×

জাতীয়

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পার্টি করত ওরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:১৩ এএম

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পার্টি করত ওরা

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় তার নিখোঁজ বান্ধবী নেহাকে রাজধানীর একটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় হওয়া মামলার চার নাম্বার আসামি সে। মদ্যপানে তিনিও অসুস্থ হয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত ২টার দিকে এবিষয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ বলেন, ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর বান্ধবী নেহাকে রাতে আজিমপুর এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নেহা ও আরাফাত ঘটনার দিন রাতে পার্টির আয়োজন করে। সেখানে বিষাক্ত মদ পানেই ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তারা নিয়মিত রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় পার্টির আয়োজন করে নাচ-গানে মেতে উঠত বলে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে এই মামলার সব আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্ট পেলে তদন্ত কর্মকর্তা মামলার চার্জশিট জমা দেবে।

অনুসন্ধানে ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানী উত্তরার ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে যান মোট পাঁচজন। যাদের মধ্যে ওই তরুণী রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজে মারা যান ও আরাফাত সিটি জেনারেল হাসপাতালে মারা যান। চিকিৎসক আরাফাতের মৃত্যুর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত মদ্যপান উল্লেখ করেছে। মৃত্যুর পরপরই বিষয়টি পুলিশকে না জানিয়ে তার মরদেহ দাফন করে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে এই ঘটনায় রাজধানীর রায়েরবাজার থেকে তার কবর তুলতে আদালতকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

ঘটনার বিষয়ে আরও জানা গেছে, নিহত তরুণী ও রায়হানের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা আগে থেকেই ওইদিন বিকালে দেখা করার পরিকল্পনা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিকেলে তারা হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজার সামনে সবাই দেখা করে। সেখানে আসে তাদের বন্ধু আরাফাত। তিনি ওই দুজনকে গুলশানে একটি রেস্টুরেন্টে দাওয়াত আছে বলে জানান। সেই দাওয়াতে যাওয়ার জন্য তারা প্রথমে আরাফাতের বাসায় যান। সেখান থেকে একযোগে উবার নেন। শেষ মুহূর্তে আরাফাত তাদের জানায়, রেস্টুরেন্টের স্থান একটু বদল হয়েছে। তখন তারা উবার নিয়ে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বু সুট রেস্টুরেন্টে যান। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন ওই ভিকটিম তরুণীর বন্ধু নেহা ও তার আরেক ছেলে বন্ধু। রেস্টুরেন্টে তারা ৫ জন একত্রীত হয়ে মদ্যপান শুরু করেন। মদ সরবরাহ করে নেহার ওই ছেলে বন্ধু। সন্ধার পরপরই তারা একসঙ্গে মদ পন করছিলেন।

পুলিশ জানায়, এর আগে তারা গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে যায়। একপর্যায়ে নেহা অসুস্থ হয়ে পড়ে ও রেস্টুরেন্টের ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করে। তখন নেহা ও তার বন্ধু চলে যায়। রেস্টুরেন্টে আরাফাত, রায়হান ও ওই তরুণী মদ্যপান চলতে থাকে। একপর্যায়ে নিহত তরুণী আবারও বমি করে। এ অবস্থা দেখে রায়হান ও আরাফাত তাকে নিয়ে একসঙ্গে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একটি উবার নেয়। উবারে ওই তরুণী ও রায়হানকে গুলশান-২ এ নামিয়ে দেয় আরাফাত। সেখানে ভিকটিম জানায় সে বাসায় যাবে না, তাকে তার বান্ধবী তাফসিরের বাসায় নিয়ে যেতে বলে। তখন তারা দুইজন মিলে মোহাম্মদপুর হোমস লিমিটেডের ৯ নম্বর বিল্ডিংয়ের ওই বাসায় যায়।

তদন্তে উঠে আসে, তাফসির তার মার সঙ্গে থাকলেও ওইদিন বাসায় একা ছিল। রাতে বাসায় প্রবেশের পরেই ওই তরুণী বমি করে। সে বমি তারা দুজনেই পরিষ্কার করে। এরপর রায়হান ও ভিকটিম এক কক্ষে রেখে অন্য রুমে চলে যায় তাফসির। রাতে রায়হানের সঙ্গে একাধিকবার ওই তরুণীর শারীরিক সম্পর্ক হয়। এরপর ২৯ তারিখ ভোরেই ভিকটিমকে তাফসিরের বাসায় রেখে নিজের বাসায় চলে যায় রায়হান।

জানা গেছে, সকাল থেকেই দুর্বল বোধ করছিলেন ওই তরুণী। দুপুরে তাফসিরের বাসায় এসে আবার খোঁজ খবর নিয়ে যায় রায়হান। শুক্রবার মধ্যরাতে রায়হান তার বন্ধু কোকোকে ফোন দিয়ে ভিক্টিমের শারীরিক অসুস্থতার কথা জানায়। তখন তিনি এসে ভিকটিমকে প্রথমে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইসিইউ সুবিধা না থাকায় ৪০ মিনিট পর তাকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে রাখা হয় ভিক্টিম তরুণীকে। তখন রায়হান ভিক্টিমের বাবাকে ফোন করে এ বিষয়ে জানায়। ভিক্টিমের বাবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। পরদিন ৩০ তারিখ মধ্যরাতে নেহার মৃত্যুর আগেই তার বাবা থানায় এসে একটি মামলা করেন। পরদিন ৩১ তারিখে তার মেয়ের মৃত্যু হয়। যদিও মামলায় ধর্ষণের কথা উল্লেখ করা হলেও ফরেনসিক প্রতিবেদনে ওই ছাত্রীকে জোরপূর্বক সঙ্গমের আলামত ও আঘাতের চিহ্ন মেলেনি বলে জানানো হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App