×

মুক্তচিন্তা

কোন মির্জার কথা কোন মির্জা বলেন?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৪৪ পিএম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে সরকার ও ইসি সন্তোষ প্রকাশ করলেও মাহবুব তালুকদার নাখোশ। তিনিও ইসির একজন। আর একজন নাখোশ মানুষ কাদের। ইনি নোয়াখালীর বসুরহাটের মেয়র। তিনি মনে করেন তার এলাকায় সুষ্ঠু ভোট হয়েছে এবং তিনি জয়ী হয়েছেন। কতটা কী হয়েছে সেটা দিবালোকের মতো প্রকাশ্য। এই কাদের একদিকে নিজেকে আওয়ামী লীগার বলেন, মুজিব কোট গায়ে পরেন; অন্যদিকে তার বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরকে সমালোচনা করতে গিয়ে সরকারি দলের বিরুদ্ধে বলেন। ছাত্রজীবনে আমি ঢাকায় ভর্তি হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে চট্টগ্রামে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওবায়দুল কাদেরের ধারণা ছিল, আমি ঢাকায় পড়াশোনা করে রাজনীতি করলে হয়তো তার চেয়ে বড় নেতা হয়ে যাব। তাই তিনি চাননি আমি ঢাকায় পড়াশোনা করি। ‘আমি যখন বলি ওবায়দুল কাদের সাহেব ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলছে, সে চাকরি কোথায়? আমি যখন প্রতিবাদ করি তখন বলে আমি নাকি পাগল, আমি উন্মাদ।’ কথাগুলো কে বলতে পারেন বলে মনে হয়? না কোনো বিএনপি-জামায়াত বা বিরোধী দলের নেতার মুখ থেকে এগুলো বের হয়নি। যেভাবেই দেখুন বা শুনুন না কেন, এগুলো সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকের ভাইয়ের মুখ নিঃসৃত বাণী। নিন্দুকরা বলছেন এও নাকি পাতানো। মির্জা সাহেব ভোট বাড়ানোর জন্য এগুলো বলেছেন। হলে হতেও পারে। কারণ যেভাবেই জিতুন না কেন, জিতে আসার পর তিনি বলেছেন এ জয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জয়। এ জয় ওবায়দুল কাদেরের জয়। এই মতদ্বৈধতা বা এই যে কথার মারপ্যাঁচ এখানেই আমাদের রাজনীতির বারোটা বেজে যায়। বেজে গেছে। মির্জা সাহেব নোয়াখালীতে মেয়র পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কথা বলেছেন জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি নিয়ে। ভাইয়ের বিরুদ্ধে বলেছেন তো বলেছেনই, সঙ্গে এটা বলতেও কসুর করেননি আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে তার বক্তব্য : ‘বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন, যারা বলেন অমুক নেতা তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা দরজা খুঁজে পাবে না পালানোর জন্য। এটাই হলো সত্য কথা। সত্য কথা বলতে হবে। আমি সাহস করে সত্য কথা বলছি।’ হঠাৎ সত্যভাষী আর বেপরোয়া হয়ে ওঠা কাদের পরিবারের আবদুল কাদের মির্জাকে বলতে শোনা যায়, ‘নোয়াখালীর মানুষজন বলে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এটা সত্য। কিন্তু আপনাদের জনপ্রিয়তা বাড়েনি। আপনারা প্রতিদিন ভোট কমান। টাকা দিয়ে বড় জনসভা করা, মিছিল করা কোনো ব্যাপার নয়। টাকা দিলে, গাড়ি দিলে আমিও অনেক লোক জড়ো করতে পারব। না হয় রাজনীতি থেকে বিদায় নেব।’ এখন সাধারণ মানুষ জানতে চাইবে তারা কোন কথাগুলো নেবে আর কোনগুলো নেবে না? দায়িত্বশীল পদের সম্পাদককে যিনি এমন ভাষায় আক্রমণ করতে পারেন তিনি যদি স্বাভাবিক বা প্রকৃতিস্থ না হন তা হলে কি বসুরহাটের মানুষের ভাগ্যে জুটল অস্বাভাবিক আচরণের কোনো মেয়র? আর যদি তা সত্য হয় তাহলে জনগণ কি এতই বোকা যে, তারা একজন এমন কাউকে বেছে নিলেন যিনি অগোছাল ও অস্বাভাবিক? আমাদের রাজনীতিতে যদি জবাবদিহিতা বলে কিছু থাকত, যদি সংসদ ও গণতন্ত্রের সঠিক ব্যবহার এবং শক্তিশালী বিরোধী দল এই ঘটনা রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন তুলত- আমরা সাধারণ মানুষ হয়েও যেটুকু জানি তাতে এটা স্পষ্ট ভোটের দিনও তার ব্যবহার ছিল দুর্বিনীত। আচরণ অসংযত। একজন মানুষ এমন করেই যাবে আর বাকিরা দেখতে থাকবে, এটাই কি রাজনীতি? একক দল ও একমুখী রাজনীতিতে আলোচনা বা মুখরোচক খবর হিসেবে মির্জা কাদের কেন্দ্রবিন্দুতে এলেও এর ভেতর দলের জন্য আছে অশনিসংকেত। স্পষ্টই প্রতীয়মান কোথাও শৃঙ্খলা বা নিয়ম মানা হচ্ছে না। আছে অসঙ্গতি। কথা বলতে দিলে, হাত খুলে লিখতে দিলে এগুলো কবেই উবে যেতে বাধ্য হতো। যত ধামাচাপা তত এসব অনিয়ম বিশৃঙ্খলা আর কূটতর্ক বাড়বে। শেখ হাসিনা না থাকলে কী হতো তা যেমন অনুমান করতে কষ্ট হয় না, তেমনি তিনি চলে গেলে কী হতে পারে, এও তার এক নির্জলা উদাহরণ। রাজনীতি দেশে দেশে কঠিন সংকটের মুখে। ভারত বা এমন কয়েকটি দেশ বাদ দিলে সব দেশেই একমুখী সবকিছু। এ জায়গায় বাংলাদেশের সৌভাগ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন। উন্নয়ন প্রবহমান। না হলে যেসব বিপদ শকুনের মতো উড়ছে তারাই খুবলে খেতো জাতির পরাণ। মির্জা কাদের আমাদের আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে। উন্নয়নের পাশাপাশি যদি রাজনীতিকে শুদ্ধ করে ভালো মানুষের হাতে দেয়া না যায়, বাংলাদেশের সামনে এমন মির্জা কাদের ছাড়া বাদবাকি কোনো নেতা থাকবে না। আমরা এটা মানি আওয়ামী লীগ এ দেশের বৃহৎ প্রাচীনতম দল। তাদের অতীত ঐতিহ্য, বর্তমানের দাপট সব সত্য। কিন্তু এমন ঘরের দুশমন কি আসলেই তাদের নিরাপদ রাখবে? এ কথা ভাবার কারণ নেই যে, মির্জা কাদের প্রলাপ বলেছিলেন। তার কথার ভিত্তি আছে। দেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে মির্জা ফখরুলদের কথা সত্য হবে না, এমন গ্যারান্টি কোন আওয়ামী লীগার দিতে পারবেন? বরং এটা মনে হচ্ছে বা এটাই সবাই জানেন আওয়ামী লীগ যেমনটা আশা করছে কোনোভাবেই তা সম্ভব হবে না। ফলাফল সম্পূর্ণ বিপরীত হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তখন এই মির্জা কাদের বা এমন কেউ কোন দলে যাবেন বা কীভাবে পল্টি খাবেন, সেটা বড় কথা নয়। বড় বিষয়, দেশেও মানুষের সর্বনাশ। আমরা পরিবর্তনে ভীত হওয়ার কথা বলছি না, বলছি কার হাতে গিয়ে পড়বে ভবিষ্যৎ, সেটা যেন ভুলে না যাই। আর সেটা ডেকে আনছে স্বয়ং সরকারি দলের নেতারা। ছেলেবেলা থেকে শিখেছি স্বীয় জিহ্বাকে শাসনে রাখবে। এই নীতিবাক্য যারা মেনে চলেননি তারা সবাই আজ হয় ইতিহাস, নয়তো আঁস্তাকুড়ে। অবাক হয়েছি এটা দেখে, কোন মির্জার কথা শুনছি কোন মির্জার মুখে? মির্জা ফখরুলদের কথা সত্য প্রমাণ করার জন্য মাঠে নামা এই মির্জা কাদের কি দলের ধরাছোঁয়ার বাইরে? আর তার কথা যদি সত্য হয়, তাহলে বাকিরা মুখ দেখাচ্ছেন বা দেখাবেন কীভাবে? সত্যি সেলুকাস বড় বিচিত্র এই দেশ আরও বিচিত্র তার রাজনীতি। দিনে ভোট রাতে রেজাল্ট, ভোটকেন্দ্র যাওয়ার আগে ভোট দিয়ে দেয়া, বিনা ভোটে জয়ী হয়ে যাওয়া- এসব অপবাদ দূর না হলে এমন বাকপ্রতিভা ঘরশত্রæ বিভীষণ থাকবে। যেমন মোশতাকও ছিল। রাজনীতি তুমি কি ভাব মানুষ কিছু বোঝে না?

অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক। [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App