×

জাতীয়

উত্তোলন ও সরবরাহ কমায় রাজধানীতে গ্যাস সংকট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৫৭ এএম

উত্তোলন ও সরবরাহ কমায় রাজধানীতে গ্যাস সংকট

গ্যাস। ফাইল ছবি

উত্তোলন ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় রাজধানীতে গ্যাসের সংকট আরও তীব্র হয়েছে। মাঘের শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে নগরীর অনেক এলাকার বাসাবাড়িতেই চুলা জ্বলছে না। গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোও গাড়িতে গ্যাস সরবরাহে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছে। এদিকে গ্যাস সংকটের ফলে রাজধানীর অনেক এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে না। অন্যদিকে এলএনজি থেকেও গ্যাস সংকট কাটাতে পর্যাপ্ত সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর গ্যাসের সংকট কিছুটা কমেছিল। এখন দৈনিক এলএনজি সরবরাহ ৪০ কোটি ঘনফুটের নিচে নেমে এসেছে। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণেই গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

পেট্রোবাংলার তথ্যানুসারে, ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর জাতীয় গ্রিডে ৫৩ কোটি ১২ লাখ ঘনফুট আমদানি করা এলএনজি গ্যাস সরবরাহ করা হয়। পনেরো দিন পরে ১ ডিসেম্বর তা কমে ৪৯ কোটি ৪৭ লাখ ঘটফুটে এসে দাঁড়ায়। আরো দুই সপ্তাহ পর ১৫ ডিসেম্বর তা কমে আসে ৪৬ কোটি ১০ লাখ ঘনফুটে। এরপর চলতি বছরের গত ৬ জানুয়ারি এলএনজি গ্যাসের সরবরাহ আরো একধাপ কমে ৩৯ কোটি ২৭ লাখ ঘনফুট হয়েছে। শীত মৌসুমে এভাবেই এলএনজির সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাসের সংকট তীব্র হয়েছে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় রাজধানীর অনেক এলাকার বাসাবাড়িতে চুলা জ্বলছে না। পাশাপাশি সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো সংকটে পড়েছে। গাড়িতে সিএনজি গ্যাস নেয়ার জন্য পেট্রোল পাম্পগুলোর সামনে দীর্ঘ লাইন হচ্ছে। গ্যাস না পাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

রাজধানীতে গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস কোম্পানি সূত্র জানায়, রাজধানীতে তিতাস বহু আগে থেকেই পাইপলাইনে গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ করে আসছে। এই সরবরাহ লাইনগুলো ৫০ পিএসআই চাপে গ্যাস সরবরাহ করা হতো। কিন্তু গ্যাসের চাপ পর্যাপ্ত না পাওয়ায় এই সরবরাহ ডিজাইন এখন আর কাজ করছে না। গত কয়েক বছর ধরে ১০ থেকে ১২ পিএসআই চাপে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাসের চাপ এক ধাক্কায় শূন্য থেকে ২ পিএসআইতে নেমে এসেছে। এ কারণেই এখন রাজধানীতে গ্যাসের সংকট আরো তীব্র হয়েছে। অনেক এলাকায় চুলা জ্বালানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে সরবরাহ বাড়লে এবং শীত কমলে সংকট কেটে যাবে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ জানান, কিছুদিন ধরেই রাজধানীতে গ্যাস সংকট চলছে। গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, আমরা বারবার দেশীয় ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের ওপর জোর দিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করেনি। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে জোর দিলে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। গ্রাহক প্রতিমাসে নিদিষ্ট হারে গ্যাসের বিল পরিশোধ করছে, অথচ তারা গ্যাস পাচ্ছে না। গ্যাস উত্তোলনে জ্বালানি বিভাগ এখনো দুর্বল অবস্থানে রয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালের শেষের দিকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি কমে যায়। আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। এখন প্রতি ইউনিট (এক হাজার মিলিয়ন বা এক কোটি ঘনফুট) এলএনজির দাম ১২ মার্কিন ডলার। গত বছরের অক্টোবর মাসে সমপরিমাণ এলএনজির দাম ছিল ৬ ডলারের নিচে। এ কারণে যারা বাংলাদেশে এলএনজি আমদানি করত তারা প্রতিটি চালানে ১৩ লাখ ৮ হাজার ঘনমিটার এলএনজির দুটি চালান বাতিল করে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকেও এলএনজি কেনা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন এলএনজি সরবরাহ ৪০ কোটি ঘনফুটের নিচে নেমে এসেছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫টি সরকারি ও বেসরকারি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এগুলো চালু থাকলে প্রায় ৪ হাজার মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। গরমকাল হলে অবস্থা আরো খারাপ হতো। শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কম থাকে। তাই তেলচালিত ইউনিটগুলো বেশি সময় চালিয়ে রেখে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের উত্তোলন কম। তাছাড়া এলএনজির সরবরাহ জাতীয় গ্রিডে কম হওয়ার কারণেই গ্যাস সরবরাহ কমেছে। বিদেশি কোম্পানি শেভরন ও টাল্লো পরিচালনায় চারটি গ্যাসক্ষেত্রে ৪৩টি কূপ চালু রয়েছে। এগুলোর মোট উত্তোলন ক্ষমতা দৈনিক ১৬১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট। ৩টি দেশীয় কোম্পানি বিজিএফসিএল, এসজিএফএল ও বাপেক্সের পরিচালনাধীন ক্ষেত্রগুলোতে ৭০টি কূপ সচল রয়েছে। এগুলোর মোট উত্তোলন ক্ষমতা দৈনিক ১১৪ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App