতে কোনো ভূমিকা রাখে না, বরং দেশের অর্থনীতির চাকাকে ক্রমান্বয়ে স্থবির করে দেয় এবং দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতির ভিত্তির জন্য অশনি সংকেত হিসেবে কাজ করে। যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধ করা সরকারের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে, এতদিন দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচারের অভিযোগ সত্য। সরকারি কর্মকর্তারাও অনেকে অর্থপাচারে জড়িত। তারা প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে পড়াশোনা বা চিকিৎসাসহ নানা কারণে বিদেশ যাতায়াত করেন। পাচারের সেটা একটা অন্যতম মাধ্যম।

তিনি বলেন, সরকারি খাতে যে অনিয়ম দুর্নীতি হয় তাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকে। এছাড়া সরাসরি ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তো অনেকের বিরুদ্ধে আছেই। সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও চোরাচালানকারী, ব্যবসায়ী, গার্মেন্ট মালিক, শিল্পপতি ও পুঁজিলুটেরা রাজনীতিবিদরা বিদেশে অর্থপাচার করছে। তাছাড়া বাংলাদেশে থাকা বিদেশিরাও অর্থপাচার করছেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, বছরে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পাচার হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিদেশে বৈধ পথে অর্থ নেয়ার যে সীমারেখা আছে, তার তুলনায় অর্থপাচার হচ্ছে অনেক গুণ বেশি। অবৈধ পথে শুধু হুন্ডির মাধ্যমেই বিশাল অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশিদের অনেকের অর্থপাচারের মাত্রা বেড়ে চলেছে এবং পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিকভাবে যারা ব্যবসা করে, তাদের কেউ কেউ ডকুমেন্টে তথ্য হেরফের করে অর্থ পাচার করছে। এটা উদ্বেগজনক অবস্থায় ঠেকেছে।

দুদক এখন অর্থপাচারের বিরুদ্ধে তৎপরতা জোরদার করার কথা বলছে এবং পাচারের অর্থ ফেরাতে আইনি প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকতা এবং সদিচ্ছা প্রয়োজন। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা বেশ জটিল। কারণ, সংশ্লিষ্ট দেশের আইন অনুযায়ী প্রক্রিয়া চালাতে অনেক সময় লাগে। সেজন্য এই অর্থ ফেরত আনতে চেষ্টা অব্যাহত রাখা দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App