×

মুক্তচিন্তা

বায়ুদূষণের ছোবলে মহানগরী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৩৭ পিএম

নগর জীবন বায়ুদূষণের ফলে বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। বায়ুদূষণ নগর জীবনকে করেছে বিপন্ন আর মানুষকে করেছে রোগাক্রান্ত। বায়ুদূষণ নীরব ঘাতক। লাগামহীন অপরিকল্পিতভাবে শিল্পায়ন, কলকারখানা, বৃক্ষনিধন, ইটভাটা ইত্যাদি গড়ে উঠেছে সভ্যতার প্রয়োজনে। প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংসস্ত‚পের ওপর ভর করে আছে নগরায়ণের প্রক্রিয়া। এয়ার ভিজুয়ালের তথ্য অনুযায়ী, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) ঢাকার বাতাসকে মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। একিউআই সূচকে বাতাসের গ্রহণযোগ্য মান হচ্ছে ৫১-১০০ পর্যন্ত। যেটি অগ্রহণযোগ্য তথা অস্বাস্থ্যকর। সেখানে ঢাকার বাতাসের মান ১৯৬। এ থেকে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, প্রতিদিনের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত এবং সেই সঙ্গে কোন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে সেই সম্পর্কে সংস্থাটি তথ্য দিয়ে থাকে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গত ১০ বছরে ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। ঢাকার বাতাসে সিসার ঘনত্ব ১৯৯৭ সালে নভেম্বর-ডিসেম্বর ছিল ৪৬৩ ন্যানোগ্রাম। প্রতি বছর ঢাকা মহানগরীর বায়ুতে প্রায় ৫০ টন সিসা নির্গত হয়। বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, শহরাঞ্চলে কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষ সিসা দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা শহরের পরিকল্পনা করা হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ধরে। কিন্তু সেখানে ঢাকা শহরে বর্তমানে বসবাসকারী জনসংখ্যা অনেক বেশি। এবং এর সঙ্গে প্রতিদিন নানা কারণে ঢাকামুখী হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত হারে। অতিরিক্ত মানুষের চাপ নাগরিক জীবন বিষিয়ে উঠছে।

ছোট-বড় শিল্পকারখানা : নানাবিধ ওষুধের কারখানা, সিলভার তৈরির কারখানা, বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য তৈরির কারখানা, সার ও চামড়া শিল্প, ইস্পাত কারখানা ইত্যাদি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকা শহরে ছোট-বড় প্রায় ৩০০-৪০০টি পলিথিন কারখানা রয়েছে। পলিথিন বর্জ্য পচনশীল নয়, এ ক্ষেত্রে পলিথিন পোড়ালে এক ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক গ্যাস নির্গত হয়, যেটি মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমান আধুনিকীকরণের স্রোতে গা ভাসাতে গিয়ে আমরা আমাদের নগর জীবনকে ঠেলে দিচ্ছি ভয়াবহ পরিণতির দিকে। যার মাশুল দেবে আমাদের তথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে। গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখা, এয়ার কন্ডিশন, বাস-ট্রাক, বেবিট্যাক্সি, প্রাইভেটকার, পেট্রলচালিত বা ডিজেলচালিত যানবাহন পরিবেশে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, সালফাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড ইত্যাদি রাসায়নিক গ্যাস, যেটি বাতাসকে দূষিত করছে। বিশ্বে প্রতি বছর বায়ুদূষণের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করছে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ।

মহানগরগুলোতে বর্তমান সময়ে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ বলা যায়। উন্নয়নভিত্তিক দূষণ ঢাকাসহ সারা বিভাগীয় শহরগুলোর রাস্তা তৈরি এবং সংস্কার, মেট্রোরেল তৈরি, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে ধূলিদূষণের কবলে পড়ছে নগরবাসী। বাতাশে মিশে যাচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর গ্যাস ও ধুলা। যার দরুন বাড়ছে ফুসফুসে ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, হাঁপানি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, সাইনোসাইটিস, চর্মরোগ, চোখের জ্বালাপোড়া, হাঁচি-কাশি-সর্দি, কিডনির সমস্যা, শুক্রাণুর ক্ষতি ইত্যাদি। বায়ুদূষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু- আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই। এক্ষেত্রে শিশু এবং বৃদ্ধ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিসের মতো রোগে। ধারণা করা হয়, অটিজম প্রবণতার নেপথ্য কারণ হচ্ছে বায়ুদূষণ। ওপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গাইড লাইন, কর্মপরিকল্পনা, নিয়ন্ত্রণের কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির প্রয়োজন। বায়ুদূষণের রোধকগুলো রূপরেখা খুঁজে বের করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বনভ‚মি বাড়াতে হবে। পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যের হুমকি বায়ুদূষণ রোধে সরকার, জনগণ, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ, পরিবেশবান্ধব নির্মাণ ইট তৈরি, নগরীর আশপাশের নদীগুলো সংস্কার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মহানগরীর বাইরে স্থানান্তর, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন তুলে দেয়াসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। শহরগুলোর পাশে নদী-খাল-বিলগুলোকে দখলমুক্ত রেখে পরিবেশ রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী দিনের প্রজন্মের জন্য একটি দূষণমুক্ত-নির্মল পরিবেশ আমাদের সবার কাম্য। তার জন্য প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং ব্যাপক সচেতনতা ও পরিবেশের প্রতি অসীম দরদই পারে বায়ুদূষণের মরণ ছোবল থেকে বাঁচাতে।

শিক্ষক, সরকারি ইস্পাহানী কলেজ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App