×

জাতীয়

নতুন জোট গড়ছেন অলি-ইবরাহিম, ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৫০ এএম

নতুন জোট গড়ছেন অলি-ইবরাহিম, ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি
‘সরকারবিরোধী’ নতুন জোট গঠনে জোর তৎপর রয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। এই জোটে জামায়াতসহ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে অস্তিত্ব সংকটে থাকা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল, জাতীয়তাবাদী মনস্ক সাবেক আমলা, সাবেক উচ্চপর্যায়ের সেনা কর্মকর্তারাও রয়েছেন। বিএনপির বেশ কয়েকজন মধ্যম সারির নেতা এতে কৌশলে সম্পৃক্ত থাকলেও দলটির শীর্ষ নেতারা এই তৎপরতাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। নতুন এ জোট গঠনের প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক ‘তৃতীয় শক্তি’ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। কেউ-বা বলছেন, ওয়ান ইলেভেনের পুরনো ষড়যন্ত্র ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা না থাকা এবং শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কারণে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। নতুন জোট গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, জোটের এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বনানীর ইকবাল সেন্টারে বোখারা রেস্টুরেন্টে এক বিশেষ ডিনার পার্টির আয়োজন করেছেন নতুন প্ল্যাটফর্মের উদ্যোক্তারা। সেখানে ক‚টনীতিক ও বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিএনপিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো না হলেও দলটির নেতাদের একটি অংশ সেখানে থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধির মিলনমেলা ঘটবে ওই পার্টিতে। বিএনপির অভিযোগ, জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং নতুন জোট গড়ার খেলায় সরকারের ইন্ধন আছে। ক্ষমতাসীনদের ইশারায়ই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সরিয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তির নতুন নামকরণ করতে চান। বিএনপিরই একটি অংশ গোপনে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করছে। বিএনপিকে বাইরে রেখে আগামী নির্বাচনে তারা বিরোধী শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সূত্র জানায়, বিশেষ এই জোট গঠনের প্রক্রিয়ার ওপর গভীর নজর রয়েছে বিএনপির। এর জোট তৈরির উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিএনপির কারা রয়েছেন, এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে খোঁজ রাখছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখতে উচ্চপর্যায়ের সিনিয়র দুই নেতার ওপর গুপ্তচরের দায়িত্ব দিয়েছেন তারেক রহমান। এমনকি ওই নতুন জোটে অংশ নেয়ার অজুুহাতে তাদের জোট গঠনে সম্পৃক্ত নেতাদের সঙ্গে সখ্য ধরে রেখে সব আমন্ত্রণে অংশ নেয়ারও নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অলি-ইব্রাহিম কী করছেন জানি না। তবে বিএনপিকে নতুন করে উদ্যোগ নেয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। সেটা কী ফরম্যাটে হবে তা সময়ের ব্যাপার। ২০ দল, ঐক্যফ্রন্ট, বাম দলসহ অন্য ছোট-বড় যেসব দল আছে, তাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করব। একই ফর্মুলায় যারা আসবে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করা হবে। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক ও নেপালে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি গোপন বৈঠকের মাধ্যমে বিরোধী এ প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম শুরু হয়। সেখানে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ছাড়াও সুশীল সমাজের কয়েকজন অংশ নেন। তারাই ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে প্রথম কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেন। এরপর ১৬ জানুয়ারি কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম ধানমন্ডির একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে দোয়া মাহফিলের আয়োজনের মাধ্যমে শুরু হয় দ্বিতীয় কর্মসূচি। ধারাবাহিকভাবে এ কর্মসূচি চলতে থাকবে। জানতে চাইলে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, কল্যাণ পার্টি পরিবর্তিত রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। আমরা স্বচ্ছ মেধাবী সাহসী রাজনীতিবিদদের সমাবেশ ঘটাতে চাই। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামীতে কোনো নির্বাচন অসম্ভব। সে নির্বাচন চাইতে গেলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলনও গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সবাই জোটবদ্ধ হওয়া ছাড়া বিকল্প রাস্তা নেই। সূত্র জানায়, বর্তমানে বিএনপির কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে দলটির স্থায়ী কমিটির কিছু নেতা, সাবেক ছাত্রনেতা, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদ, যুগ্ম মহাসচিব, মুক্তিযোদ্ধা দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা। পদে থেকেও তাদের কোনো কাজ নেই। এছাড়া ২০ দলীয় জোটও পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। বিএনপি এককভাবেই সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। এ কারণেই তারা নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করাতে চাচ্ছেন। তবে তারাও নীতিগতভাবে এ সরকারের পতন চান। এখন থেকে তারা নিয়মিতই বৈঠক করবেন। জানা গেছে, ২০ দলীয় জোটের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ায় এ জোটের নেতারা নতুন জোটে যোগ দেয়ার বিষয়ে বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এ নিয়ে বিএনপিতে অস্থিরতা রয়েছে। বেশ কিছু দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই ২০ দলীয় জোট ছেড়েছেন। বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ সরে গেছেন। জাতীয় মুক্তিমঞ্চ করে বিএনপির সঙ্গে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। কর্নেল অলির সঙ্গে সখ্য গড়েছেন জোট শরিক জামায়াত, কল্যাণ পার্টি, জমিয়তে ওলামা, জাগপা, জাতীয় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের কিছু নেতা সম্প্রতি দল থেকে বেরিয়ে ‘এবি পার্টি’ নামে নতুন দল গড়ার ঘোষণা দিয়েছে। জানতে চাইলে এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ বলেন, ২০ দলীয় জোট এখন সক্রিয় নয়। আমাদের জাতীয় মুক্তিমঞ্চের কর্মকাণ্ড চলছে। কর্নেল ইব্রাহিমের দাওয়াত পেয়েছি। দেশের যেই অবস্থা যদি নতুন কোনো জোট তৈরির হওয়ার সম্ভাবনা থাকে সেখানে অবশ্যই যোগ দেব। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। তাই সবাইকে একত্রিত হতে হবে। একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে। সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App