×

মুক্তচিন্তা

পরিবর্তন সঙ্গে নিয়ে বইমেলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৪০ পিএম

বিশ্বব্যাপী করোনা বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি টিকা, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। ফেব্রুয়ারির সঙ্গে বাঙালির আবেগ, ভালোবাস জড়িয়ে আছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের যে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়েছিল তাতে শহীদ হয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বার, শফিকসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতা। একুশ আমাদের অহংকার। আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে চলে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। কলকাতায় অনুষ্ঠিত বইমেলা এবার স্থগিত করা হয়েছে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে। ১৮ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বইমেলা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ তখন বিদায় হবে কিনা সন্দেহ থাকছে। ১৪ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সাহিত্য সম্মেলনে যুক্ত করা হয়েছিল বই প্রদর্শনীর একুশকে কেন্দ্র করে ১৯৭৫ সালে মুক্তধারা বাংলা একাডেমির প্রধান ফটকে ছোট পরিসরের বইমেলার অস্থায়ী প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের সূচনা করেছিল, তা পরে বৃহৎ পরিসরের বইমেলা আয়োজনের এক বিশাল অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বইমেলায় ধীরে ধীরে প্রকাশকদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকে। ১৯৭৬ ও ১৯৭৭ সালে আয়োজিত বইমেলা পাঠক-লেখকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাংলা একাডেমির প্রকাশনা, মুদ্রণ বিক্রয় বিভাগ ১৯৭৮ সালের ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলার আয়োজন করে। ১৯৭৯ সালে হয় আরেকটি বইমেলা। এসব মেলা প্রকৃত অর্থে প্রাচুর্য ও সৌন্দর্যে ভরা ছিল। ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলার নামকরণ হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। ক্রমে ক্রমে বইমেলার পরিসর বৃদ্ধি পায়। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত বইমেলায় স্থান সংকুলানের অভাব তৈরি হয়। মূল প্রাঙ্গণের বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলাকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। খাবার দোকান, ক্যাসেটের দোকান, রকমারি গৃহস্থালি সামগ্রী বেচাকেনা মেলায় যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল আশির দশকে, পরে এটা বিযুক্ত হয়ে প্রকৃত কেন্দ্রিক মেলায় পরিণত হয়েছে। বইমেলায় রয়েছে আধুনিক প্যাভিলিয়ন, বহু রং ও রেখায় শোভিত বইমেলার স্টল প্রতিদিন দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠছে। বিজ্ঞাপন ও ভাষায় রয়েছে ভিন্নতা ও চমক।

বইয়ের নামে এসেছে পরিবর্তন। প্রচ্ছদ সাইজ রয়েছে আকর্ষণ। সুসজ্জিত বইমেলায় প্রকৃতি নানা সাজে রঞ্জিত। ঝরাপাতা, বিচিত্র ফুল, পাখির ডাক ও নানা বয়সি পাঠকের কলরবে মুখরিত বইমেলা শুধু মিলনমেলা নয়, স্মৃতিভারে গ্রথিত একটি অনন্য কেন্দ্র। ভালোবাসার টানে, নতুন বইয়ের গন্ধে আমরা বইমেলায় আসি, আবার ঘরে ফিরে যাই। সঙ্গে নিয়ে যাই প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য স্মৃতি। বইয়ে পড়া কোনো চরিত্র অলক্ষ্যেই হয়ে যাই। আনন্দ-বেদনায় লীন হয়ে কখনো দুই চোখ ভিজে যায়। দীর্ঘশ্বাস বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। অতীতের পাওয়া না পাওয়া নিয়ে যে দোলাচালে আমরা বন্দি থাকি তার সামান্যটুকুই আমরা ধারণ করতে পারি। বইমেলা ঘিরে আনন্দ ও শঙ্কা দুই-ই ভর করছে। শপিং মল, অফিস-আদালত স্বাভাবিক নিয়মে চলছে বটে, তবু দুশ্চিন্তা পিছু পিছু হাটে। ইতোমধ্যে বিশিষ্ট কিছু সিনিয়র সিটিজেনকে হারিয়েছি কোভিড অতিমারির কারণে। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বিজ্ঞানভিত্তিক ধ্যান-ধারণা এখন বদলে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা জন্মের পর ট্যাব, অ্যান্ড্রয়েড ফোন, ল্যাপটপ ব্যবহার করছে। ফাস্ট ফুডে আসক্ত হয়ে উঠছে। এখন হাতে নিয়ে বইপড়া, পত্রিকা দেখার চল ভাটার দিকে। নিজস্ব ঐতিহ্য অন্বেষা ও আপন আলোয় ফিরতে বই পাঠের বিকল্প নেই। বইমেলায় আসা-যাওয়ার কিছুটা বিনোদন ঘটে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণক্ষণে বইমেলা আয়োজন করার আনন্দ উপভোগ করবে প্রকাশক, পাঠক ও লেখক। নির্দিষ্ট দূরত্ব তৈরি করে স্টল স্থাপন করার বিষয় অগ্রাধিকার দিতে হবে। মেলায় আগত দর্শকদের যাতায়াতে শৃঙ্খলা রক্ষা দুরূহ ও অসম্ভব নয়।

দুর্যোগ-দুর্বিপাকে বাঙালি ঘুরে দাঁড়াতে জানে। কোভিড ১৯-এর কারণে অনেক শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। স্থান নির্বাচন নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। বাংলা একাডেমির মূল ভবনের আশপাশে জায়গা কম। সঙ্গত কারণেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানই হবে মেলা আয়োজনের মূল কেন্দ্র। মুদ্রণ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক মানুষের ভাগ্য। মার্চের ওই সময়টায় কালবৈশাখী আঘাত হানতে পারে, সে প্রস্তুতি আগেভাগে নেয়া প্রয়োজন। বইমেলা আয়োজনে সতর্ক অবস্থান নিশ্চিত করা জরুরি। শুভ হোক বইমেলা।একুশের মেলা, প্রাণের মেলা। এই মেলা ঘিরে প্রতিদিন জন্ম নিক নতুন অভিজ্ঞতা। বইমেলা চিরজীবী হোক। লেখক ও গবেষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App