×

জাতীয়

উন্নয়ন সচল রাখতেই নৌকায় ভোটের ঢল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৩৩ এএম

উন্নয়ন সচল রাখতেই নৌকায় ভোটের ঢল

ভোটের ফলাফল

ভোটের প্রতিযোগিতায় প্রথমবার এসেই বাজিমাত করলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। নিজ দল আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা ধরনের গ্রুপিংয়ের পরও তিন লাখের বেশি ভোটের ব্যবধানে তিনি বিএনপির প্রার্থী ডা. শাহাদাত হেসেনকে কীভাবে কুপোকাত করলেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে নগরীতে। দুটি কেন্দ্রের ফলাফল ছাড়াই নৌকা প্রতীক নিয়ে রেজাউল করিম চৌধুরী পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৮৪ ভোট। অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকে মাত্র ৫২ হাজার ৪২৯ ভোট নিয়েই নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।

অথচ নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সংশয়ে ছিলেন নিজেদের অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে। তবে গত বৃহস্পতিবার নগরীর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নাগরিকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে আরো

ভালো করার আশা থেকেই এ বিপুল সমর্থন। পাশাপাশি রেজাউল করিম বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সজ্জন রাজনীতিবিদ ও ব্যক্তি হিসেবেও বিনয়ী। এ বিষয়টিও নির্বাচনে কাজ করেছে। নগর আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা বিভক্তি থাকলেও রেজাউল করিম চৌধুরী খোদ দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের প্রার্থী হওয়ায় তাকে জিতিয়ে আনতে কোনো পক্ষই গড়িমসি করেনি।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম ভোরের কাগজকে বলেন, উন্নয়নের পক্ষের জোয়ার রোধ করার সাধ্য কারো নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রতি আলাদা গুরুত্ব দিয়েছেন। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন, মীরসরাই ও আনোয়ারায় বিশেষ ইকোনোমিক জোন, চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, চট্টগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে আউটার রিং রোড নির্মাণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ হচ্ছে। বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। এসবই চট্টগ্রামের উন্নয়নে হচ্ছে, যা পুরো দেশের উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, এতসব উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিমের পক্ষে ভোটের জোয়ার নামবে, এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া মানুষ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চায়; নৈরাজ্য চায় না। এসব কারণে স্বাভাবিকভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিমকে নগরপিতা হিসেবে চট্টগ্রামবাসী বেছে নিয়েছেন।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম সদস্য, নগর পরিকল্পনাবিদ ও চট্টগ্রামে নিযুক্ত রাশিয়ার অনারারি কনসাল স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, চট্টগ্রামের নাগরিক ও ভোটাররা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে যে ভুল করেনি, তার প্রমাণ হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিমের প্রতি বিপুল সমর্থন। চট্টগ্রামের ভোটাররা বুঝেছেন, বর্তমানে কেন্দ্রে যে সরকার রয়েছে, তাদের সমর্থিত প্রার্থীকে জয়ী করলেই চট্টগ্রামের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হবে। এজন্যই ভোটারদের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী।

ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও গণজাগরণমঞ্চের সংগঠক শরীফ চৌহান বলেন, মানুষ উন্নয়ন চায়, স্থিতিশীলতা ও শান্তি চায়। বোমাবাজি-আগুন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা সাধারণ জনগণ পছন্দ করে না। রেজাউল করিম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য তার ত্যাগ রয়েছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে, ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তিনি সজ্জন ও নিজ দলের প্রতি আনুগত্যশীল। সর্বোপরি ধীরে ধীরে যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বয়সের কারণে, সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শুধু নয়, সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিমকে চট্টগ্রামবাসী অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন ভোটের মাধ্যমে।

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রেজাউল করিম চৌধুরী। ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সদস্য হন। ১৯৬৯-৭০ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৭০-৭১ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ১ নম্বর সেক্টরের বিএলএফের মাধ্যমে গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন। চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ ও কোতোয়ালি থানা এলাকায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। ১৯৭৩-৭৫ সালে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন।

চট্টগ্রামবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে অধ্যয়নকালে সামরিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। ১৯৮০ সালে মহানগর যুবলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৭-২০০৬ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ২০০৬-১৪ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। বর্তমানে তিনি নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

১৯৫৩ সালে চান্দগাঁও থানার পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী জমিদার বংশ বহদ্দার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। তার পিতা মরহুম হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। দাদা ছালেহ আহমদ ছিলেন খ্যাতিমান আইনজীবী ও ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত কমোরেড ব্যাংকের (বর্তমানে বিলুপ্ত) প্রতিষ্ঠাতা। বড় ভাই অধ্যাপক সুলতানুল আলম চৌধুরী ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। দুই মেয়ে ও এক ছেলের জনক রেজাউল করিম চৌধুরীর বড় মেয়ে তানজিনা শারমিন নিপুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App